ফিফা নারীদের ফুটবল র্যাংকিংয়ে বাহরাইনের অবস্থান ৯২তম আর বাংলাদেশ রয়েছে ১২৮ নম্বরে। ৩৬ ধাপ নিচে থেকে আক্রমণাত্মক ও গোছানো ফুটবল খেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে স্রেফ দর্শক বানিয়ে রাখল যেভাবে খেলল লাল সবুজের মেয়েরা। গতকাল রোববার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামে বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছেন আফঈদা খন্দকাররা। এই জয়ে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে দুর্দান্ত সূচনা পেল বাংলাদেশ। দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের নারী দলের স্বপ্ন ছিল এশিয়ান পর্যায়ের দেশগুলোর মুখোমুখি হওয়া। বাংলাদেশ আদৌ এশিয়ার দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে কি না, সেই পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন আফঈদা খন্দকাররা। সেই সুযোগটা পেয়ে কি দারুণভাবেই না জ্বলে উঠল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
ম্যাচে তহুরা খাতুন করেছেন জোড়া গোল। একটি করে গোল করেছেন শামসুন্নাহার জুনিয়র, ঋতুপর্ণা চাকমা, কোহাতি কিসকু ও মুনকি আক্তার। একটি গোল হয়েছে আত্মঘাতী। এই সাত গোলের মধ্যে দুটি অ্যাসিস্ট করেন মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী।
ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ পুরো অলআউট ফুটবল খেলেছে। বল পজিশনেও সারাক্ষণ এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের ৯ মিনিটে প্রথমে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। মাঝ মাঠ থেকে স্বপ্না রানীর লং বল ধরে বক্সে ঢোকেন শামসুন্নাহার। এরপর বাহরাইনের গোলরক্ষক খুলুদ সালে আবদুল্লাহকে একা পেয়ে বাম পা দুর্দান্ত গোল করেন শামসুন্নাহার।
ম্যাচের ১৫ মিনিটে ঋতুপর্ণার গোলটি ছিল চোখ জুড়ানো। এবারও গোলের কারিগর স্বপ্না রানী। মাঝ মাঠ থেকে স্বপ্নার লং বল ধরে ঋতুপর্ণা বক্সে ঢোকেন। এরপর রংধনু শটে দুর্দান্ত গোল করলেন। বল পাঠিয়ে দেন বাহরাইনের গোলরক্ষক খুলুদ সালে আবদুল্লাহর মাথার ওপর দিয়ে। ২-০ তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এদিন ঋতুপর্ণার একমাত্র ছোট ভাই পার্বণের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। গোলটা নিশ্চয় ছোট ভাইকে উৎসর্গ করেছেন ঋতুপর্ণা। ম্যাচে এরপর গোলের ব্যবধান আরও বাড়তে পারতো। কিন্তু ১৮ মিনিটে ঋতুপর্ণার বাড়িয়ে দেওয়া বল তহুরা পায়ে লাগাতে পারেননি। ২৪ মিনিটে বাহরাইনের গোলরক্ষককে একা পেয়েও মনিকা চাকমা বল তুলে দেন বারের ওপর দিয়ে।
৩৯ মিনিটে কর্ণার থেকে একটি বল দেন ঋতুপর্ণা। সেই বলটি বক্সের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এরপর বাহরাইনের ডিফেন্ডারের পায়ে লাগলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কোহাতি আলতো টোকায় করেন ৩-০। বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তহুরা খাতুন করেন জোড়া গোল। প্রথমে একক চেষ্টায় স্কোরলাইন ৪-০ করেন। এরপর শামসুন্নাহার জুনিয়রের পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন। স্কোর লাইন হয় ৫-০।
দ্বিতীয়ার্ধে বাহরাইন গোল শোধের চেষ্টা করেছে বটে। কিন্তু পারেননি আলনুদ আলমানি। ৫৯ মিনিটে বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বল ক্লিয়ার করেছেন রুপনা। এরপর ৬১ মিনিটে একটি আত্মঘাতী গোল হয়েছে। বাহরাইনের ডিফেন্ডার ৭ নম্বর রাওয়ান আলালির ক্লিয়ার করতে গিয়ে গোল জালে জড়িয়ে দেন।
৬৯ মিনিটে দলে তিনটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। মাঠ থেকে তুলে নেন মনিকা চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও স্বপ্না রানীকে। এদের বদলে নামেন শাহেদা আক্তার রিপা, মোসাম্মৎ সাগরিকা ও মুনকি আক্তার। শেষ দিকে এসে ঋতুপর্ণার বদলি নামেন উমহেলা। বদলিদের মধ্যে মুনকি গোল পেয়েছেন। তিনি ৭৪ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে একাই বক্সে ঢুকে করেন ম্যাচের সপ্তম গোল (৭-০)। যদিও আরেক বদলি সুলতানা ৮৬ মিনিটে দারুণ একটা শট নিলেও সেটি ক্রসবারে লেগে ফেরে।
ম্যাচের শেষ দিকে মেজাজ হারিয়েছেন বাহরাইনের ফুটবলার হেসা আলিসা। শামসুন্নাহার সিনিয়র ট্যাকল করতে গেলে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় দুজন। উঠেই শামসুন্নাহারকে মারতে তেড়ে যান আলিসা। দুজনের মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়। এরপর সতীর্থ ফুটবলার ও রেফারি এসে দুজনের শান্ত করেন। ম্যাচের বাকি সময়ে অবশ্য আর কোনো গোলই হয়নি। বাংলাদেশ মাঠ ছেড়েছে বড় ব্যবধানের জয় নিয়ে।
বাংলাদেশ এবারের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে খেলছে ‘সি’ গ্রুপে। এই গ্রুপের তিন দলের মধ্যে ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের (১২৮তম) পেছনে শুধু তুর্কমেনিস্তান (১৪১তম)। বাহরাইনের (৯২তম) চেয়েও এগিয়ে স্বাগতিক মিয়ানমার (৫৫তম)। বাছাইয়ের আট গ্রুপের সেরা আট দল পাবে মূল পর্বে খেলার টিকিট। বাংলাদেশের জন্য তাই পথটা মসৃণ নয় মোটেও। তবে এই জয় নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ায় চূড়ান্ত পর্বে খেলার আত্মবিশ্বাস যোগাবে বাংলাদেশের। মূলত এশিয়ান দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বাংলাদেশের লড়াইয়ের শুরুটা মে মাসে। ওই সময় জর্ডানে গিয়ে বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে খেলে ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের সঙ্গে। যেখানে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে করে গোলশূন্য ড্র। আর জর্ডানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ২-২ গোলে ড্র করে। শক্তিশালী এই দুই দলের সঙ্গে ড্রয়ের আত্মবিশ্বাস যে এই ম্যাচে দারুণভাবে কাজে দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।