ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পুড়ছে ইসরায়েলের অস্ত্র কারখানা বিমানঘাঁটি

* আবারও ইরানের হামলা, নিহত আরও ৮ * তেলআবিব-নেগেভে হাইপারসনিক হামলা, জ্বলছে হাইফার বিদ্যুৎকেন্দ্র * নেতানিয়াহুর বাড়ি লক্ষ্য করে ৫০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ * তেলআবিবের মার্কিন দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত * যুদ্ধবিরতিকে ‘না’ বলল তেহরান * বহু রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীর বাসভবন বিধ্বস্ত * ইহুদিবাদীদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল ইরান * আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধানসহ নিহত ২২৪ * ইসরায়েলের ৪৪ ড্রোন ও কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত * ইরানের সক্ষমতা অবাক করার মতো, বলছেন বিশ্লেষকরা
পুড়ছে ইসরায়েলের অস্ত্র কারখানা বিমানঘাঁটি

ইসরায়েলের বহু বেসামরিক নেতা ও বিজ্ঞানীর বাসভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বন্দরনগরী হাইফা, তেলআবিব ও নেগেভ বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। গত রোববার রাত ও গতকাল সোমবার সকালে চালানো এসব হামলার পর দাউ দাউ করে জ্বলছে ইসরায়েলের অনেক এলাকা। হামলা হয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনকে লক্ষ্য করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর বাড়ি লক্ষ্য করে অন্তত ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। আঘাত করা হয়েছে ইসরায়েলের অস্ত্র কোম্পানি রাফায়েলের কারখানায়। তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে সরাসরি আঘাত হেনেছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানি হামলায় আক্রান্ত হয়েছে তেলআবিবে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসও; তবে দূতাবাসের বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে গতকাল সোমবার দাবি করেছেন রাষ্ট্রদূত।

বসতি স্থাপনকারীদের ইসরায়েল ছাড়তে বলল ইরান : এখন নিস্তব্ধ, ভূতুড়ে ইসরায়েল; রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। মানুষ নিত্যপণ্য নিয়ে অবস্থান করছেন মাটির নিচে; বাঙ্কারে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল সাইয়েদ অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ইসরায়েল ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল নিশ্চিতভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তিনি জানান, মিলিটারি ও সিকিউরিটি সেন্টার, ডিসিশন মেকিং সেন্টার এবং কমান্ডারদের বাসস্থানগুলোতে হামলা চালানো হচ্ছে; এই হামলা আরও তীব্র হবে। আপাতদৃষ্টিতে সুরক্ষিত বাঙ্কার ও ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও ইহুদিবাদীদের জন্য নিরাপদ নয় বলে জানান তিনি। ইসরায়েলে আঘাত হানার মতো বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র মজুদের কথা জানিয়ে ইরানের সামরিক সূত্র বলছে, ফাত্তাহ-টু, নতুন প্রজন্মের সিজ্জিল ও দুই টন ওয়ারহেডসমৃদ্ধ খুররমশাহর যে মজুদ রয়েছে, তাতে টানা দুই বছর ইসরায়েলে হামলা চালানো যাবে।

কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, হাইফায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ : গত রোববার দিন ও রাতে দফায় দফায় হামলার পর গতকাল সোমবার সকালেও ইসরায়েলে ফের কয়েক ডজন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। আনাদোলু এজেন্সির এক ভিডিওতে হাইফা শহরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের দৃশ্য ধরা পড়ে। এতে হাইফার আকাশ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হতে দেখা যায়। একই ধরনের ভিডিও প্রকাশ করেছে রয়টার্সও। যুক্তরাজ্যের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা অ্যামব্রে জানিয়েছে, হাইফা বন্দরের নিকটবর্তী বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। তারা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা প্রতিহত করার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেছে। এর আগে সেখানে দুটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বলে জানিয়েছে অ্যামব্রে। বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সব স্তর ভেদ করে আঘাত হানছে। ‘আয়রন ডোম’ ইরান থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের দাবি, ইরানি হামলায় হাদেরার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে।

ইসরায়েলজুড়ে লন্ডভন্ড ভবন, নিহত ২০ জনের বেশি : প্যালেস্টাইন ক্রনিকল জানিয়েছে, গত রোববার রাতে পশ্চিমতীরের ইহুদি বসতিগুলো, গোলান মালভূমি, গ্যালিলি ও হাইফা অঞ্চলসহ মধ্য ও উত্তর ইসরায়েলজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন সক্রিয় করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হোম ফ্রন্ট কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। হামলার কারণে দক্ষিণ গোলানে বড় ধরনের আগুন লাগার কথাও জানিয়েছেন তারা। রোববার রাতের হামলায় তেলআবিবের বিধ্বস্ত বহু স্থানের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে আলজাজিরা। দেখা গেছে, ভবনগুলোতে এত তীব্রতার সঙ্গে মিসাইলগুলো আঘাত হেনেছে যে, কিছু ভবন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে; বেশ কিছু ভবন প্রায় মাটির সঙ্গেই মিশে গেছে। ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ফোর্টিনের ভিডিওতে বেশ কিছু ভবন দেখানো হয়, শক্তিশালী মিসাইলের আঘাতে যেগুলো ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ইসরায়েলের মেগান ডেভিড অ্যাডম অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের বরাতে ওয়াইনেট নতুন হামলায় আটজনের প্রাণহানি এবং শতাধিক ব্যক্তির গুরুতর আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেছে, হালকা, মাঝারি ও গুরুতর আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে ভিড় করছেন। এ নিয়ে তিন দিনে ইরানি হামলায় ২০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছে ইসরায়েল। তাদের তথ্য অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। তবে হতাহতের আসল সংখ্যা অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

আইআরজিসির গোয়েন্দাপ্রধানসহ নিহত ২২৪ : এদিকে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে মোট ২২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা, যাদের মধ্যে ৭০ জনই নারী ও শিশু। গত রোববারের হামলায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান এবং আরও দুই জেনারেল নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ইরানের মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুসারে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি বহু বছর ধরে আইআরজিসির কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সংস্থার প্রধান ছিলেন। আইআরজিসির নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাসংক্রান্ত বিষয়ে তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব রেজিস্ট্যান্স অব ইরানের তথ্য অনুসারে, কাজেমি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত ছিলেন।

ইসরায়েলের ৪৪ ড্রোন ও কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত : ইসরায়েলের ৪৪টি ড্রোন ও কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার আহমাদ আলি জানিয়েছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করা ৪৪টি ইসরায়েলি ড্রোন ও কোয়াডকপ্টার গুলি করে নামানো হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, হামলা না থামালে ইসরায়েলকে ‘আরও কঠোর জবাব’ দেওয়া হবে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। এক্ষেত্রে ইসলামি দেশগুলোকে ‘দৃঢ় অবস্থান’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। টেলিফোনে আলাপকালে তিনি উল্লেখ করেছেন, ইরান কোনো সংঘাত শুরু করেনি, বরং ‘দৃঢ়তার সঙ্গে’ ইসরায়েলি হামলার জবাব দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাতে বলল ইরান : যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ভূখণ্ডে একের পর এক ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করতে বলেছে তেহরান। পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এটা করতে হবে বলেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই গতকাল সোমবার এ কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক ইস্যুতে গতকালের পূর্বনির্ধারিত কূটনৈতিক আলোচনা স্থগিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসমাঈল বাকাই আজ এ মন্তব্য করলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনাকে ‘অর্থহীন’ উল্লেখ করে মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই বলেন, আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করতে হবে।

এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পার্লামেন্টে বিল তুলবে ইরান : পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যেতে চায় ইরান। এজন্য দেশটি পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই গতকাল সোমবার এ কথা বলেছেন। মুখপাত্র আরও জানান, তেহরান গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির বিপক্ষে। বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৬৮ সালে সই করা হয়েছে এনপিটি। এখন পর্যন্ত ১৯১টি দেশ এ চুক্তিতে সই করেছে। পাঁচ বছর পরপর দেশগুলো চুক্তিটি পর্যবেক্ষণ করে।

