গ্রীষ্মকাল- একসময় যা ছিল উৎসবের ঋতু, আজ বাংলাদেশের শহরগুলোতে তা এক নরকযন্ত্রণা। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে চুয়াডাঙ্গার মতো প্রান্তিক জনপদ পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। প্রখর রোদ আর আর্দ্রতার অসহনীয় মিশ্রণে অনুভূত তাপমাত্রা যেন মানুষের সহ্যশক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে ঢাকায় ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ৫৮ বছরের উষ্ণতম রেকর্ড ভেঙেছিল। সেই ভয়াবহতাকে ছাপিয়ে ২০২৫ সালের মে মাস আরও কঠিন বার্তা নিয়ে এসেছে- ১০ মে ২০২৫ তারিখে ঢাকায় ৪০.১ ডিগ্রি এবং চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহ কি শুধুই জলবায়ু পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি, নাকি এর পেছনে রয়েছে আমাদের দীর্ঘদিনের নগর পরিকল্পনার চরম ব্যর্থতা এবং পরিবেশের প্রতি নির্দয় অবহেলার বিষাক্ত ফল?
বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ নতুন কোনো ঘটনা নয়, তবে ২০২৫ সালে এর তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৮১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের গড় তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালে এপ্রিল-মে মাসে দেশজুড়ে যে তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে, তা গ্রীষ্মের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যকে ছাড়িয়ে গেছে বহুদূর। এমনকি কিছু অঞ্চলে বর্ষাকালেও মৃদু তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে।
ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, যশোর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জের মতো শহরগুলোতে তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসহনীয় আর্দ্রতা, যার ফলে ‘অনুভূত’ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
এই অসহনীয় তাপমাত্রার প্রধান কারণ নিঃসন্দেহে জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের প্রভাবে গ্রীষ্মকালের ব্যাপ্তি বেড়েছে এবং তাপপ্রবাহের পুনঃরাবৃত্তি ও তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে শহরাঞ্চলে ‘আরবান হিট আইল্যান্ড’ (UHI)-এর প্রভাব। ঢাকায় ৮১.৮২ শতাংশ এলাকা কংক্রিটের নিচে ঢাকা পড়েছে, যা দিনের বেলায় প্রচুর তাপ শোষণ করে এবং রাতে ধীরে ধীরে তা বিকিরণ করে শহরকে উষ্ণ রাখে। গত ২৮ বছরে ঢাকায় সবুজ এলাকার পরিমাণ ৪৩ শতাংশ এবং জলাশয় ৮৫.৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একই চিত্র নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যেখানে গাছপালা ১৫.৫-১৬.২ শতাংশ এবং জলাশয় ১.০৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় ভূমিষ্ঠ তাপমাত্রা ৩.৫৭ থেকে ৫.৭৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচণ্ড তাপে জনজীবন বিপর্যস্ত: স্বাস্থ্য ও জীবিকায় করুণ ছায়া।
তীব্র তাপপ্রবাহ জনস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২৫ সালে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা, শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ঢাকায় তাপপ্রবাহের দিনগুলোতে ডায়ারিয়ার প্রকোপ ৬.৭ শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ১৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বয়স্কদের তাপজনিত কারণে মৃত্যুর হার ১৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, এই অসহনীয় গরম মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে- উদ্বেগ, অস্থিরতা, এবং হতাশার মতো সমস্যাগুলো বাড়ছে। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ, যেমন রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক ও কৃষিজীবীরা এই গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রায় বিপর্যস্ত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রখর রোদে কাজ করতে বাধ্য হওয়ায় তারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। এর পাশাপাশি, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট, সুপেয় পানির সংকট জনজীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। ঢাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রক (এসি) ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, যা জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উপর চরম চাপ সৃষ্টি করছে। গ্রামাঞ্চলে যেখানে শীতলীকরণ ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত, সেখানে তাপপ্রবাহের প্রভাব আরও তীব্র ও সর্বগ্রাসী।
অর্থনীতি ও কৃষি, ক্ষতির ক্রমবর্ধমান বিস্তার : তাপপ্রবাহ অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে কৃষি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ধান, পাট, শাকসবজি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসলের উৎপাদন এবং গুণমান উভয়কেই হ্রাস করছে। কৃষি বিভাগের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের তাপপ্রবাহে ফসলের ক্ষতি ২০২৪ সালের তুলনায় ১২-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি এবং কৃষকদের জীবিকাকে বিপন্ন করছে। শুধু কৃষিক্ষেত্রে নয়, তাপপ্রবাহের কারণে শ্রম উৎপাদনশীলতাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (CPD)-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, তাপমাত্রাজনিত চাপের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৩.৮৩ মিলিয়ন পূর্ণকালীন চাকরির সমতুল্য অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। নির্মাণ, পর্যটন এবং ছোট শিল্প খাতও এই অসহনীয় গরমের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.১ শতাংশ-এ নেমে আসতে পারে, যার অন্যতম প্রধান কারণ এই চরম আবহাওয়া। নগর পরিকল্পনার চরম ব্যর্থতা: তাপের ফাঁদ তৈরির কারিগর।
বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনা তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় সম্পূর্ণভাবে অপ্রস্তুত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের মতো জনবহুল শহরগুলোতে অপরিকল্পিত নির্মাণ, জলাশয় ভরাট এবং নির্বিচারে সবুজ স্থান ধ্বংস করার মতো কার্যকলাপ তাপপ্রবাহের তীব্রতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতীয় নগর খাত নীতি (২০১৪) এবং জাতীয় গৃহায়ণ নীতি (২০০৮) দীর্ঘকাল ধরে শুধুমাত্র খসড়া আকারেই রয়ে গেছে, যা নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘসূত্রিতা ও উদাসীনতার পরিচায়ক। ভৌত পরিকল্পনার জন্য কোনো কার্যকর জাতীয় আইন বা সুসংহত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আজও অনুপস্থিত। বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (BNBC) খোলা জায়গা রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশ দিলেও, বাস্তবে প্রায়শই সেই জায়গাগুলো গাড়ি পার্কিং বা অবৈধ নির্মাণকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। ফলস্বরূপ, আমাদের শহরগুলো তার প্রাকৃতিক শীতলতা হারানোর পাশাপাশি পরিণত হয়েছে এক একটি উত্তপ্ত দ্বীপে।
পরিবেশের উপর চরম আঘাত : প্রকৃতির নীরব কান্না
তাপপ্রবাহ শুধু জনজীবন বা অর্থনীতিকেই বিপর্যস্ত করছে না, এটি পরিবেশের উপরও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মাটির লবণাক্ততা এরমধ্যেই ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কৃষিজমির উর্বরতা এবং উৎপাদনশীলতাকে ক্রমশ কমিয়ে দিচ্ছে। নির্বিচারে গাছপালা নিধন ও জলাশয় ভরাটের কারণে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে।
তাপপ্রবাহের কারণে বায়ুদূষণের মাত্রাও বাড়ছে, কারণ বাতাসে ধূলিকণা ও ক্ষুদ্র বস্তুকণা (PM 2.5)-এর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল, এবং ২০২৫ সালেও সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।
সমাধান অন্বেষণ : তীব্র তাপপ্রবাহের এই ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের শহরগুলোতে জরুরিভিত্তিতে সমন্বিত ও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। এই পদক্ষেপগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করার পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফলগুলোকেও প্রশমিত করতে সহায়ক হবে।
সবুজ ও নীল অবকাঠামোর বিস্তার : শহরগুলোতে পার্ক, নগর বন, সবুজ ছাদ, উল্লম্ব বাগান এবং বিদ্যমান জলাশয় (যেমন- হ্রদ, খাল, পুকুর) সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে তাপপ্রবাহের তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (DAP 2022) ১৫ শতাংশ সবুজ এলাকা রাখার সুপারিশ করেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ফলে শহরের তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। কলম্বিয়ার মেডেলিনের গ্রিন করিডোর শহরের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে সফল হয়েছে (UN-Habitat, 2023), যা ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।
তাপ-প্রতিরোধী নির্মাণ কৌশল : নতুন ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যমান ভবন সংস্কারের ক্ষেত্রে শীতল ছাদ (cool roof) এবং তাপ প্রতিফলিতকারী রং ব্যবহারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (BNBC) সংশোধন করা জরুরি। ভারতের আহমেদাবাদে শীতল ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে (NRDC, 2024), যা ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সিঙ্গাপুরের সবুজ ছাদ প্রযুক্তিও শহরের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে (URA, 2024)।
পানি-সংবেদনশীল নকশা (WSUD)-এর প্রয়োগ : ওয়াটার সেনসিটিভ আরবান ডিজাইন (WSUD) বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং তা ব্যবহার করে শহরের শীতলতা বৃদ্ধি করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ডঝটউ প্রয়োগের মাধ্যমে শহরের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে । বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মতো শহরে পুকুর ও খাল পুনরুদ্ধার এবং বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পদ্ধতি কার্যকর করা যেতে পারে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচার : তীব্র তাপপ্রবাহের সময় সাধারণ মানুষকে হালকা রঙের পোশাক পরিধান, সানস্ক্রিন ও ছাতা ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানের বিষয়ে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। আহমেদাবাদের হিট অ্যাকশন প্ল্যান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস এবং সতর্কতা প্রদানের মাধ্যমে তাপজনিত মৃত্যু ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশেও BMD (বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর) অ্যাপে তাপমাত্রার সতর্কতা এবং করণীয় বিষয়গুলো যোগ করা যেতে পারে।
স্থানীয় উদ্যোগের প্রসার : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের হিট অ্যাকশন প্ল্যান তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় একটি কার্যকর স্থানীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা ঢাকা ও রাজশাহীর মতো অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ শহরেও সম্প্রসারণ করা যেতে পারে (পরিবেশ মন্ত্রণালয়, ২০২৪)। ভারতের সুরাটে স্থানীয় HAP শ্রমজীবী মানুষের জন্য ছায়াযুক্ত বিশ্রামাগার স্থাপন করেছে, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও অনুকরণীয় হতে পারে।
নীতি ও শাসনের শক্তিশালীকরণ : একটি কার্যকর জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা আইন প্রণয়ন এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নগর খাত নীতি (২০১৪)-এর দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। স্থানীয় সরকারগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সিঙ্গাপুরের সমন্বিত নগর পরিকল্পনা তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় একটি সফল উদাহরণ (URA, 2024), যা বাংলাদেশের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষণীয় মডেল হতে পারে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল (যেমন- গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড) থেকে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সংগ্রহ করে সবুজায়ন এবং তাপ-সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জলাশয় পুনরুদ্ধার করে শহরের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য একটি বাস্তবসম্মত উদাহরণ।
জলবায়ু পরিবর্তন নিঃসন্দেহে এই সংকটের একটি প্রধান কারণ, তবে অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্বিচারে সবুজ ও নীল স্থানের ধ্বংস এবং দুর্বল নগর পরিকল্পনা ও শাসন ব্যবস্থাই এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাওয়া জনজীবন, অর্থনীতি এবং পরিবেশের জন্য এক অশনি সংকেত। এখনই সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপযুক্ত সময়। ব্যাপক সবুজায়ন, সুচিন্তিত ও সমন্বিত নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, নীতি সংস্কার এবং সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই একটি তাপ-সহনশীল ভবিষ্যৎ নগরী নির্মাণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই হবে এই রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি। আসুন, আমরা সম্মিলিতভাবে এমন একটি শীতল ও বাসযোগ্য বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়নে এখনই সক্রিয় হই, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারে।
লেখক : শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