রোম ফেরত ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি ও আতঙ্কের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার আগে ঢাকার হযরত আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে একটি বার্তা আসে। বোমা হামলার হুমকি সম্বলিত সেই বার্তাটি আসে একটি হোয়াইটসআপ নম্বর থেকে। নম্বরটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে পাকিস্তানে। গতকাল বুধবার বিকালে বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ( বেবিচক) এর চেয়ারম্যান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে প্রথম বার্তা আসে। সেই বার্তাটি আসে একটি হোয়াইটসআপ নম্বর থেকে। এরপর সেটি প্রথম জানিয়ে দেয়া হয় বিমান বাহিনীর প্রধানসহ সব ইউনিটকে। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটা আসে পাকিস্তান থেকে। প্রথম মেসেজ আসে এপিবিএনের কন্ট্রোল রুমে। তিনি আরো বলেন, যিনি মেসেজটা দিয়েছিলেন আমরা তার সঙ্গে অনেক চ্যাটিং করেছি। উনি দুটি লাগেজের কথা জানিয়েছিলেন। পরে ওনাকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ভোর ৪টা ৩৭ মিনিটের দিকে হোয়াটসআপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজ পাওয়ার পর আমরা এয়ারক্রাফটগুলোকে পর্যায়ক্রমে অবতরণ করিয়েছি। তারপর এটাকে করিয়েছি। প্রতিটি যাত্রীর শরীরে বডি ক্যামেরা লাগিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম। পরে তাদের নামিয়ে টার্মিনালে নিয়ে আসা হয়। এরপর লাগেজগুলো চেকের পর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুটি ব্যাগেজকে আমরা সন্দেহ করেছিলাম। প্রতিটি ব্যাগ স্ক্যানিং করেছি। তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। বড় বড় প্যালেটের ভেতর সব ব্যাগ ও এয়ারক্রাফটের ভেতরেও চেক করা হয়েছে তবে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। এর আগে বিজি-৩৫৬ নম্বর ফ্লাইটটি রোম থেকে ঢাকায় আসার পথে বোমা হামলার হুমকি পায়। ফ্লাইটের আড়াইশ’ যাত্রীর নিরাপত্তায় তড়িৎ পদক্ষেপ হিসেবে প্লেনটি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে জরুরি অবতরণ করানো হয়। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরো বলেছেন, ‘আমাদের আভিযানিক কার্যক্রমের সময় বিমানবন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। আভিযানিক ওই কার্যক্রমের সময় কেউ যেন বিশৃঙ্খলা না ঘটাতে পারে সেজন্য আমরা সতর্ক ছিলাম।’ বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিস্ফোরক থাকার তথ্য প্রথম আসে এপিবিএন এর কাছে। সেখান থেকে অপারেশন কন্ট্রোল রুমে জানানো হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু করি। আমি এয়ার চিফকে বিষয়টি অবহিত করার পরপরই সেখান থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। এছাড়াও অ্যাভসেকসহ বিমানবন্দরে কর্মরত অন্য সব সংস্থা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।’ এ বিষয়ে এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর চৌধুরী আরো বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য দিয়ে আমাদের একদিকে ব্যস্ত রেখে অন্যদিকে কেউ যেন কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, সে কারণে পুরো বিমানবন্দরজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি ছিল। এ সময় ইমিগ্রেশন-কাস্টম সবকিছুই সচল ছিল। ওঠানামাও স্বাভাবিক ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের এই বিমানবন্দরকে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও কোনো কিছু পাওয়া যায়নি, তারপরও ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ব্যবস্থা রাখবো।’ প্রসঙ্গত, বুধবার (২২ জানুয়ারি) রোম থেকে আসা বাংলাদেশি এক ফ্লাইটে বিস্ফোরক দ্রব্য আছে বলে তথ্য আসে। পরে ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। পরবর্তীতে বিমানবন্দরে কর্মরত নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা যাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনেন। সেই সঙ্গে বিমানে তল্লাশি চালানো হয়। দীর্ঘ প্রায় ছয় ঘণ্টা এই অভিযান চললেও কিছুই পাওয়া যায়নি।