ইরানে আরও দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার : ইরান পুলিশ জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার বৈদেশিক শাখা মোসাদের আরও দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। খবর ইরনার। ইরানের পুলিশ কমান্ডের মুখপাত্র সাইদ মনতাজের আল-মাহদি জানান, পুলিশ তেহরান প্রদেশের রে কাউন্টির ফাশাফুয়েহ এলাকা থেকে এই দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। ইরানি পুলিশ জানায়, এই দুজনের কাছ থেকে ২০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক, ড্রোন চালানোর ২৩টি সরঞ্জাম, লঞ্চার এবং আরও অনেক সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া একটি নিসান পিকআপ ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার দিনের শুরুর দিকে তেহরান প্রদেশের পাশের আলবোরজ প্রদেশের সাভোজবোলাঘ এলাকা থেকে আরও দুই মোসাদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ট্রাম্পের আশা- চুক্তি হবে, রাজি নয় ইরান : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েল চলমান সংঘাত বন্ধে ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে’। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত রোববার সকালে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ইরান ও ইসরায়েলের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত। দুই দেশ চুক্তিতে পৌঁছাবে- যেমনটা আমি ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে করিয়েছিলাম।’ ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘আমি অনেক কিছু করি, কিন্তু কখনও কৃতিত্ব পাই না; তবে জনগণ ঠিকই বোঝে। মেক দ্য মিডল ইস্ট গ্রেট অ্যাগেইন!’ তবে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা নাকচ করেছে ইরান। মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও ওমানকে ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার মুখে তেহরান এখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় রাজি নয়। সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ সম্পর্কে অবগত এক কর্মকর্তা রোববার রয়টার্সকে এই তথ্য জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, কাতার ও ওমানের মধ্যস্থতাকারীদের ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার জবাব পুরোপুরি না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না।

মার্কিনিদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ : ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখায় কর্মীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। এছাড়া কর্মীরা চাইলে তাদের পরিবারের সদস্যদের ইসরায়েলের বাইরে পাঠাতে পারবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। যদিও এ মুহূর্তে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে। কাজেই এখন যদি কেউ ইসরায়েল ছাড়তে চান, তাহলে তার হাতে একমাত্র উপায় হলো স্থলপথে জর্ডানের মতো প্রতিবেশী দেশে যাওয়া। তবে, কর্মীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিলেও দূতাবাসের জরুরি পরিষেবা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদিকে, নিজ দেশের নাগরিকদের আপাতত ইসরায়েল ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া যেসব ব্রিটিশ নাগরিক ইসরায়েলে অবস্থান করছেন, তাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি শান্ত হবে, আশা ম্যাক্রোঁর : চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, ‘আশা করি, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি শান্ত হবে এবং আলোচনার একটি পথ খুলবে।’ ম্যাক্রোঁ আরও বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক অস্থিরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি জানান, রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কানাডায় চলমান জি সেভেন সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ড সফরের সময় ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাত নিয়ে রোববার এসব কথা বলেন।

ইরানের সক্ষমতা অবাক করার মতো, বলছেন বিশ্লেষকরা : যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক কোয়েন্সি ইনস্টিটিউট ফর রিসপনসিবল স্টেটক্রাফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাইটা পার্সি বলেছেন, ইসরায়েলের প্রাথমিক হামলায় একাধিক সামরিক কমান্ডার নিহত হওয়ার পরও ইরানের অবিরাম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রমাণ করে, তেহরানের বাহিনী দ্রুত পুনরায় সংগঠিত হতে সক্ষম। শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের হারানোর পরও ইরানের এই পুনর্গঠন সক্ষমতা ইসরায়েলকেও বিস্মিত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পার্সি বলেন, ‘ইসরায়েলিরা ইরানের পুনর্গঠন সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছিল। ইরানের সামরিক বাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা করে তারা মনে করেছিল, ইরান ভেঙে পড়বে। কিন্তু সেই ধারণা দ্রুত বদলে গেছে।’ এই সমর বিশারদ আরও বলেন, এখন আমরা যা দেখছি তা হলো, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত স্তর ভেদ করতে সফল হচ্ছে। পার্সি সিএনএনকে যখন তার এই মূল্যায়নের কথা বলছিলেন, সেই সময়ই গতকাল সোমবার ভোরের দিকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নতুন ঢেউ নেমে আসে এবং ইসরায়েলের একাধিক স্থানে আঘাত হানে। গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের নজিরবিহীন ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ অভিযানে ইরানের সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, তাদের এলিট রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান এবং একজন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান নিহত হয়েছেন। এই বিশাল ক্ষতির পরও ইরানের পাল্টা আক্রমণের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের নজর কেড়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাইটা পার্সি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত