১৮৫৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, যা ইতিহাসে ‘সিপাহী বিদ্রোহ’- নামে বিখ্যাত হয়ে আছে । এরপর এক শাতাব্দী পরে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আর এক নতুনতর সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ১৯৭১ সালে। এ বিদ্রোহের মহানায়ক ছিলেন তৎকালীন ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্যাটালিয়নের একমাত্র বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান। পাক হানাদার বাহিনীর পৈশাচিকতা, নৃশংসতা ও পরিকল্পিত গণহত্যার বিরুদ্ধে এক রণহুংকার উচ্চারিত হলো- উই রিভোল্ট। অর্থাৎ মেজর জিয়ার নেতৃত্বে সিপাহী বিদ্রোহ। যে বিদ্রোহ থেকে শুরু হলো স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা।
৩ মার্চ, ১৯৭১ সাল। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রথম প্রকাশ্যে আলোচনা। ৭০-এর নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি ক্রমান্নয়ে অবনতির দিকে যেতে থাকে। শাসকগোষ্ঠি আলোচনার নামে প্রহসনের খেলায় মত্ত।
আর শেখ মুজিব ক্ষমতা লাভের আশায় আলোচনার ফলাফলের অপেক্ষায় থাকেন। এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছিল। সামরিক বাহিনীর বাঙালি অফিসাররা অস্থির হয়ে উঠছিলেন, কি করা যায়? কি করব? তারা মেজর জিয়ার কাছে ছুটে আসছিলেন। মেজর জিয়া তখন ছিলেন ৮ম ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের বাঙালি অফিসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত।
এদিকে বাঙালি অফিসার ও সৈন্যরা শেখ মুজিবের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে কখন তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। বাঙালি অফিসাররা পাকিস্তানি জেনারেলদের চালচলনে সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে। একদিকে চাকরি ও জীবনের নিরাপত্তা অপরদিকে দেশপ্রেম বাঙালি সৈন্যদের অসহায় করে তোলে। তবুও দেশ ও জাতির স্বার্থে তারা ছিল সতর্ক ও প্রস্তুত।
এরপর এলো ৭ মার্চ। শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিলেন কিন্তু তার ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি সৈন্যরা কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পেল না। অপরদিকে আলোচনার নামে কালক্ষেপণ চলতেই থাকে।
পর দিন ৮ মার্চ। আবার সেই সকাল। ওরা দু’জন সবার অলক্ষ্যে আবার উঠে এলেন ছাদে। মেজর জিয়া ও ক্যাপ্টেন অলি আহাম্মেদ। বিদ্রোহ ঘোষণা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিলেন। ঠিক হলো বিদ্রোহ ঘোষণার উপযুক্ত মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করা। এদিকে ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা চলতে থাকে। বাঙালি অফিসাররা অপেক্ষা করতে থাকে আলোচনার ফল কি হয়? কিন্তু আলোচনার অন্তরালে শুরু হয় এক জঘন্য চক্রান্ত। জাহাজ বোঝাই আসতে থাকে সৈন্য, অস্ত্র ও গোলা বারুদ।
এমনি সময় ডাক এলো লে. কর্নেল এমআর চৌধুরীর কাছ থেকে। ১৭ মার্চ রাত সাড়ে ন’টায় চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে সামরিক আইন সদর দপ্তরে প্রথম গুপ্ত বৈঠক করলেন ওরা চারজন। লে. কর্নেল এমআর চৌধুরী, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন অলি আহম্মেদ। বৈঠকের শুরুতেই কর্নেল চৌধুরী পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন মেজর জিয়াকে। মেজর জিয়া বলেন, ‘ওদের ভাব গতি দেখে পরিষ্কার মনে হচ্ছে ওরা হামলা চালাবে।’ সবাই একমত পোষণ করলেন। কি করা যায়? সবার মনে একই প্রশ্ন। এক- বিদ্রোহ। সশস্ত্র অভ্যুত্থানই একমাত্র পথ।
সশস্ত্র অভ্যুত্থান। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম- ‘সিপাহী বিদ্রোহের’ পর আর এক নতুনতর সিপাহী বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহ অবশ্যম্ভাবী। সশস্ত্র অভ্যুত্থান ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই। এদিকে পাকিস্তানি হামলার প্রস্তুতি চলছিল পুরোদমে। বাঙালি অফিসারদের উপর তাদের সজাগ দৃষ্টি হয়ে উঠছিল আরও প্রখর। আর এরাও পাল্টা গোয়েন্দা বৃত্তি চালিয়ে সংগ্রহ করছিলেন পাক সেনাদের তৎপরতা। ওদিকে কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে আনা হলো চট্টগ্রামে। তাদের রাখা হতে লাগলো শহরের অবাঙালিদের বাড়ি বাড়ি। বাংলাদেশের উপর বর্বর হামলার প্রস্তুতি দেখতে এলেন পাক সেনাবাহিনীর জেনারেল হামিদ খান।
২১ মার্চ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পশ্চিমা সামরিক অফিসারদের সাথে তার কানাঘুষা ও হামিদের একটি ছোট্ট উক্তিতে বাঙালি অফিসারদের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, হামলা অত্যাসন্ন। কিসের এত কানাঘুষা ও ফিস ফিস? সন্দিগ্ধ হয়ে উঠেছিল মেজর জিয়ার মন। কৌশলে তিনি একজনের সাথে কথা বলতে বলতে গিয়ে দাঁড়ালেন জে. হামিদের ঠিক পেছনে। দুই কান সজাগ রাখলেন জে. হামিদের কথার দিকে। জেনারেল হামিদ তখন কথা বলছিলেন ২০তম বালুচ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল ফাতমীর সাথে। জে. হামিদ অনেকটা সামরিক কমান্ডের মতোই ফাতমীকে বলে উঠলেন-’ দেখ ফাতমী, অ্যাকশান খুব দ্রুত ও কম সময়ের মধ্যে হতে হবে’।
আঁতকে উঠলেন মেজর জিয়া। কি হতে যাচ্ছে? ওই দিন বিকালে মেজর জিয়া সস্ত্রীক এক সৌজন্য সাক্ষাতে গেলেন ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের বাসায়। জে. হামিদের সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলেন মজুমদারের নিকট। কিন্তু মজুমদারের সে তথ্য ছিল অজানা। শুধু বললেন, ওরা আমাকে বিশ্বাস করে না। কি বুঝলেন? জানতে চাইলেন মেজর জিয়া। মনে হচ্ছে সাম থিং ফিশি। জিয়া বললেন, ফিশি নয় বিরাট কিছু। মজুমদার মেনে নিলেন সে কথা।
পর দিন ২২ মার্চ। রাত ১১টায় চট্টগ্রাম ইপিআর অ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন রফিক এসে দেখা করেন মেজর জিয়ার সাথে। তিনি সরাসরিই বললেন, সময় খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আপনি ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করুন। ইপিআরদের সাহায্য পাবেন। মেজর জিয়া তাকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানান। ২৪ মার্চ। আওয়ামী নেতৃবৃন্দ তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে ব্যর্থ হয়। বাঙালি সৈন্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। ক্যাপ্টেন শমসের মুবিন ওইদিন জিয়াউর রহমানকে খবর পাঠালেন যে, জনগণ রাস্তায় রাস্তায় বেরিকেড তৈরি করছে। ‘এমভি সোয়াত’ থেকে অস্ত্রশস্ত্র খালাস করতে জনগণ বাধা দিচ্ছে। এদিকে ব্যাপক রদবদল ঘটে গেল ক্যান্টনমেন্টের প্রশাসন ব্যবস্থায়। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে এলেন জে. খাদেম হোসেন রাজা, জে. আনসারী, জেনারেল মিঠা খান, লে. জে. খোদাদাদ খান প্রমুখ। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ও মেজর আমীন আহম্মেদকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন ঢাকায়। মজুমদারের স্থানে ব্রিগেডিয়ার আনসারীকে নিযুক্ত করা হয়। আর কর্নেল সিগারীকে ইপিআরের সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।
এই রদবদলে শংকিত হয়ে উঠে মেজর জিয়াসহ সব বাঙালি অফিসার ও সৈন্যরা। এই দিনই গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন লে. কর্নেল এমআর চৌধুরী। পরে তাকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হত্যা করে। এদিকে চট্টগ্রাম শহরে উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলছিল। ২৫ মার্চ ব্রিগেডিয়ার আনসারী সি-ও জানজুয়াকে নির্দেশ দিলেন ব্যারিকেড পরিষ্কার করতে। ‘অল ব্যারিকেডস মাস্ট বি ক্লিয়ারড অ্যাট এনি কস্ট।’- এটা আনসারীর ম্যাসেজ ছিল।
‘অ্যাট এনি কষ্ট’ শব্দটার উপর সি-ও জানজুয়া খুব অ্যামফ্যাসিস করছিলেন। এরপর নির্দেশক্রমে বাঙালি সৈন্যদের ব্যারিকেড সরাতে পুরা একটা কোম্পানি ডিটেইল করা হলো।
২৫ মার্চ রাত ৯টা নাগাদ সমস্ত বেরিকেড পরিষ্কার করা হয়। জনসাধারণ খুব বাধা দিচ্ছিল। ‘আপনারা এসব করবেন না। আপনাদের ক্ষতি করে।’ কিন্তু বাঙালি সৈন্যরা ছিল অসহায়। তারা জনসাধারণের বলেছিলেন, ‘আমরা নিজেদের ইচ্ছায় নয় শুধু নির্দেশ পালন করছি। তদুপরি আমরা আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড থেকেও কোনো নির্দেশ পাচ্ছি না। অস্থির, উদ্বিগ্ন বাঙালি অফিসার ও সৈন্যরা আরও পূর্ব থেকেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নির্দেশ কামনা করছিল।
২৫ মার্চ রাত সাড়ে এগারটায় সি-ও জানজুয়া মেজর জিয়াকে চট্টগ্রাম পোর্টে ডিউটি করতে নির্দেশ পাঠাল। এই আকস্মিক নির্দেশের অর্থ তার কাছে বোধগম্য হলো না। জানজুয়া নিজে এসে তাকে নৌবাহিনীর একটি ট্রাকে তুলে বন্দরের দিকে রওনা করে দেন। মেজর জিয়ার ট্রাক যখন আগ্রাবাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান একটি ডজ গাড়িতে দ্রুত পেছন থেকে এসে মেজর জিয়াকে সংবাদ দেয় যে, পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে।
শহরে বহু লোক হতাহত হয়েছে। কি করবেন জিয়া ভাই? জিয়া গভীর চিন্তায় মগ্ন তখন। নিজের এবং পরিবারের কথা চিন্তা না করে দেশ ও জাতির কথা ভেবে নির্দ্বিধায় মেজর জিয়া বজ্র নির্ঘোষে বলে ওঠেন- ‘উই রিভোল্ট’। তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। সঙ্গে সঙ্গে মেজর জিয়া খালেকুজ্জামানকে দিয়ে ক্যাপ্টেন অলি আহম্মদকে সংবাদ পাঠালেন। এবং ব্যাটেলিয়নের সমস্ত পশ্চিমা সৈন্যদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলেন।
এরপর মেজর জিয়া ট্রাকে ফিরে এসে পশ্চিমা অফিসারকে বললেন হুকুম বদলে গেছে। ফিরে যেতে হবে। এবং বাঙালি সৈন্যদের ইশারায় রাইফেল লোড রাখতে বলেন। ক্যান্টনমেন্টে ফিরে এসে মেজর জিয়া পশ্চিমা সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করতে বলেন। হতচকিত পশ্চিমা সৈন্যরা সবাই আত্মসমর্পণ করেন। এবারে, মেজর জিয়া একাই একটা গাড়ি নিয়ে ছুটে যান কমান্ডিং অফিসার জানজুয়ার বাড়ি। কলিংবেল টিপতেই ঘুম ভেঙে উঠে এসে জানজুয়া জিয়াকে দেখে চমকে ওঠেন। তার ধারণা ছিল পরিকল্পনা অনুযায়ী মেজর জিয়া বন্দরে বন্দি হয়ে রয়েছেন। জানজুয়াকে বন্দি করে নিয়ে ষোলশহরে ফিরে আসেন মেজর জিয়া। এদিকে মেজর শওকতও জিয়ার সাথে বিদ্রোহে যোগ দেন।
এরপর মেজর জিয়া টেলিফোন এক্সচেঞ্জের অপারেটরকে জানালেন সবাইকে টেলিফোন করে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটেলিয়নের বিদ্রোহের কথা জানাতে। অপারেটর সানন্দে তার নির্দেশ জানাতে রাজি হন। তারপর মেজর জিয়া সবাইকে একত্রিত করেন এবং টেবিলের উপর উঠে বক্তৃতায় সবার উদ্দেশ্যে ঘোষণা করলেন যে, ‘আজ থেকে আমি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার। আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সংকল্প ঘোষণা করলাম। এখন আমাদের এখানে থাকা নিরাপদ নয়। আমরা সবাই কালুরঘাটের দিকে যাব, সেখানে গিয়ে আমরা সব কিছু রিঅর্গানাইজ করব। ২৬ মার্চ সকাল ১০টায় মেজর জিয়া সবাইকে নিয়ে কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে এসে পৌঁছান। এ সময় মেজর জিয়া মেজর মীর শওকতাকে পাঠান আওয়ামী নেতৃবৃন্দের খুঁজে বের করতে।
মীর শওকত অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের পায়নি। পরে জিয়া রেডিওতে একটি ঘোষণা দেন। এতে তিনি নিজেকে হেড অব দ্য স্টেট ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে উল্লেখ করেন। পরদিন ২৭ মার্চ জিয়ার নির্দেশে মীর শওকত আধার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের খোঁজ করেন এবং এক বাড়িতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা এমআর সিদ্দিকী, আক্তারুজ্জামান বাবু, আতাউর রহমান কাওসার, অধ্যাপক ইউসুফকে খুঁজে পায়। এরপর নেত্রবন্দ জিয়ার সাথে দেখা করে তাকে চার্জ করেন।
কেন জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। পরবর্তীতে তারা জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য বললে জিয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘোষণা দিতে বলেছিলেন। জিয়ার এ প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নিজেরা এক ঘণ্টা বৈঠক করেও কে ঘোষণা দিবে ঠিক করতে পারেননি। শহরে নিজেদের পরিবারের উপর হামলা হবে, নিজেদের নিরাপত্তার কথা বলে সেদিন তারা জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর নামে আবার ঘোষণা দেয়ার অনুরোধ করলে জিয়া ২৭ মার্চ তার দ্বিতীয় ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। ভাষণটি জিয়া ইংরেজি ও বাংলায় পাঠ করেন। ২৮ মার্চ সারা দিন ক্যাপ্টেন শমসের মুবিন ওই ভাষণটি পড়তে থাকেন। এরপর ৩০ মার্চ পাকিস্তানি দুটি বিমান গোলা বর্ষণ করে বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দেয়। পরে ৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন একটি গোপন এলাকা থেকে চালু করা হয় আর একটি বেতার কেন্দ্র।
১১ এপ্রিল কালুরঘাট এলাকা থেকে অবস্থান সরিয়ে নেয়ার পর যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায়। যুদ্ধ চলে রামগড়, রাঙামাটি, করুবাজার ও শুভপুরে।
মূলত ২৬ মার্চ সারা বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে স্বাধীনতার লড়াই শুরু হলেও সেলিম চট্টগ্রাম ছিল চালকের আসনে। কেন না চট্টগ্রামস্থ ৮ম ইস্ট বেঙ্গল মেজর জিয়ার নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। জিয়াই প্রথম সৈনিক যিনি সংঘবদ্ধ বিদ্রোহের কথা ভাবতে পেরেছিলেন এবং প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পটভূমি নির্মাণ করেছিলেন বেতার মারফৎ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে।
মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা সেদিন সেনাবাহিনী ও জনসাধারণ অনেকেই শুনেছিলেন। আর সেই শোনা থেকে বিস্তার ঘটেছিল দেশে-বিদেশে সর্বময়। যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন যুদ্ধ, সেই যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন একজন নেতার, একটি ঘোষণার। আর সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান সুতরাং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চট্টগ্রামে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র, ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের জিয়ার নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা, চট্টগ্রাম বন্দর, এবং বেভার মারফৎ মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধের জ্বলন্ত দলিল। তাই চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা দান করেছিল। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে।