বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। তাই স্বাধীন রাষ্ট্রে সবার কথা বলার স্বাধীনতা যেমন আছে, আছে চলাফেরার স্বাধীনতা, কাজকর্মের স্বাধীনতা এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।
যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্র বিশেষ দেশের সব জনগণ স্বাধীনতা সব সময় ভোগ করতে আগেও পারেনি বর্তমানেরও পারছে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ঠিকই স্বাধীনতা ভোগ করছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দেশের উন্নয়ন ততটা না হলেও ব্যক্তি বিশেষ অনেকেরই আকাশচুম্বী উন্নয়ন হয়েছে। অনেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ তেলবাজির মাধ্যমে, কেউ রাজনীতির অপব্যবহার করে আবার কেউ দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের উন্নয়ন করেছেন। দুর্নীতিকৃত অর্থ দেশে থাকলেও কথা ছিল, কিন্তু সেটিও পাচার করে দিয়েছে বিদেশে। যাক, কথা হলো বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে ভাঙ্গা গড়ার দুনিয়াতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোরও ভাঙ্গা গড়া চলছে সমান্তরালভাবে। প্রতি বছরই কোনো না কোনো দল ভেঙছে আবার নতুন নতুন দলেরও অবির্ভাব হয়েছে। প্রতি বছরই দুয়েকটা নতুন দল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। তার মধ্যে অধিকাংশই কর্মী শূন্য দল বলা যায়।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ৫৫টি এবং অনিবন্ধিত বা অপেক্ষমান রাজনৈতিক দলের সংখ্যাও কম নয়। প্রায় ৩০-এর অধিক। সাধারণ জনগণের প্রশ্ন এতো রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব কেন? কেনইবা কর্মী শূণ্য এসব দল প্রতিষ্টা হচ্ছে? আমারও ঠিক একই প্রশ্ন। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই প্রোপ্রাইটারশীপ, কয়েকটি পার্টনারশিপ আর কয়েকটি আছে লিমিটেড কোম্পানির মতো।
এই কর্মী শূন্য রাজনৈতিক দলগুলো কিসের জন্য বা কাদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে? তারা কার জন্য রাজনীতি করছেন? রাজনীতি তো হওয়া উচিত জনগণের জন্য, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পার হলেও জনগণের অধিকার কি আজও প্রতিষ্ঠা হয়েছে? জনগণ কি তাদের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, নিরাপদে বসবাস করার অধিকার এবং চলাফেরার অধিকার কি পেয়েছে? রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের যে ৫টি মৌলিক অধিকার রয়েছে তার কোনটি সঠিকভাবে পাচ্ছে? সব কয়টি দল এবং সব নেতানেত্রীই বলেন আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করছি। আসলে সবই বাওতাবাজি। বর্তমানে যে কয়টি রাজনৈতিক দল সামনে সারিতে আছে বলতে গেলে তাদের ৯০-৯৫ শতাংশ নেতাকর্মীই নিজের পেট নীতিতে বিশ্বাসী।
জনগণের জন্য যে খুব একটা কাজ করছে এমন নয়। আমাদের দেশের নেতাকর্মীরা অনেকে বলেন আমি এই নেতা, ওই নেতার আদর্শের সৈনিক। সত্যি বলতে তারা যে নেতার আদর্শের সৈনিক সেই নেতার আত্মজীবনীই জানেন না।
নেতার আত্মজীবনী নিয়ে কখনও দু’চার লাইন পড়েছে? তাহলে সে কেমন করে বলে আমি অমুক নেতার আদর্শের সৈনিক? আপনি যার আদর্শের সৈনিক, যার আদর্শ অনুসরণ করছেন, তার আত্মজীবনী পড়ুন। তাকে ভালোভাবে জানুন। তারপর বলুন আপনি কোন নেতার আদর্শের সৈনিক।
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন আর আদর্শের রাজনীতি নেই। যা আছে তা হলো ধোঁকাবাজি, চাঁদাবাজি, সস্ত্রাসী, ভণ্ডামি, সেটা ধর্মীয় রাজনীতি হোক আর অধর্মীয় রাজনীতি হোক বা ডান বাম যাই হোক।
যে দেশের বেশিরভাগ নেতার রাজনীতিই হচ্ছে তার একমাত্র আয়ের উৎস, সে দেশের নেতা আবার আদর্শের রাজনীতি করে কীভাবে? সে তো ধান্দার জন্যই রাজনীতি আঁকড়ে ধরেছে। আমি রাজনৈতিক কর্মীদের বলব যখন দেখবেন আপনি যে নেতার পথ অনুসরণ করছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতাই নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই, রাজনীতিই তার একমাত্র ভরসা। আমি বলব সে একজন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং মিথ্যাচার নেতা। আপনি তার পেছন থেকে সরে পড়ুন। কারণ সে আপনাকে ভালো কোনো রাজনীতি শিখাবে না, শিখাবে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, মিথ্যাচারিতা। অতএব তার কাছ থেকে আপনার ভালো কিছু শেখার বা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে নিজেই চাঁদাবাজি, সস্ত্রাসী, ভণ্ডামিতে নেমেছে। সে আদর্শের সৈনিক বা আদর্শের রাজনীতিবিদ হয় কি করে? তার রাজনীতি কখনও জনগণের কল্যাণের রাজনীতি হতে পারে না। আমরা যাদের আদর্শ মুখে লালন-পালন করি বাস্তবে কি উনাদের রাজনীতি এখন আছে? উনাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ওনাদের রাজনীতি বিলুপ্তি হয়ে গিয়েছে। তাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ সত্যিকার কোন আদর্শের রাজনীতি করতে হলে আগে রাজনীতি শিখতে হবে। যে নেতার পথ অনুসরণ করবেন তার আত্মজীবনী পড়তে হবে এবং জনগণের কল্যাণে কি করনীয় তা শিখতে হবে। তখন বলতে পারবেন আমি আদর্শের রাজনীতি করি। আদর্শের রাজনীতি করতে হলে সাধারণ জনগণের সাথে মিশতে হবে।
তাদের সুখ দুঃখের কথা শুনতে হবে। তাদের দুঃখকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তখনই হবে আপনার রাজনীতি জনগণের কল্যাণের রাজনীতি, আদর্শের রাজনীতি। হাজার দল করে কোনো লাভ নেই। যদি নীতি, আদর্শ আর ভবিষৎ পরিকল্পনা না থাকে। আগে সমাজে নিজেকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তারপরে রাজনীতি করতে হবে। আসুন আমরা জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করি। আদর্শের রাজনীতি করি। জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি। তখনই দেশ এবং জাতির কল্যাণ সাধিত হবে।