জুলাই সনদ, বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল সোমবার জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে রাজশাহীতে অবস্থানকালে এ কথা বলেন এনসিপি প্রধান।
এনসিপি জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের স্বীকৃতি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে জুলাই সনদ প্রণয়ন এবং সংবিধানের অংশ হিসেবে ঘোষণার দাবি করে আসছে এবং তা এই মাসের মধ্যেই ঘোষণার দাবি করে তরুণ এই রাজনৈতিক দল। সরকারও এই সময়ের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে পারবে বলে আশা করছে। তবে গণঅভুত্থান দিবস অর্থাৎ আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করবে এনসিপি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট পর্যন্ত জুলাই সনদের জন্য অপেক্ষা করা হবে। আশা করা যায়, সরকারসহ সব পক্ষ এর মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা করবে।
জুলাই সনদ, বিচার ও সংস্কার এবং জুলাই স্মরণে গত ১ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে এনসিপি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের তরফে প্রাথমিক সময় ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ভোট হতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা চলছে’
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা রায় নেমে এসেছিলাম, যে পরিবর্তন আমরা চেয়েছিলাম, সেই পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের যে চাওয়া ছিল, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ। সেটি নিয়েও টালবাহানা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে নতুন বন্দোবস্ত, নতুন দেশ গড়ার লড়াইয়ে যখন মাঠে নেমে এসেছিলাম, বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। সবাই রাস্তায় নেমে এসেছিল। বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতেও আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই যে গণহত্যা হয়েছে, আপনার সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, বাংলাদেশে আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে। সেই সব কিছুর বিচার ছাড়াই কি আমরা নির্বাচনের দিকে যাব? আমাদের অবশ্যই বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারও লাগবে সংস্কারও লাগবে। আমরা পুরোনো সিস্টেমে যেতে চাই না। সংস্কার লাগবে, এমন সংস্কার লাগবে যাতে বাংলাদেশ কেউ কখনও স্বৈরাচার হতে পারে না।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিরাজগঞ্জ শহরের মুক্তির সোপান চত্বরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের সময় যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, সেই ভয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে এই গণঅভুত্থান তৈরি হয়েছে। যারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তারা ভয় করে না, তারা পরোয়া করে না। সুতরাং যারা সেই ভয়ের সংস্কৃতি যারা আবারও ফিরাইয়া আনতে চায় তারা খুব ভুল করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের পদযাত্রায় বিভিন্নভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, কোনো বাঁধা দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও তরুণ প্রজন্ম মানবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে নাহিদ বলেন, আমরা বলছি না অন্ধভাবে আমাদের সমর্থন দেন। যাচাই করুন কারা আপনার পক্ষের কথা বলছে, কারা বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, কারা স্বৈরাচারী হাসিনাকে সরাইছে, কারা এখন হাসিনার জায়গায় বসতে চাইছে না বরং নতুন ব্যবস্থা তৈরি করতে চাচ্ছে, আপনারা সবকিছু বিবেচনা করে নতুন দলে অংশগ্রহণ করুন। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত সিরাজগঞ্জ তৈরি করুন। ’৭২-এর সংবিধানের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনিসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সেই মুজিববাদী সংবিধান, সেই আওয়ামী লীগের সংবিধান, গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করেনি। বাংলাদেশর সমাজ রাষ্ট্রকে বিভাজিত করেছে। বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করেনি। সেই সংবিধানের পরিবর্তন করে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান লাগবে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান এবং ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের কথা থাকবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, এনসিপির মূখ্যসমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারি, মুখ্যসংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্যসমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার, যুগ্ম সদস্য সচিব সাঈদ মুস্তাফিজ প্রমুখ।