পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। সাধারণত উদ্ভিদকুল, জলজ প্রাণী, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণীরা প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ওইসব প্রাণীর বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো বেশ কিছু দিক রয়েছে, যা পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে-
পরিবেশদূষণ : প্লাস্টিক ব্যবহৃত হওয়ার পর সহজে প্রাকৃতিকভাবে বিঘ্নিত হয় না। এটি বহু বছর ধরে পরিবেশে রয়ে যায়, মাটি, পানি ও বাতাসকে দূষিত করে। বিশেষ করে প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল, বর্জ্য ইত্যাদি প্রকৃতিতে পড়ে থেকে প্রাণীজগতের ক্ষতি করতে পারে।
জীবজগতের ক্ষতি : বন্যপ্রাণী, যেমন সামুদ্রিক প্রাণী, গৃহপালিত পশু, পাখি ইত্যাদি প্লাস্টিক খেয়ে মারা যেতে পারে। প্লাস্টিকের বর্জ্য তাদের পেটে গিয়ে হজম হয় না এবং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
জ্বালানি সাশ্রয় : প্লাস্টিকের উৎপাদনে প্রচুর তেল ও গ্যাসের প্রয়োজন হয়, যা পরিবেশে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি : প্লাস্টিকের কিছু উপাদান, যেমন BPA (Bisphenol A), খাবার ও পানির মধ্যে মিশে শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে- যেমন হরমোনাল ডিসরাপশন, ক্যান্সার, প্রজনন সমস্যাসহ অন্যান্য রোগ।
আত্মনির্ভরতা : প্লাস্টিকের পণ্য সাধারণত একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়, যা পুনঃব্যবহার বা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
এই কারণে, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে এনে এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার বাড়িয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়তা করা উচিত। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক আরো কিছু পয়েন্টে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা : প্লাস্টিকের বর্জ্য যথাযথভাবে সংগ্রহ এবং পুনঃপ্রক্রিয়া করা কঠিন। এটি ডাম্পিং বা ডিসপোজাল সাইটে জমে পড়ে, যেখানে সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না করলে জমে থাকা প্লাস্টিক অনেক বছরের জন্য পরিবেশে থেকে যায়।
মাইক্রোপ্লাস্টিক : প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরা, যেগুলো একেবারে ক্ষুদ্র হয়ে যায় (মাইক্রোপ্লাস্টিক), তা বাতাস, পানি, মাটি এবং খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবাহিত হতে পারে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের খাদ্য ও পানির মধ্যে মিশে গিয়ে মানবস্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে।
খাদ্যদ্রব্যে দূষণ : কিছু প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল বা কন্টেইনারে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে, যা খাবারের মধ্যে মিশে গিয়ে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। প্লাস্টিকের তৈলাক্ত বা রাসায়নিক বিক্রিয়া খাওয়ার উপযোগী না হলেও সেগুলোর সংস্পর্শে থাকা খাদ্যদ্রব্যগুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব : প্লাস্টিকের প্রক্রিয়াকরণ এবং ডাম্পিংয়ে ব্যয় বাড়তে থাকে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। প্রকৃতি এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির সাথে যুক্ত অতিরিক্ত ব্যয় একটি বড় আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো, বাংলাদেশে সমুদ্র দূষণ (২০২৩)
২০২৩ সালে বাংলাদেশে সমুদ্রের তীরে প্লাস্টিকের বর্জ্য জমে যাওয়ার ফলে স্থানীয় পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের সৈকত এবং সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিকের বস্তা, বোতল ও অন্যান্য বর্জ্য জমে গিয়ে সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বিপদ তৈরি করেছে। এর ফলে, স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের মুম্বাইয়ে প্লাস্টিকের কারণে বন্যা (২০২৩):
ভারতে, মুম্বাই শহরে ২০২৩ সালে ভারি বর্ষণে প্লাস্টিকের বর্জ্য জলাশয়ের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। প্লাস্টিকের বস্তা, বোতল এবং অন্যান্য বর্জ্য জলাশয়ের ভেতরে আটকে গিয়ে পানির প্রবাহে বাধা দেয়, যার ফলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা এবং বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এটি শহরের পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রায় বিশাল বিপর্যয় ডেকে আনে।
কলম্বিয়ায় প্লাস্টিকের বর্জ্য সমুদ্রের তীরে ছড়িয়ে পড়া (২০২৪)
২০২৪ সালের শুরুতে, কলম্বিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে প্লাস্টিকের বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় পরিবেশগত ক্ষতি বৃদ্ধি পায়।
সেখানকার ক্রীড়া কার্যক্রম, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় এবং পর্যটন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ প্লাস্টিকের বর্জ্য মাছের পেটে ঢুকে পড়ছিল এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতি তৈরি হচ্ছিল।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি : আমাদের অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিপজ্জনক হয়ে! উঠতে পারে।
পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা প্লাস্টিক পৃথিবীকে আরো দুর্বিষহ করে তুলবে এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাবে।