অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য যারা দায়ী তারা আমরা সবাই এখানে হাজির। আমরা আসামি। গতকাল বুধবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবং পরিবেশ ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ রক্ষার দায় ও মানুষের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে তার বক্তব্যে উঠে আসে এক আত্মসমালোচনামূলক বার্তা। ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের প্রাচীন কবিরা বলেছিলেন- সমুদ্রের সমস্ত জল যদি কালি হয়ে যেত, বন ভূমির প্রতিটি গাছ যদি কলমে রূপান্তরিত হতো, তবুও আমাদের অপরাধের বিবরণ শেষ করা যেত না। আর সেই অপরাধ আজও চলছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত।’ তিনি সতর্ক করেন, পৃথিবী আজ বহু সংকটের সম্মুখীন যুদ্ধ, প্রযুক্তির অপব্যবহার, ক্ষমতার দম্ভ এই সবই মানুষের সৃষ্ট। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সংকট যেটা এখনও অনেকেই বুঝে উঠতে পারছে না, সেটি হলো প্রকৃতির প্রতিশোধ। তিনি বলেন, ‘এটা প্রকৃতির দোষ নয়- এটা মানুষের দোষ। আমরা প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বদলে বরং তাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছি।’ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংকট এক দৈত্যের মতো আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। সে বলে দিচ্ছে- হয় আমি থাকব, না হয় তুমি। আমরা একসঙ্গে থাকতে পারি না।’ প্লাস্টিক দূষণের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্লাস্টিক এমন এক বস্তু, যার জন্ম আছে কিন্তু মৃত্যু নেই। পৃথিবীর প্রতিটি নদী, সাগর, হ্রদ এখন প্লাস্টিকের আগ্রাসনে বিপর্যস্ত। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতা, জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস- এই তিনটি সংকটই বাড়িয়ে দিচ্ছে শুধু একটি উপাদান: প্লাস্টিক।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দিবস উদযাপন করি, বক্তৃতা দিই, তারপর বাড়ি ফিরে গিয়ে প্রতিদিনকার মতো প্লাস্টিক ব্যবহার শুরু করি। এভাবে চলতে থাকলে এই যুদ্ধে মানবজাতির পরাজয় শুধু সময়ের ব্যাপার।’ ড. ইউনূসের মতে, ‘এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে আমাদের জীবনের ধরন, আমাদের ভোগের পদ্ধতি- সবকিছু বদলাতে হবে। না হলে আমরা ধ্বংসের পথেই এগোচ্ছি।’