ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হোক

মো. শাকিল আহমাদ
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হোক

পবিত্র ঈদুল আজহা দ্বারপ্রান্তে। এরই মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ঈদের আমেজ। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। এ সময় বাড়ি ফিরতে নানান ভোগান্তির স্বীকার হতে হয় ঘরমুখো মানুষের। পোহাতে হয় অসহনীয় দুর্ভোগ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আনন্দ অনেক সময় ম্লান হয়ে যায় বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রীচাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, দীর্ঘ যানজট, চুরি-ছিনতাই, এমনকি মলমপার্টি ও পটেকমারদের দৌরাত্ম্য। এসবই যাত্রাপথে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। ফলে নিরাপদে বাড়ি ফেরা অনেকটা দুরূহ হয়ে পড়ে ঘরমুখো মানুষের। প্রতিবছর ঈদের সময়টাতে সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। যা খুবই উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত রোজার ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে ১৫ দিনে দেশের সড়ক মহাসড়কে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত এবং ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত, ৮ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ জন নিহত ও ৮৩৫ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত, ১৫৫ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, নিহতের ৪৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আহতের ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্রায়। এছাড়াও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ২০২৪ সালে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ২৩৭ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ১৯০ জন আহত হয়েছেন। মোট ৬ হাজার ৯৭৪টি দুর্ঘটনায় এসব মানুষ হতাহত হয়েছেন।

বিআরটিএর তথ্য বলছে, গত এপ্রিল মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৮০ জন এবং আহত ৫৫০ জন। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা যেন একটি ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। প্রতিনিয়তই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। চোখের সামনে প্রতিদিনই তাজা প্রাণগুলো লাশ হয়ে ফিরছে ঘরে। আকাশ ভারী হচ্ছে স্বজনদের বুকফাটা কান্না আর আহাজারিতে।

খবরের কাগজ খুললেই যার ভয়াবহ চিত্র ভেসে আসে। সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে বলা যায়, সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা, বিরতিহীন ও বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালক-হেলপার দ্বারা গাড়ি ড্রাইভিং, মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা এবং উল্টোপথে যানবাহন চালানো ইত্যাদি। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন গাড়ি রঙচঙ করে নতুনের মতো করে রুটে তোলা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি, চালক ও যাত্রীদের সচেতনতা এবং সরকারের সদিচ্ছাই পারবে যাত্রাপথকে নিরাপদ ও ভোগান্তিমুক্ত করতে।

পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিয়মিত রাস্তার রোড সেইফটি অডিট করা এবং মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। ওভারলোড নিয়ে কোন যানবাহন যেন রুটে নামতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।

মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ যানবাহনগুলো লাগামহীনভাবে যেন চলতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।

এছাড়াও বলা যায়, চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই, নেশাগ্রস্ত ও লাইসেন্সবিহীন কোনো চালক যেন মহাসড়কে নামতে না পারে এজন্য তদারকি বাড়াতে হবে। যানজটের আশঙ্কা আছে এরকম ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যও বন্ধ করতে হবে।

অতএব, এবারের ঈদযাত্রায় যানজট ও দুর্ঘটনা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক। আমরা চাই না, সড়কে আর কোনো তাজা প্রাণ অকালে ঝরে পড়ুক কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করুক। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা যেন নিরাপদ ও আনন্দদায়ক এর পরিবর্তে বিষাদে রূপ না নেয়। এক্ষেত্রে ব?্যক্তি সচেনতার পাশাপাশি এসব দুর্ঘটনা রোধে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। নিতে হবে যথোপযুক্ত ব?্যবস্থা। সর্বোপরি, সব দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হোক- এই প্রত?্যাশা করছি।

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত