ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উপকূলের বাঁধ সংস্কার ও পানিবদ্ধতা নিরসন করতে হবে

উপকূলের বাঁধ সংস্কার ও পানিবদ্ধতা নিরসন করতে হবে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত শুক্রবার উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস ও রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। নদনদীতে পানি বেড়ে ছয় জেলায় বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার মধ্যে রয়েছে। নিম্নচাপের শক্তি এতটাই ছিল যে, সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে নোঙ্গর করা চারটি লাইটারেজ জাহাজ নোঙর ছিঁড়ে সমুদ্র উপকূলে আছড়ে পড়ে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে গেছে। রাজধানীতে মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সারাদিন ও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় কোমর পর্যন্ত পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, রাজধানীতে বৃষ্টির পানি ধারনক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বৃষ্টি হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা দ্রুত নিষ্কাশন সক্ষমতা তার রয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উপকলীয় অঞ্চলের মানুষ যেমন দুর্ভোগে পড়েছে, তেমনি রাজধানীবাসীরও অশেষ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বর্ষা শুরু হতে আর ১০ থেকে ১২ দিন বাকি। মৌসুমের প্রায় শুরুর দিকে নিম্নচাপ সৃষ্টি এবং ভারি বৃষ্টিপাত এই বার্তা দিচ্ছে যে, সামনে আরও নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে থাকে উপকূলীয় জেলার অধিবাসীরা। বাংলাদেশে ১৯টি উপকূলীয় জেলা রয়েছে।

এগুলো হলো- কক্সবাজার, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, গোপালগঞ্জ, যশোর, ঝালকাঠি, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী।

বর্ষা ও ঝড়-ঝঞ্ঝার মৌসুমে এসব জেলার নিম্নাঞ্চল সবসময়ই ঝুঁকিতে থাকে। এ সময় এ অঞ্চলের মানুষের দিন আতঙ্কে কাটে। জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা থেকে রক্ষার জন্য প্রায় সবগুলো জেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এসব বাঁধ দিন দিন কার্যকারিতা হারাচ্ছে। জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন, সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি, দুর্নীতির কারণে দুর্বল বাঁধ নির্মাণ, নিয়মিত সংস্কার না করা ইত্যাদি কারণে বাঁধগুলো বালুর বাঁধে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে এগুলোর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ প্রয়োজন, তা করা হচ্ছে না। সরকার এসব বাঁধ পুননির্মাণ ও সংস্কারে বছরে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব সরকারের। শুধু পুস্তকীয় সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দিলে হবে না, প্রতিনিয়ত মানুষ যেসব বাস্তব সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত