ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দরকষাকষির সুযোগ রেখে ৩৫% শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের

দরকষাকষির সুযোগ রেখে ৩৫% শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, আগের মতো এবারও শুল্ক আরোপ নিয়ে দর-কষাকষির সুযোগ রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এও বলেছেন, আগামী আগস্টের মধ্যে চুক্তিতে পৌঁছাতে যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি নমনীয় হতে পারে।

জানা গেছে, ৩ মাস ধরে আলোচনার পর বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দেন তিনি। তার ঘোষণায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে। এর আগে ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত না। ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা ঠিক হবে। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে। বৈঠকের পর আমরা বুঝতে পারব। কারণ, যেটা দিয়েছে, সেটা ঠিক অফিসিয়াল। চিঠি তো এরইমধ্যে ইস্যু হয়ে গেছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন। এটা ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। চিঠি তো বহু আগে দিয়ে দিতো, ৩৫ শতাংশ। এটা আবার ১৪টা দেশের জন্য বলছে একই। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে, সেজন্যই তো ইউএসটিআর’র সঙ্গে কথা বলা। এটা ফাইনাল (চূড়ান্ত) নয়।

এদিকে বাংলাদেশ পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আজকে বৈঠক হবে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বাণিজ্য উপদেষ্টা বর্তমানে ওই বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। একটি গণমাধ্যমকে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেখানে ভালো কিছু আশা করছে বাংলাদেশ।

গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া একটি পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। তারা এরমধ্যেই মার্কিন প্রশাসনের বাণিজ্য ও শুল্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বুধবার (৯ জুলাই) আরেক দফা নির্ধারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।’ মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান দ্বিপক্ষীয় আলোচনা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘ঢাকা ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি শুল্ক চুক্তির প্রত্যাশা করছে, যা আমাদের বিশ্বাস, উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে।’

ড. ইউনূসকে চিঠিতে যা লিখলেন ট্রাম্প : চূড়ান্ত শুল্কের পরিমাণ উল্লেখ করে ১৪টি দেশের সরকার প্রধানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনো পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্কই আরোপ করা হবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দয়া করে বুঝুন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের দেশের সঙ্গে আপনার দেশের যে বড় বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়, এই হার আসলে তার চেয়ে অনেক কম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, যদি বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে পণ্য উৎপাদন করে, তাহলে সেই পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না। বরং আমরা দ্রুত, পেশাদারভাবে এবং নিয়ম মেনে সব অনুমোদন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব, অর্থাৎ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’

চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, টোকিও ও সিউলের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালয়েশিয়াসহ ১৪ দেশের ওপর ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর কথা বলা হয়েছে। ১ আগস্টের সময়সীমা সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বলব, সময়সীমা ঠিকঠাক রয়েছে, তবে একেবারে শতভাগ নয়।’ চিঠিগুলোই কি তার চূড়ান্ত প্রস্তাব জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একে চূড়ান্ত বলব। কেউ যদি ভিন্ন প্রস্তাব দেয় এবং সেটা আমার ভালো লাগে, তবে আমরা সেটা করব।’

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল। গত সোমবার বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ছাড়া মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত