ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু-করোনার প্রকোপের মধ্যে খুলছে স্কুল-কলেজ

ডেঙ্গু-করোনার প্রকোপের মধ্যে খুলছে স্কুল-কলেজ

একদিকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, অন্যদিকে করোনার সূচনা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩৪ জন। এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন এমন রোগী বরিশাল বিভাগে ১১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৩২ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮ জন, খুলনা বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৬ হাজার ২২২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। এদিকে গত একদিনে সারা দেশে ১৯০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৮৯ জন।

সূত্রমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন- ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

এদিকে চলতি জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গত রোববার দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য বলছে, এসময়ে ১১৩৫ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১৩০ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬১ জন। আর মারা গেছেন ৪ জন। এর মধ্যে গত ৫ জুন একজন, ১৩ জুন দুইজন ও সবশেষ ১৫ জুন করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৯১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩ জনে। সেইসঙ্গে করোনায় দেশে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০৩ জনের। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪ জন। এর ফলে এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিকে মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

সূত্রমতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু’দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত কিডনি রোগীর মৃত্যু : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কিডনি রোগী শফিউল ইসলাম (৭৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকায়। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ওই রোগী পোস্ট অপারেটিভ জটিলতা এবং কিডনি ফেইলিউর নিয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হন। একাধিকবার ডায়ালাইসিস গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন। কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় হাসপাতাল থেকে চলে যান। বাড়িতে ওনার মৃত্যু হয়েছে। কোভিড-১৯ রোগীদের আমরা নিয়মিত তদারকি করে থাকি। সোমবার (১৬ জুন) ফোন দিলে পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১২০ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে নগরের ৭ জন এবং তিনজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, গত ৪ জুন থেকে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ২৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ জন নগরের এবং ৬ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে মাউশির নতুন নির্দেশনা : দেশব্যাপী ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি এবং করোনাভাইরাসের নতুন উপধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত রোববার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং করোনা মোকাবিলায় পাঁচ দফা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। মাউশির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়মিত তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে মাউশি। এই কার্যক্রমের আওতায় আলোচনা সভা, সচেতনতামূলক র‍্যালি, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, পোস্টার তৈরি এবং লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। ‘ডেঙ্গু সচেতনতা : ভবিষ্যতে করণীয়’ শীর্ষক বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

করোনা প্রতিরোধে পাঁচ নির্দেশনা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার আলোকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিম্নোক্ত পাঁচটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ১. হাত ধোয়া : সাবান ও পানি ব্যবহার করে নিয়মিত অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ২. মাস্ক পরিধান : জনবহুল স্থানে গমন এড়িয়ে চলতে হবে এবং বাইরে বের হলে আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। ৩. সামাজিক দূরত্ব : আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে এবং অন্যদের থেকে কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ৪. অপরিষ্কার হাতে মুখ স্পর্শ না করা : অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ৫. সঠিক হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার : হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু, রুমাল অথবা কনুইয়ের ভাঁজ দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে ফেলতে হবে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেছে এবং নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে মাউশি।

খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, করোনা-ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা : ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর খুলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ডেঙ্গু ও করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের মধ্যেই খুলছে এসব প্রতিষ্ঠান, ফলে উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার (১৫ জুন) থেকে প্রথম ধাপে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। এরপর ২২ জুন থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে। মাদ্রাসাগুলোর ছুটি সবচেয়ে দীর্ঘ হওয়ায় সেগুলো খুলবে ২৬ জুন।

এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন কলেজে যায় বাসে করে। এখন চারপাশে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি, পথে কোথাও পানি জমে থাকলেই ভয় হয়। কলেজে ক্লাস শুরু হলেও কীভাবে নিরাপদ থাকবে, এই চিন্তায় আছি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সবচেয়ে বড় বিষয়। স্কুল বন্ধ থাকার সময়টাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কতটা হয়েছে, সেটা নিশ্চিত না হয়েই ক্লাস শুরু হচ্ছে। এতে বিপদের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের এক শিক্ষার্থীর বলেন, ছুটি মাত্র ১০ দিন ছিল। এখন আবার কলেজ খুলেছে, অথচ আশপাশে কোথাও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখি না। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ে, এসব ভাবলে ভয় হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ : অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, কলেজ খুলছে ১৫ দিন ছুটির পর, অন্য প্রতিষ্ঠান ২০ দিন পর। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ও করোনার ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। ফলে অভিভাবকরা সন্তানকে পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। তবে এই প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) পাঁচটি সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। এর মধ্যে রয়েছে- অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, বাইরে ও জনসমাগম স্থলে মাস্ক পরা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, চোখ, নাক ও মুখে হাত না দেওয়া, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা।

মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান জানান, করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্কুল-কলেজের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মশার লার্ভা ধ্বংস করতে ছুটির আগে ও পরে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রেখেছে এবং প্রয়োজনে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক : দেশজুড়ে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এতে প্রতিটি পরীক্ষার কেন্দ্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবিরের সই করা এক জরুরি স্মারকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। একইসঙ্গে কেন্দ্রের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে কেন্দ্রের ভেতরে ও আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং পরীক্ষা শুরুর আগে মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষা কক্ষের আসন বিন্যাস যথাযথভাবে বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে মেডিকেল টিম সক্রিয় রাখতে হবে এবং সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। একইসঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে হবে এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে অভিভাবকদের ভিড় বা জটলা এড়াতে প্রচারণা চালাতে হবে। নির্দেশনায় পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক-পরীক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বোর্ডের প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২৬ জুন শুরু হয়ে চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১১ থেকে ২১ আগ২স্ট পর্যন্ত।

এখনো করোনা চিকিৎসায় আলাদা কোনো ওয়ার্ড চালু করা হয়নি জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেছেন, পরীক্ষার জন্য কিটের সমস্যা ছিল। মাঝখানে করোনা না থাকার কারণে কিটগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। সবগুলো হাসপাতালেরই একই সমস্যা ছিল। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের কিট সরবরাহ করা হচ্ছে। র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট এবং আরটিপিসি দুইভাবেই টেস্ট করার যন্ত্রপাতি আমাদের কাছে আছে। কাজেই আমরা এখন টেস্ট করতে পারব। টেস্ট করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এখনো আলাদা কোনো ওয়ার্ড করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড কোনো ওয়ার্ড এখনো না হলেও আমরা একটি কর্নার নির্ধারণ করেছি।

দু-চারজন রোগী যদি হয় সেখানে রাখব। এরপর আমাদের পদক্ষেপ হচ্ছে- আমাদের একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে। সেখানে এখন অন্য রোগীরা থাকে। রোগী বাড়লে সেটি খালি করে শুধু করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া হবে। তবে আমাদের ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেডিকেডেট ওয়ার্ড আছে। তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হচ্ছে।

একই রকম অবস্থা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও। হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করার জন্য কিট পৌঁছালেও এখনো আলাদা কোনো ওয়ার্ড বা ডেঙ্গুর জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড করা হয়নি জানিয়ে হাসপাতালের ডেপুটি পরিচালক নূরুল ইসলাম বরেছেন, এর আগে যখন করোর ঊর্ধ্বমুখী প্রকোপ ছিল দেশে, তখন আমাদের হাসপাতাল সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে।

ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও তাই। এবার এখনো ডেঙ্গু রোগী কম থাকায় আলাদা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড করা হয়নি। রোগী বাড়লে অবশ্যই করা হবে। প্রয়োজনে শয্যাও বাড়ানো হবে। আর করোনা যেহেতু সংক্রামক সেহেতু এর জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

অন্যান্য রোগীর চাপ বেশি থাকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এখনই করোনার জন্য আলাদা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে না জানিয়ে হাসপাতালটির পরিচালক শফিকুর রহমান বলেছেন, এখনো আমরা কোনো করোনায় আক্রান্ত রোগী পাইনি। আপনারা জানেন অন্যান্য রোগীদের চাপ ঢাকা মেডিকেলের পরেই আমাদের হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি। তাদের সেবা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। তারপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমরা করোনা পরীক্ষা করার জন্য টেস্ট কিট পেয়েছি। কোনো রোগী এলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে আলাদা ডেডিকেটেড ওয়ার্ডও চালু করব। ডেঙ্গুর জন্য আলাদা ওয়ার্ড নেই কেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী মাত্র বাড়তে শুরু করেছে। আমরা অন্যান্য বছরের মতোই ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত রয়েছি।

তবে একেবারেই নাজুক অবস্থা রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পুরান ঢাকার একমাত্র ভরসাস্থল হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ এত বেশি থাকে যে, কোনটা করোনা বা কোনটা ডেঙ্গু অথবা কোনটা ইনফ্লুয়েঞ্জা, তা বোঝা মুশকিল উল্লেখ করে রাজধানীর শনির আখড়া থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী বলেন, এসেছিলাম জ্বর নিয়ে। প্রথমে ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছেন ডাক্তাররা। নেগেটিভ এসেছে। এখন করোনা পরীক্ষা করানোর কথা চিকিৎসকরা বলেছেন। কাল পর্যন্ত কিট ছিল না। আজ (গতকাল) নাকি কিট এসেছে। কিন্তু এখনও কেউ পরীক্ষা করেনি। অপেক্ষা করছি।

জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও। হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদাভাবে ডেঙ্গু কর্নার থাকলেও করোনা রোগীদের জন্য নেই কোনো বিশেষ ব্যবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক বলেন, করোনার যখন দেশব্যাপী ভয়াবহ সংক্রমণ ছিল, তখনো আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছি। এখন যেহেতু কারিগরি সব প্রস্তুতি আমাদের নেই, সেহেতু এখনো পরীক্ষা শুরু হয়নি। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে খুব শিগগিরই আমাদের সব ধরনের সেবা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আমরা সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তবে দেশের সবগুলো বড় হাসপাতালেই করোনা পরীক্ষার কিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগী নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশীদ বরেছেন, ঢাকার প্রায় সবগুলো বড় হাসপাতালের পাশাপাশি রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা, রংপুরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে কিট পাঠানো হয়েছ। সিলেট মেডিকেল থেকে এখনো কেউ কিট নিতে আসেনি, তাই তাদের দেওয়া হয়নি। খুব দ্রুত তারাও পেয়ে যাবে আশা করছি।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়। এরপর দেশে কয়েক দফায় সংক্রমণ বেড়েছে এবং জনস্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি হয়। সরকারিভাবে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম এড়ানোসহ স্বাস্থ্যবিধি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় এসব বিধিনিষেধ অনেকাংশে শিথিল করা হয়। সম্প্রতি দেশে আবারও কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা গেছে। এরপরই আবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত