ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ে ৩১ বছরে পাথরঘাটার ১৮৮ জেলে নিখোঁজ

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ে ৩১ বছরে পাথরঘাটার ১৮৮ জেলে নিখোঁজ

বরগুনার পাথরঘাটার অধিকাংশ মানুষ মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত। গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বেঁচে থাকার তাগিদে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিনিয়ত গভীর সাগরে ঝড়ের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। মাছ শিকারে গিয়ে এই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে ১৯৯৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই ৩১ বছরে পাথরঘাটার ১৮৮ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজ জেলেদের ফিরে পেতে এখনও জেলেপল্লিতে বিরাজ করছে স্বজনদের আহাজারি। ১৯৯৩ সালের বন্যা, ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৮ সালে নার্গিস, ২০০৯ সালের আইলা, ২০১৩ সালে মহাসেন, ২০১৫ সালের কোমেন, ২০১৬ সালের রোয়ানু, ২০১৭ সালের রোমা, ২০২৩ সালের মিধিলি, ২০২৪ সালে রোমেলসহ এই সব বন্যায় জেলে পরিবার হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বেশি সংখ্যক জেলে ২০০৭ সালের সিডরে নিখোঁজ হয়েছে।

১৯৯৩ সালে ৫ জন, ১৯৯৪ সালে ২ জন, ২০০১ সালে ৫ জন, ২০০৬ সালে ১৪ জন, ২০০৭ সালে ৯১ জন, ২০১৪ সালে ৭ জন, ২০১৮ সালে ১৩ জন, ২০২৩ সালে ১৫ জন জেলেসহ এখনও পর্যন্ত মোট নিখোঁজ রয়েছে ১৮৮ জেলে। জেলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বজন হারিয়ে বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। নিখোঁজদের কোনো মৃত্যু সনদ না থাকার কারণে পরিবারের জমি জমা বিক্রিসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়ছে পরিবারগুলো। নিখোঁজ জেলেদের স্ত্রীরা পাচ্ছে না সরকারি সহায়তার বিধবা ভাতা।

১৯৯৩ সালে নিখোঁজ কালমেঘার জেলে হারুন সরদারের মা জবেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে একটি ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়। ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি সমুদ্রে ডুবে যায় আমার ছেলে বেঁচে আছে না মারা গেছে তা আজও জানি না। আমার ছেলে নিখোঁজের পর তার স্ত্রী দুই সন্তানকে রেখে দুই মাস পর বাবার বাড়ি চলে যায়। অন্যের বাড়ি কাজ করে আমি এই দুই সন্তানকে খাবারের ব্যবস্থা করি। এখন তারা কর্মের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রয়েছে। ৩০ বছর নিখোঁজ থাকার পরেও পাইনি সরকারি কোনো অনুদান।

২০১৪ সালে স্বামীসহ দুই সন্তানকে হারিয়েছে চরদুয়ানীর রানী বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী ইসমাইল ফরাজীকে হারিয়েছি সঙ্গে দুই ছেলে সাইকুল ও শহিদুলকে হারিয়েছি এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। জানিনা তারা কোথায় আছে বেঁচে আছে না মারা গেছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুই পুত্রবধূ চলে যায় বাবার বাড়ি, বিয়ে হয়েছে অন্যত্র। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে মেয়ে রহিমাকে এসএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। এ যাবৎকাল সরকারি সহায়তা ২০০০ টাকা আর ৫ কেজি চাল পেয়েছি।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত। নিখোঁজ জেলেদের তথ্য সংগ্রহ করেছি। যে জেলে নিখোঁজের ছয় মাস শেষ হয়ে গেছে ওই সব জেলে পরিবারকে আমরা ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আর কিছু একটা করার চেষ্টা করব তাদের জন্য।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, নিখোঁজ জেলেদের নামসহ উপজেলা পরিষদের মধ্যে একটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। যাতে করে দেখলেই বোঝা যায় যেন এই উপজেলার কতজন জেলে নিখোঁজ। নিখোঁজ জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করে রেশন ও আর্থিক সহায়তাসহ তাদের জমিজমা বিক্রির জন্য একটি সনদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাবর। আশা করি সেটা বাস্তবায়ন হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত