ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অফ সিজনে তরমুজ চাষে সাফল্য

বদলাচ্ছে নবীনগরের কৃষিচিত্র
অফ সিজনে তরমুজ চাষে সাফল্য

গ্রীষ্মের তাপদাহে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে তরমুজের জুড়ি নেই। তবে এবার ভোক্তাদের জন্য দারুণ সুখবর নিয়ে এসেছে অসময়ের তরমুজ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় অফ-সিজনে তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন অসংখ্য কৃষক, যা স্থানীয় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। নবীনগরের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হওয়া তরমুজে দেখা যাচ্ছে বৈচিত্র্য। বাহ্যিকভাবে হলুদ, সবুজ ও ডোরাকাটা সবুজ রঙের পাশাপাশি ভেতরের রঙেও রয়েছে ভিন্নতা- কোথাও লাল, কোথাও হলুদ শাঁসের তরমুজ। বাজারে এসব তরমুজ ভোক্তাদের দৃষ্টি কাড়ছে।

স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা রাজিব জানান, কম খরচে বেশি ফলন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। উচ্চ ফলনশীল জাতের তরমুজ চাষ করে অল্প সময়ে ও কম ব্যয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ লাভ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

উপজেলার নাটঘর, শিবপুর, সাতমোড়া, নবীনগর পূর্ব ও বীরগাঁও ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করে বেশ কয়েকজন কৃষক সাড়া ফেলেছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক জাত নির্বাচন, জমি প্রস্তুত ও পরিচর্যার মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জিত হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।

পরিত্যক্ত পুকুরপাড় ও পতিত জমিতে মাচা কিংবা মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় এই ফসলের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। বীরগাঁও ইউনিয়নের কৃষক জাকির হোসেন জানান, মালচিং পদ্ধতিতে ২০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ৫০ হাজার টাকার বেশি মূল্যের তরমুজ উৎপাদন করেছেন। একই জমিতে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও তিন থেকে চারবার তরমুজ আবাদ করা সম্ভব, যা উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়াতে সহায়ক হবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু নোমান বলেন, অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষকদের সাফল্য দেখে অন্যরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে নবীনগরে এই ফসল ঘিরে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কৃষক আগামীতে বড় পরিসরে তরমুজ চাষের স্বপ্ন দেখছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, বর্তমানে তরমুজ সারা বছরই চাষযোগ্য। গ্রীষ্ম মৌসুমে সারাদেশে তরমুজ উৎপাদন হলেও বছরের অন্য সময়ে অসময়ের তরমুজে ভোক্তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। ফলে লাভও তুলনামূলক বেশি হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তিনি জানান, অসময়ের তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময় ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। মাত্র দুই মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায় এবং দেশে এরইমধ্যে উন্নত জাতের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় মালচিং পেপার, সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দিচ্ছে। ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট এবং কুমিল্লা অঞ্চলে টেকসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ গড়ে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একেকটি তরমুজের ওজন গড়ে ২ থেকে ৩ কেজি। চলতি মৌসুমে নবীনগর উপজেলা জুড়ে প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে আগাম তরমুজের আবাদ হয়েছে। অক্টোবরের শেষ দিক থেকেই স্থানীয় বাজারে কৃষকদের উৎপাদিত তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত