ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল রোববার যখন নিজ কার্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে মঞ্চে দাঁড়ালেন, তখন দেশের জনগণের উদ্দেশে হিব্রু ভাষায় যুদ্ধের সর্বশেষ নাটকীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি। এর পরিবর্তে নেতানিয়াহু ইংরেজিতে ভাষণ দেন। তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে কথা বলেন এবং তাঁর প্রশংসা করেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় বোমা হামলা চালিয়েছে।
এ সময় নেতানিয়াহুর কণ্ঠে বিজয়ের উচ্ছ্বাস কিংবা মুখের হাসি থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইরান ইসরায়েলের জন্য হুমকি তৈরি করছে—এ বিশ্বাসে আচ্ছন্ন থেকে নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন। ১৫ বছর ধরে নেতানিয়াহু তাঁর মার্কিন মিত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, শুধু সামরিক হামলার মাধ্যমে এবং শুধু মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা সম্ভব।
নেতানিয়াহুর ভাষায়, ট্রাম্পের এ সাহসী পদক্ষেপ ইতিহাস বদলে দেবে। আর এ জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে তিনি নিজেকেও অভিনন্দন জানাতে পারেন। কারণ, তিনি এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মনোভাব বদলাতে পেরেছেন, যিনি বিদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে প্রচার চালিয়েছিলেন। এমনকি ট্রাম্পের সমর্থকেরা ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে জড়ানোর বিরোধিতাও করেছিলেন। এ বিষয়ও উল্লেখ্য, ইরান কত দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে বা এ নিয়ে আদৌ কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না, সে বিষয়ে ইসরায়েলের মূল্যায়নকে সমর্থন করেনি ট্রাম্প প্রশাসনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মাত্র ১০ দিন আগে শুরু হওয়া এ সংঘাতজুড়ে ইসরায়েল সরকার ও সেনাবাহিনী বারবার জোর দিয়ে বলেছে, তারা একাই ইরানের হুমকি মোকাবিলা করতে সক্ষম। তবে এটা কারও অজানা ছিল না যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এমন ভয়ংকর অস্ত্র আছে, যা ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো, বিশেষ করে পর্বতের গভীরে স্থাপিত ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করতে পারে। গতকাল রাতে ইরানের যেসব পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলা হয়েছে, সেগুলো সত্যিই যদি অচল হয়ে যায়, তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তাঁর যুদ্ধের মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে ঘোষণা দিতে পারবেন, যা এই সংঘাতকে হয়তো সমাপ্তির কাছাকাছি নিয়ে যাবে।