হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) চাকরি জীবনে ও পরবর্তীতে নিরলসভাবে সাহিত্যচর্চা করেছেন। তিনি তাছাউফ, কোরআন, হাদিস, ইসলামী বিধান, জীবনী, ইতিহাস, দর্শন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষানীতি, ভাষা ও সাহিত্য, ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে ১০৮টি পুস্তক-পুস্তিকা ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার লেখা গ্রন্থাবলীর মধ্যে আমার জীবন ধারা, ছুফি, তরিকত শিক্ষা, আমার শিক্ষা ও দীক্ষা, হযরত মোহাম্মদ (দ.), আল-ইসলাম, কোরআনের সার, সৃষ্টি তত্ত্ব, বঙ্গ ভাষা ও মুসলিম সাহিত্য, বিভিন্ন ধর্মের উপদেশাবলী প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাতীয় জীবনের পূনর্জাগরণের পথ প্রশস্ত করাই ছিল হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর সাহিত্যের মূল লক্ষ্য। ঐতিহ্য ও মুক্ত ধর্মীয় চেতনা ছিল তার পূর্ণজাগরণের প্রধান উদ্দীপক। তার লেখনী ইসলাম সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। একজন পূর্ণাঙ্গ মুসলমানের জন্য প্রয়োজনীয় সব বিষয় তার লেখনীতে অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার স্বকীয়তা অনস্বীকার্য। তিনি সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছেন ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যকে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তিনি দিয়েছেন নতুন নতুন তথ্য ও তত্ত্বের সন্ধান। তার রচনায় স্রষ্টা, সৃষ্টি, সৃষ্টির উদ্দেশ্য ইত্যদি বিষয় একটি স্পষ্ট চেতনার পরিচয় মেলে। তার লেখনীতে প্রজ্ঞা, স্বতঃস্ফূর্ততা, বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা, মননশীল ও গোড়ামীমুক্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয়। তিনি কখনো কখনো উদারভাবে বিভিন্ন ধর্মের আলোচনায় ব্যাপৃত হয়েছেন। তিনি তার ‘বঙ্গভাষা ও মুসলিম’ সাহিত্য গ্রন্থে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, ‘সমাজসেবাই সাহিত্যের মূখ্য উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্চনীয়। দুঃখের বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে ব্যভিচার দৃষ্ট হয়। যদি মুসলিম বলিয়া পরিচয় দিতে হয়, যদি অন্য জাতির সমক্ষতা করিতে হয়, তবে মাতৃভাষাকে জাতীয়ভাবে ভাবাপন্ন করিতে হইবে। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা করিতে হইলে বাংলা ভাষার উন্নতি একান্ত আব্যশ্যক।’ যে জাতির সাহিত্য নাই, সে জাতির আত্মসম্মান নাই। যে জাতির আত্মসম্মান নাই সে জাতির উন্নতি সুদূর পরাহত।
মুসলিম শিক্ষা ও সাহিত্য বিস্তারে হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রা.)-এর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ‘মখদুমী লাইব্রেরি ও আহ্ছানউল্লা বুক হাউজ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা। মখদুমী লাইব্রেরির উৎসাহ ও উদ্দীপনায় অনেক মুসলমান লেখক সৃজনশীল লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। বহু সাহিত্যিক, লেখক, কবি, এই লাইব্রেরির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। তৎকালীন আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘বিষাদ সিন্ধু’ ‘আনোয়ারা’ এই লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত। এই লাইব্রেরি থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির বহু গ্রন্থও এখান থেকে প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয়, অনেক নতুন লেখকদের লেখা গ্রন্থও এখান থেকে প্রকাশিত হয়। মখদুমী লাইব্রেরির কার্যক্রম তৎকালীন মুসলিম সমাজে সাহিত্য সৃষ্টি ও সাহিত্যের প্রসারের ক্ষেত্রে একটি দ্রুত ও মৌলিক পরিবর্তন আনতে সামর্থ্য হয়েছিল।
ইতিহাস চেতনা ও জীবন দর্শন : হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রা.)-এর কর্মময় জীবন নানা দিগন্ত ও বহুমাত্রিক চেতনায় বিস্তৃত। এই নানা দিগন্তের একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র ইতিহাস রচনা। তিনি দর্শনের ছাত্র হলেও ইতিহাসে তার ছিল গভীর পণ্ডিত্য এবং ইতিহাস সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- ইতিহাস জাতীয় জীবনের প্রধানতম উৎস এবং ইতিহাস আলোচনা জাতীয় উন্নতীর সুপ্রশস্ত সোপান। ‘ইতিহাস অতীতের আবরণ উন্মোচন করিয়া তাহাদের পূর্ব পুরুষগণের জীবন-যুদ্ধের ধারার সন্ধান বলিয়া দেয় এবং তাহাদের গুনগরিমায় এবং বীরত্ব ও মহত্ত্বের আদর্শে অনুপ্রাণিত করিয়া আমাদিগকে সেই সংগ্রামে জয়লাভ করিবার শক্তি প্রদান করে।’ তার রচিত ইতিহাস বিষয়ক ১৪টি এবং জীবনীবিষয়ক ২০টি গ্রন্থের অধিকাংশেরই মূল উপাদান ইতিহাস কেন্দ্রীক। তার প্রায় সমগ্র সৃষ্টিকর্মের মধ্য আছে ইতিহাসের সূর্যরশ্মি, সময়ানুক্রমে এবং ইতিহাসের নিরবধি চৈতন্য। সভ্যতার পরিচয় দান তার ইতিহাস ভাবনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। তিনি মনে করেন সাহিত্যের সাথে গভীর সম্পর্ক আছে সভ্যতা ও সাংস্কৃতির, সাহিত্য ও ইতিহাসের এই মিলন কামনা। হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রা.)-এর মৌলিক ও ব্যাপ্তিক অনুভূতি। হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রা.) জাতীয় জাগরণের উপকরণ হিসেবে ইতিহাসকে বিবেচনা করতেন। মুসলমানদের হৃতসর্বস্ব, চশ্চাৎপদতা অনগ্রসরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য অনুপ্রেরণা জাগাতে তার অতীত গৌরবকে তুলে ধরার প্রায়াস চালিয়েছেন। শুধু বাঙালি মুসলমানরা নয়, সমস্ত পৃথিবীর কাছে তিনি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন যে, মুসলমানরা শুধু অশিক্ষিত অনগ্রসর নয়, তাদের আছে গৌরবোজ্জ্বল উতিহাস, স্বাশত শ্রেষ্ঠতম আদর্শ। যে ইতিহাসের ও আদর্শের অনুপ্রেরণায় পৃথিবীব্যাপী মুসলমানদের পূর্ণজাগরণ অবসম্ভবী। দেশ ও কাল সম্পর্কে তার ছিল বিচিত্র ও অসাধারণ কৌতুহল।জীবনের একদম শেষ প্রান্তে পৌঁছেও ইতিহাসের সর্বাধুনিক প্রকাশনার প্রতি তার বিপুল আগ্রহ ছিল। এই বিপুল ইতিহাস সাধনা কোনো স্থান বা সংস্কারে সীমাবদ্ধ ছিল না। তার মধ্য ছিল আন্তর্জাতিক আবরহ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি। কোনো জাতি, কোনো ধর্ম, কোনো জাতির সভ্যতা এবং ইতিহাসকে খাটো করে দেখার কোনো প্রবণতা তার মধ্য লক্ষ্য করা যায় না। নির্মোহ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণে তিনি পাণ্ডিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
‘বিশ্ব সৃষ্টির মূলে প্রেমময়ের অনন্ত প্রেম নিহিত। এই বিরাট বিশ্ব প্রেমময়ের অনন্ত প্রেমের শান্ত প্রকাশ ও সৃষ্ট মানব তার অনন্ত শক্তির শান্ত ও প্রতিনিধি ও খলিফা। স্রষ্টা যিনি অনন্ত শক্তি, অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত প্রেমের, অনন্ত ভাণ্ডার Unlimited energy with unbounded love and wisdom তিনি সর্বভূতে বিরাজমান, তার অবস্থিত সময় বা স্থানের বেড়িতে সীমাবদ্ধ করা যায় না। করুণাময় তার অনন্ত প্রেম, অনন্ত করুণারূপে মানবকে সৃষ্টি করেছেনে এই উদ্দেশ্যে যে, মানব প্রেম বলে স্রষ্টার সান্নিধ্য হাছেল করে, ধরার বুকে তাহার অনন্ত শক্তির পরশ লাভ করে এবং প্রকৃতির মাঝে তাহার অনন্ত মাহাত্ম, জ্যোতির পরিচয় পেয়ে স্বীয় জীবনকে ধন্য মনে করে ও তাহার সহিত যোগাযোগ সাধনে ব্রতী হয়। মানবাত্মা পরমাত্মা হইতে আগত এবং পরমাত্মার সাথে পূনর্মিলনই মানবাত্মার চরম লক্ষ্য। মানবকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন সেই অনন্ত সত্তার, অনন্ত গুণাবলীর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। তার জন্য প্রয়োজন প্রেম ও সাধনা, স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও (তদবির) প্রচেষ্টা। স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টির সেবার মাঝে গড়ে তোলা সম্ভব সেই জীবনের ধারা। সমগ্র সৃষ্টি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। তাই প্রেমময়ের সন্নিধ্য হাছিলের জন্য চাই সমগ্র সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা। সৃষ্টির খেদমতে নিপীড়িত নির্যাতিত মানবের খেদমতে নিজেকে উৎসর্গীকৃত করা। পাশাপাশি স্রষ্টার উপলব্ধির ও তন্ময়তা, যে উপলব্ধির জন্য চাই নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা, একান্ত চিন্তা। Concentration নির্ভর করে চিত্ত শুদ্ধির উপর, চরিত্রের উপর, মনঃসংযোগের উপর, মহব্বতের উপর। মহব্বতের জন্য চাই নফছের দমন, রিপুগুলোর দূরীভূতকরণ।
বিশেষ পর্ব- আধ্যাত্মগুরু : হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) একজন মাদারজাত (জন্মগত) আউলিয়া ছিলেন। তার জন্মের পূর্বে এবং অব্যবহিত পরে সুন্দর ভবিষ্যতের আগমন বার্তা পৌঁছেছিল। তার জন্মের পর উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পেতে থাকে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ও পারিবারিক কাঠামোর সৌকর্য। বাল্যকাল থেকে তিনি ছিলেন স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। চাকরি জীবনে দিনে ব্যস্ত থাকতেন সরকারি কাজে আর রাতে হতেন গভীর আরাধনায় নিমগ্ন। কখনো ধর্মালোচনায় এবং ধর্মীয় সংগীত (গজল) ব্যাপৃত হতেন। তিনি চট্টগ্রামে অবস্থানকালে বেড়ে যায় তার হৃদয়ের ব্যাকুলতা ও অস্থিরতা। নির্জ্জনতা তার খুব প্রিয় হয়ে ওঠে। এই ব্যাকুলতায় তার পিতা-মাতা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক নিদারুণ ব্যাকুলতার মাঝে সময় অতিবাহিত করতে থাকেন। হঠাৎ এক রাতে স্বপ্নে সাক্ষাৎ পান এক মহাপুরুষের। স্বপ্নের এই মহাপুরুষ হযরত গফুর শাহ্ আল-হোচ্ছামীর (র.) এর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯০৯ সালে কুমিল্লার ডাক বাংলোতে। হযরত গফুর শাহ্ আল-হোচ্ছামী (র.) ডাকবাংলোতে সুগন্ধভরা বেলি ফুল নিয়ে আসেন এবং ফুলগুলো উপহার দেন হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)কে। এই গফুর শাহ্ আল-হোচ্ছামী ছিলেন ভারত বিখ্যাত মহাপুরুষ, ঊনবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ট সাধক কুতুবুল আকতাব হাজী হাফেজ সৈয়দ ওয়ারেছ আলী শাহ্ (র.)-এর যোগ্য শিষ্য। তিনি হযরত গফুর শাহ্ (র.)-এর হাতে সস্ত্রীক বায়াত গ্রহণ করেন। ব্যাকুলতা প্রশমিত হয়ে শুরু হলো নতুন যাত্রা, বলিষ্ঠ কর্মজীবনের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক সাধনার নবদিগন্ত। হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ১৯২০ সালে তার পীর মুর্শিদ হযরত গফুর শাহ্ আল-হোচ্ছামী (র.)-এর সাথে পবিত্র হজব্রত পালন করেন। নিজের পীরের সাথে হজব্রত পালন করার দুর্লভ সৌভাগ্য হয়েছিল তার। ক্রমান্বয়ে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় সর্বোচ্চ শিখরে আহরণ করেন। লয় করে দিয়েছিলেন প্রেমময়ের সেই অনন্ত সত্ত্বার সাথে নিজেকে। হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ১৯২৯ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর বাকি জীবন কলকাতায় কাটাবেন বলেই স্থির করেছিলেন। একদা বাশারত হইলে ৪০০ মানবের রুহানী চিকিৎসার জন্য আমাকে দেশে ফিরতে হইবে। ...এখন অনাড়ম্বর এবং দীনভাবে জনসাধারণের খেদমত করাই জীবনের একমাত্র কাম্য স্থির করিলাম। তিনি তার জন্মভূমি নলতা শরিফে প্রত্যাবর্তন করলেও আত্মপ্রচারে বিমুখ থাকেন। কিন্তু মানুষ স্বপ্নে ইঙ্গিত পেয়ে তার নিকট আসতে থাকে এবং তাদের ব্যাকুলতা প্রকাশ করে। ক্রমে আগন্তুকের সংখ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি মানুষের মানবিক উন্নয়ন, আত্মার উন্নতি, তরিকতের শিক্ষা দিতে শুরু করেন। ক্রমে তার রুহানী শক্তির কিঞ্চিৎ প্রকাশিত হলো। তিনি কখনো ভক্তদের কাছ থেকে পয়সা নিতেন না। তার ভক্ত-মুরিদদের সব সময় বন্ধুর মর্যাদায় আসীন করতেন। ভক্তদের সার্বিক উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখতেন। তিনি বলতেন বাবারা-মায়েরা আমার খোদাকে চেন, খোদাকেই ইয়াদ কর। মহামনীষী হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর মধ্য কি যেন মোহনী শক্তি ছিল, যার দ্বারা প্রথম দর্শনেই মানুষ মগ্ধ হতেন ও তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তেন। তার চেহারায় ছিল সৌম্যভাব আর অসাধরণ সৌন্দর্যের আলোকোচ্ছটা। অনেকেই তাকে একবার দেখে সারা জীবনের জন্য ভালোবেসে ফেলেছেন। তার শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল অভিনব। তিনি বিশ্বাস করতেন বক্তৃতা দ্বারা মানুষ তৈরি হয় না। মানুষ তৈরির জন্য চাই দৃষ্টান্ত। তিনি নিজে সবর কাছে এক মহা আদর্শের দৃষ্টান্ত ছিলেন এবং তার ভক্তদেরও দৃষ্টান্ত হতে উৎসাহিত করতেন।
হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) মানুষকে সাধারণভাবে নামাজ-রোজা রাখ, দাড়ি রাখ এসব কথা বলতেন না। কিন্তু তিনি প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের গভীরে ছাপ ফেলতেন। ফলে তার ছোহবতে মানুষের প্রাত্যহিক, পারিবারিক, সামাজিক, নৈতিক, বৈষয়িক, আধ্যাত্মিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ, পরিমাপযোগ্য ইতিবাচক আসত। তার প্রতিটি ভঙ্গি, প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের চিন্তা, বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির বিষয়, তিনি ছিলেন দৃঢ় চিত্ত, সিদ্ধান্তে অটল, দয়ালু, ভালোবাসার কাতর একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি কখনো উপকারের প্রতিদান আশা করতেন না। তিনি মানুষের নিকট থেকে শুধু নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আশা করতেন। মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করেছে। গণশিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক থাকাকালীন তিনি যে বেতন পেতেন তা বর্তমান সময়ের মূল্য ৮-১০ লাখ টাকা। এসব অর্থ তিনি মানুষের সেবার জন্য ব্যয় করেছেন। নিজের বা পরিবারের জন্য তিনি কিছুই সঞ্চয় করে রাখেননি। তিনি তার আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসী ও প্রতিটি ভক্তের সার্র্বিক কল্যাণের দিকে সর্বদা নজর রাখতেন। তিনি ছিলেন সবার অভিভাবক, সবার পথপ্রদর্শক। তিনি মনে করতেন জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে স্রষ্টার সকল সৃষ্টিকে সেবা করা প্রত্যেক মানুষের অন্যতম কর্তব্য। এখন তার রওজা শরিফে এসে হাজার হাজার মানুষ মোস্তাফিজ হচ্ছেন।