ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভারতের ৭৭ ড্রোন ধ্বংস ২৫ সেনা নিহত

ভারতের ৭৭ ড্রোন ধ্বংস ২৫ সেনা নিহত

জম্মু কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় সংঘাত। হামলা পাল্টা হামলার মধ্যেই ভারতের মোট ৭৭টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির নিরাপত্তা সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দাবি করা হয়েছে, ৮ মে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৯টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। তারপর আরও ৪৮টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ড্রোনগুলো নজরদারি এবং পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় আগ্রাসনের যথাযথ জবাব দিচ্ছে। এদিকে পাকিস্তান গত বুধবার চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের দুইটি সামরিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে অন্তত দুইটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় হস্তক্ষেপ না করার ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না যেখানে তার কোনো স্বার্থ নেই। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেডি ভ্যান্স বলেন, আমরা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে পারি না, তবে যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির পথ বেছে নিতে পারে।

২৫ ভারতীয় সেনা নিহতের দাবি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর : পাকিস্তানের কয়েকজন কর্মকর্তার দাবি, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) গুলিবিনিময়ের সময় তাদের বাহিনী কয়েক ডজন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করেছে। তারা সেনা নিহতের সঠিক সংখ্যা জানানো কঠিন বললেও বিবিসি-কে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, তার ধারণা, গত কয়েকদিনের লড়াইয়ে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। এর আগে এ সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছিলেন, নিহত ভারতীয় সেনার সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ভারতীয় সেনা নিহতের দাবি করার পাশাপাশি লড়াইয়ে পাকিস্তানের সেনা নিহতের কথাও স্বীকার করেন। তবে আসিফ বলেন, এ সংখ্যা কত তা তিনি জনেন না। খাজা আসিফের কথায়, ‘ভারতই প্রথম গোলাগুলি শুরু করে এবং ভারতের দুটি ব্রিগেড সদর দপ্তরেও হামলা হয়েছে।’ তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই দুই দাবিই প্রত্যাখ্যান করেছে। বিবিসি এই দাবিগুলোর কোনওটাই নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিবিসিকে জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাদের কাছে নেই। এর আগে এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, ভারতীয় প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলোর ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করা হয়েছে এবং কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।

চীনের যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের দুই যুদ্ধবিমান ভূপাতিত : পাকিস্তান গত বুধবার চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের দুইটি সামরিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। মার্কিন দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে। এ ব্যাপারে জানাতে ভারতের বিমানবাহিনীর এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে অন্তত দুইটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালায় ভারত। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তান। সে রাতে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করে পাকিস্তান। নিজেদের যুদ্ধবিমান হারানোর কথা যদিও স্বীকার করেনি ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, ভূপাতিত করা ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে অন্তত একটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল। এদিকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় হস্তক্ষেপ না করার ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে না যেখানে তার কোনো স্বার্থ নেই।

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেডি ভ্যান্স বলেন, আমরা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে পারি না, তবে যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতির পথ বেছে নিতে পারে। ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারত আক্রমণ করলে পাকিস্তান জবাব দেয়। উভয় দেশেরই ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা উচিত। পাকিস্তান-ভারতযুদ্ধ যেন পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত না হয়। যদি তা হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হবে বলেন জেডি ভ্যান্স।

সামরিক চেকপোস্ট গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাল্টাপাল্টি দাবি ভারত-পাকিস্তানের : কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাদের দাবি, ভারত বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে। জবাবে পাল্টা গুলি চালিয়ে ভারতের কয়েকটি সেনা ‘চেকপোস্ট’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। অন্যদিকে, ভারত দাবি করেছে, বিমান হামলায় পাকিস্তানের একটি সামরিক পোস্ট ধ্বংস করে দেয় হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পৃথক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও এনডিটিভি। পাকিস্তানের একটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের সেনারা বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে। জবাবে পাল্টা গুলি চালিয়ে ছয়টি স্থানে ভারতের সেনা চেকপয়েন্ট ধ্বংস করেছে পাকিস্তানি সেনারা। তবে কোন চেকপোস্ট বা কখন দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

অন্যদিকে ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানের গুলিবর্ষণের জবাবে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় একটি পাকিস্তানি সামরিক পোস্ট ধ্বংস হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক পোস্টে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ৮ ও ৯ মে মধ্যরাতে সমগ্র পশ্চিম সীমান্তে ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক আক্রমণ চালায়। জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানি সেনারা অসংখ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ড্রোন হামলা কার্যকরভাবে প্রতিহত করা হয়েছে এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জাতির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্ত ঘৃণ্য পরিকল্পনার বল প্রয়োগের মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ দাবি করে। তবে দুই পক্ষই এর কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীর হামলার পর সংঘর্ষের মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এরইমধ্যে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসলামাবাদ হামলার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার খবর অস্বীকার করেছে। এছাড়া ভারতের হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার পরামর্শ : বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলোকে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই তথ্য জানিয়েছেন। খাজা আসিফ সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সগুলো ক্ষেপণাস্ত্র বা আকাশে ছোড়া গুলি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এর ফলে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি হতে পারে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা কয়েক দিনের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমায় তাদের বিমান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

এমিরেটস এয়ারলাইন্স জানিয়েছে তারা ১০ মে পর্যন্ত পাকিস্তানে বিমান চলাচল স্থগিত করছে। এদিকে, লুফথানসা এয়ারলাইন্স এই সপ্তাহের শুরুতে জানিয়েছে যে তারা ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ পাকিস্তানের আকাশসীমায় বিমান চলাচল স্থগিত রাখছে।

শুধুমাত্র ইসরায়েল ছাড়া ভারতের পাশে আজ কেউ নেই- পাকিস্তান : পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন, ভারতের পাশে আজ কোনও দেশ নেই, শুধুমাত্র ইসরায়েল ছাড়া। জাতীয় পরিষদে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ আরও জানান, পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চীন, তুরস্ক ও আজারবাইজান স্পষ্টভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তান সরকার ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব, চীন ও কাতারের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ রাখছে বলেও সংসদকে অবহিত করেন তিনি। এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ৮ ও ৯ মে রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুরো পশ্চিম সীমান্তে আক্রমণ করেছে। ভারতের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ভারত-শাসিত কাশ্মিরের জম্মু, উধমপুর ও পাঞ্জাবের পাঠানকোটে ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যদিও এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ। ভারত-শাসিত কাশ্মিরে কোনো হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মিরে রেড অ্যালার্ট জারি করে এবং বেসামরিক প্রশাসন ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করে, যার ফলে রাতে জম্মু ও কাশ্মিরের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না এবং মানুষ আতঙ্কিত ছিল। এছাড়া শুক্রবার সকালেও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এখনও পর্যন্ত হতাহতের আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

ভারতের পশ্চিম সীমান্তজুড়ে রাতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, দাবি নয়াদিল্লির : পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ড্রোন ও অন্য গোলাবারুদ ব্যবহার করে ভারতের পুরো পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে একাধিক হামলা চালিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এসব হামলা হয়েছে। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতীয় সেনাবাহিনী এ দাবি করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী আরও বলেছে, ড্রোন হামলাগুলো সফলভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে। এর আগে গত রাতে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেন, বিস্ফোরণের সময় চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। শহরে শোনা যায় সাইরেনের শব্দ। এ সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকা। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে পাকিস্তানই এ হামলা চালিয়েছে বলে সন্দেহ করছে ভারতের সামরিক বাহিনী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, পাকিস্তান থেকে জম্মু অঞ্চলের সাতওয়ারি, সাম্বা, রণবীর সিং পুরা ও আরনিয়া এলাকা লক্ষ্য করে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে সেগুলো ধ্বংস করেছে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমছে না। দুদেশের মধ্যে এ উত্তেজনার শুরু ২২ এপ্রিল। সেদিন পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে তা নাকচ করেছে পাকিস্তান। এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালায় ভারত। ওই রাতেই দেশটির পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করে পাকিস্তান। নিজেদের যুদ্ধবিমান হারানোর কথা যদিও স্বীকার করেনি ভারত। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দুই কর্মকর্তা গতকাল রয়টার্সকে বলেছেন, চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে মঙ্গলবার রাতে ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। সেগুলোর মধ্যে অন্তত একটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান। এরই মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধুরী গতকাল বলেন, করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারতের ২৯টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। ড্রোনগুলো ইসরায়েলের তৈরি। এর মধ্যে একটি লাহোরের কাছে এক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চার সদস্য আহত হন।

জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ পর্যায়ে ভারত-পাকিস্তান যোগাযোগ হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত : যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান সাইদ শেখ বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন রাষ্ট্রদূত। পাকিস্তানি এই কূটনীতিক মনে করেন, ভারত-পাকিস্তানের দুই দিনের সংঘর্ষে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা প্রশমিত করার দায়িত্ব ভারতের ওপরই বর্তায়। সিএনএনের পক্ষ থেকে সাইদ শেখের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বর্তমানে কোনো আলোচনা বা সংলাপ চলছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু তারপর যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত হওয়া উচিত।’ আমি মনে করি, জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু তারপর যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত হওয়া উচিত। এই কূটনীতিক মনে করেন, (উত্তেজনা নিরসনে) পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং যেসব উত্তেজনাপূর্ণ কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। সাইদ শেখ বলেন, ‘এখন উত্তেজনা প্রশমনের দায়ভার ভারতের ওপর বর্তায়। সংযম দেখানোর ক্ষেত্রেও তো একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। পাকিস্তানের জবাব দেওয়ার অধিকার আছে। আমাদের দেশের জনমত অনুযায়ী সরকারের ওপর পাল্টা জবাব দেওয়ার (ভারতের হামলার) চাপ প্রবল।’ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো বড় ধরনের সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আরও প্রতিশোধ নেওয়াটা ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠছে। দুই দিনের লড়াইয়ে প্রায় চার ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি উত্তেজনা কমানো এবং সংলাপের পথ খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটন সরাসরি সংলাপের জন্য চাপ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ও ভারত একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো বড় ধরনের সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আরও প্রতিশোধ নেওয়াটা ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠছে। দুই দিনের লড়াইয়ে প্রায় চার ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।

গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর চিরবৈরী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। পেহেলগামের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তবে পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করে এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আমাদের দেখার বিষয় নয় : মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স : ভারত ও পাকিস্তানের নিজেদের মধ্যকার উত্তেজনা নামিয়ে আনা উচিত মন্তব্য করছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই পারমাণবিক শক্তিধর দুই এশীয় প্রতিবেশীকে নিয়ন্ত্রণ করে না এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধ মোটেও ‘আমাদের দেখার বিষয় নয়’। গত বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের ‘দ্য স্টোরি উইথ মার্থা ম্যাককালাম’ অনুষ্ঠানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স এসব কথা বলেছেন। ভ্যান্স বলেন, ‘আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতি শান্ত হোক। তবে এই দেশগুলোকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা বড়জোর এই দেশগুলোকে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারি। তবে আমরা এমন যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না যা মূলত আমাদের দেখার বিষয় নয়। এটা এমন কোনো বিষয় নয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে।’

চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে চাওয়া যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। পাকিস্তানও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ। তবে ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের গুরুত্ব কমে গেছে। ভ্যান্স বলেন, ‘আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতি শান্ত হোক। তবে এই দেশগুলোকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা বড়জোর এই দেশগুলোকে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারি। তবে আমরা এমন যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না যা মূলত আমাদের দেখার বিষয় নয়। এটা এমন কোনো বিষয় নয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে।’

কয়েকজন বিশ্লেষক এবং সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে কূটনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের দিকেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ।

আর সে কারণে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা শুরুর প্রাথমিক সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ দুই দেশ খুব একটা সরাসরি চাপ না–ও দিতে পারে। ভারত-পাকিস্তানকে নিজেদের মতো ছেড়ে দিতে পারে ওয়াশিংটন।

বৃহস্পতিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বড় সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আরও বেশি পাল্টা হামলা ‘ক্রমাগত অনিবার্য’ হয়ে উঠছে। এদিন পাকিস্তান ও ভারত একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার অভিযোগ এনেছে। দুদিনের লড়াইয়ে প্রায় চার ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর চির বৈরী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে এ উত্তেজনা শুরু হয়। পেহেলগামের সে হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তবে পাকিস্তান সে অভিযোগ অস্বীকার করে এবং এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে।

বৃহস্পতিবার ভ্যান্স বলেন, ‘আমাদের আশা, এই পরিস্থিতি যেন আরও বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ না নেয়। ঈশ্বর না করুন, এটি যেন পারমাণবিক সংঘাতে রূপ না নেয়।’ সম্প্রতি ওয়াশিংটন নিয়মিতভাবে দুই দেশের সঙ্গেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি দুই পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানান এবং সরাসরি সংলাপের ওপর জোর দেন। গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, তিনি আশা করেন দুই দেশ পাল্টাপাল্টি হামলা থামাবে। ‘দায়িত্বশীল সমাধান’-এর পথে এগোনোর জন্য দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে- রুবিওকে বললেন শেহবাজ : ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিওর সঙ্গে টেলিফোনে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত