ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

সব দুর্বৃত্তের বিচার করুন
ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ব্যাংক খাত থেকে ঋণের নামে জনগণের অর্থসম্পদ লুটকারী দুর্বৃত্তদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। গত রোববার সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

পতিত সরকারের ১৫ বছরের চোরতন্ত্রের শাসনে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা ও সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ন্যূনতম শৃঙ্খলা ছিল না। ছিল না কোনো আইন-কানুন বা বিধিবিধান অনুসরণের রীতি-রেওয়াজ। ফলে স্বাভাবিকভাবে আর্থিক খাতের সব প্রতিষ্ঠান আক্ষরিক অর্থে ধ্বংস হয়ে গেছে। অর্থনীতির মূল ভিত ধসে গেছে। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসার একটি আশাব্যঞ্জক চিত্র উঠে এসেছে নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে। বৈঠকে জানানো হয়, গত পাঁচ মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমেছে, রিজার্ভ বিপজ্জনক সীমা কাটিয়ে উঠেছে এবং ১৫ বছরে লুটেরাদের পাচার করা ২৮ লাখ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনসম্মতভাবে কাজ করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তত চারজন দেশসেরা অর্থনীতিবিদ অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেয়ায় আমরা শুরুতে আস্থা প্রকাশ করেছিলাম। আমাদের আস্থার যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু একটি সরকারের দায়িত্ব শুধু অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশ নয়। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ হলো, গত ১৫ বছরে জনগণের ওপর যারা সীমাহীন জুলুমণ্ডনিপীড়ন চালিয়েছে সেসব দুর্বৃত্তকে কাঠগড়ায় তোলা। তাদের অপরাধের যথাযোগ্য বিচার সম্পন্ন করা। এরপর আছে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কারের কাজ এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। এগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করার নয়। যুগপৎ ও চলমান প্রক্রিয়ার আওতায় সম্পন্ন করতে হবে।

বলতে বাধা নেই, গত ছয় মাসে সরকারের কর্মকুশলতা জনমনে আশার সঞ্চার করেনি; বরং অনেক বিষয়ে তাদের নমনীয়তা, দ্বিধা অথবা শৈথিল্য অনেককে আশাহত করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরাতে পারেনি সরকার। সাধারণ মানুষও এসব নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। এখনকার চেয়ে আগেই ভালো ছিলাম, আওয়ামী দোসরদের এমন অপপ্রচারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা চাই, সরকার আইন প্রয়োগে কঠোর হোক, গণহত্যাকারী খুনি সরকারের যেসব সহযোগী, দোসর এখনো প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সব শাখায় বহাল তবিয়তে অবস্থান করে সরকারের পথচলায় নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করছেন; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। এখানে অনুকম্পা বা আনুকূল্য দেখানোর সুযোগ নেই। জাতি এই সরকারের প্রতিটি কাজের হিসাব রাখছে, এটি তাদের মনে রাখা কর্তব্য। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আটক কাউকে ছেড়ে দেয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের পালিয়ে যেতে সহায়তাকারীদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন আছে। আছে রাজনৈতিক দলের নানামুখী চাপ। তবে সরকার আইন-বিধি অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করছে- এমন ধারণা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে রাজনৈতিক চাপও নমনীয় হতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে লাগসই কৌশল গ্রহণের দায়িত্ব সরকারের। সে সুযোগ এখনো আছে। আমরা এমন আশাবাদ ধরে রাখতে চাই, সরকার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে গড়ে ওঠা জনগণের বিপুল প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত