একদিকে বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য, অন্যদিকে, তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন মুসলিম অভিবাসী। নিউইয়র্কের রাজনীতিতে এখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধনী-নির্ভর, জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিপরীতে একটি প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্মের প্রবক্তা জোহরান মামদানি। আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন- এই ঘোষণা দিয়ে মামদানি স্পষ্ট করেছেন যে তার রাজনীতি কেবল বিকল্প নয়, বরং ট্রাম্পীয় নীতিতে সরাসরি আঘাত। একাধারে প্রগতিশীল, মুসলিম, অভিবাসী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে উঠে আসা এই তরুণ রাজনীতিক নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দোরগোড়ায়। এরই মধ্যে ট্রাম্প নিজে গত বুধবার তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জোহরান মামদানিকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি একজন ‘পাগলাটে কমিউনিস্ট’। আসুন জেনে নিই মামদানি কেন ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ হয়ে উঠেছেন।
ব্যক্তিগত সম্পদ বনাম জনতার সমর্থন : ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক পরিচিতির বড় অংশ জুড়ে আছে তার বিপুল সম্পদ ও মিডিয়া উপস্থিতি। ট্রাম্পের সম্পদ যেখানে বিলিয়ন ডলারের, মামদানি সেখানে স্বচ্ছ ও সীমিত আর্থিক প্রোফাইলের প্রতিনিধি। তার সর্বোচ্চ ৩ লাখ ডলারের সম্পদ, যার মধ্যে রয়েছে উগান্ডায় চার একর জমি। তার আয়ের প্রধান উৎস নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির বার্ষিক বেতন ও অতীতের র্যাপার পরিচয় থেকে প্রাপ্ত ক্ষুদ্র রয়্যালটি। কোনো বড় ব্যবসা বা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নেই। মামদানির রাজনৈতিক মূলধন হলো মানুষের আস্থা। এরই মধ্যে ৭০ লাখ ডলারেরও বেশি অর্থসংগ্রহ করেছেন ১৬ হাজারের বেশি সাধারণ দাতার কাছ থেকে, যাদের অধিকাংশই নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
আদর্শগত ব্যবধান : মামদানি চান- বিনা ভাড়ার গণপরিবহন, বাড়িভাড়ার সীমা নির্ধারণ, ধনীদের ওপর বেশি কর ও বৃহৎ সামাজিক আবাসন প্রকল্প। এসবই ট্রাম্পের বাজারমুখী, করছাড় ও কড়া আইনশৃঙ্খলা নীতির পুরো বিপরীত। এছাড়া, মামদানি অভিবাসীদের অধিকার, ইসলামবিদ্বেষবিরোধী নীতি ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপবিরোধী অবস্থানের পক্ষে, যেখানে ট্রাম্প বরাবরই কট্টর ইসরায়েলপন্থি এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের প্রবক্তা। মামদানির রাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ, অভিবাসীদের অধিকার রক্ষা ও সংহতির বার্তা। অন্যদিকে, ট্রাম্পের রাজনীতি বহিষ্কার, সীমান্ত নিরাপত্তা ও প্রগতিশীল সংস্কারগুলোর বিপরীতে।
নীতিগত থেকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব : এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কেবল নীতিগত নয়, ব্যক্তিগতও। এরই মধ্যে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ রাজনীতিকেরা মামদানিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে উঠেপড়ে লেগেছেন। মৃত্যু হুমকি, ইসলামভীতি ও এখন দেশচ্যুতির দাবি- এটাই ট্রাম্প-যুগের রাজনীতির ফল, বলেন মামদানি। এই হামলা কেবল আমার ওপর নয়, নিউইয়র্কের অন্তর্ভুক্তিমূলক মূল্যবোধের ওপর।
একবিংশ শতাব্দীর দুই মডেল : ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র যেখানে কর্পোরেট স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে, মামদানির দর্শন সেখানে শ্রমজীবী, অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ায়। এ যেন একবিংশ শতাব্দীর দুই পরস্পরবিরোধী রাজনীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা। মামদানি এখনও নির্বাচিত হননি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে, কিন্তু তার রাজনৈতিক উপস্থিতি, তৃণমূল সংযোগ ও নীতিগত স্বচ্ছতা মার্কিন রাজনীতিতে বিকল্প নেতৃত্বের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে।