ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পটিয়ার ওসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম

অচল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক
পটিয়ার ওসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম

দুই দফা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গতকাল চট্টগ্রামের পটিয়া থানা ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তারা চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে পটিয়া বাইপাস এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সদস্যরা রয়েছেন।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১১টায় পটিয়া থানা-পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৯ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে উভয় পক্ষ। তবে নেতা-কর্মীদের দাবি, পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। পুলিশ বলছে, নেতাকর্মীরা ‘মব’ সৃষ্টি করছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা থানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের একটি অংশ মহাসড়ক অবরোধ করেছে। তারা মহাসড়কের ওপর বসে স্লোগান দেয়। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আন্দোলনকারী পক্ষের সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। প্রথম দফায় এ সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় নেতা আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী। অপর দিকে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূরও চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এসব নিয়ে উত্তেজনার এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবার সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয়জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

খণ্ড খণ্ড মিছিলে এসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখানে স্লোগান দিয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণ দাবি করেন তারা। বাইপাস সড়কে পটিয়া মডেল মসজিদের সামনে মহাসড়কে অবস্থান করছেন নেতাকর্মীরা। সেখানে আন্দোলনকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। অবরোধের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তবে পরীক্ষার্থী ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, যান চলাচল করতে না পারায় অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। বিকেল ৪টার দিকে আবদুর রহমান নামের এক বাসচালক জানান, বেলা ১১টা থেকে আটকে আছেন। পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন তিনি। বিক্ষোভের একপর্যায়ে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ। তিনি বলেন, ওসি জায়েদ নূরের অপসারণ না হলে তারা সড়ক ছাড়বেন না। শুরুতে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেও পরে তিনি অপসারণের আগপর্যন্ত তারা সরবেন না বলে ঘোষণা দেন। বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস, পটিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব আসে। তারা আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলনকারীরা জানান, ওসির অপসারণ আদেশ এলে তারপর তারা সরবেন।

এ বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, ‘থানায় সে সময় সাতজন রিমান্ডের আসামি ছিল। তারা ছাত্রলীগ কর্মীকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে আসেন। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তারা থানার ভেতরে ঢুকে চড়াও হয়ে পড়েন।’ পুলিশের হামলার বিষয়ে ওসি বলেন, আইনের মধ্যে থেকে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে।’ পুলিশ সূত্র জানায়, ওই ছাত্রলীগ কর্মীর নাম দীপঙ্কর দে (২৯)। তিনি রাঙামাটি জেলার বনরূপা বাজার এলাকার মৃত গৌরাঙ্গ দে এর ছেলে। তবে তাদের পৈতৃক নিবাস পটিয়ার সুচক্রদন্ডি ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। তাকে ৫৪ ধারায় (সন্দেহজনক হিসেবে) আদালতে পাঠানো হয়েছে আজ বেলা ৩টায়। উল্লেখ্য, ১৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পর্যটনসহ বিভিন্ন কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক। দেশের বৃহত্তম পর্যটন শহর কক্সবাজার, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যাতায়াতের প্রধান সড়ক হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। পর্যটকের পাশাপাশি পণ্যবাহী গাড়িও চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। সওজের মতে, এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ হাজার ছোট-বড় গাড়ি চলাচল করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি হাজারো পর্যটক এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত