ইরানি হামলার ভয়াবহতা ইসরায়েল এতদিন লুকানোর চেষ্টা করলেও তা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে ওয়ালা নিউজ জানিয়েছে, হামলায় তেলআবিবের কিরিয়ায় মিলিটারি কম্পাউন্ডে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও ব্যুরো ব্যবহার- অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানে অফিস করতে পারছেন না নেতানিয়াহু। ব্যাপক সংস্কার কাজের জন্য প্রায় চার মাস ধরে অফিসটি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে ওয়ালা নিউজ। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নেতানিয়াহুর কিরিয়া অফিস থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা ওয়ালা নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে আগামী মাসগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই কার্যালয় ৬০ বছরেরও বেশি পুরোনো, যা ‘বিল্ডিং টোয়েন্টি টু’ এবং ‘বেইত শিমন পেরেস’ নামে পরিচিত। এই ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এটি এক সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফের সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রাথমিক দশকগুলোতে নিরাপত্তা মন্ত্রী এবং মিলিটারি চিফ অব স্টাফের অফিসও ছিল সেখানে। দুই দশক আগে নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় আধুনিক মাতকাল টাওয়ারে স্থানান্তরিত হলে ভবনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট অব প্রডাকশন অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের তথ্য অনুযায়ী, তেহরান ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্য বস্তুগুলোতে দুই শতাধিক মিসাইল নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে বহু মিসাইল সরাসরি আঘাত হানে। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধে ইরান বেসামরিক এলাকাগুলোকে টার্গেট করেনি। বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েকটি মিসাইল কিরিয়ার এই কম্পাউন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ভবনটি ইসরায়েলিদের কাছে ‘ইসরায়েলি পেন্টাগন’ হিসেবেও পরিচিত।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের সামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নাম গোপন রাখার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কম জায়গায় আঘাত হানলেও যেসব সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে, সেগুলোতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তবে হামলায় কোন কোন সামরিক স্থাপনায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে এবং সেগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এর আগে ৫ জুলাই ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট ছবির বরাতে দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, যুদ্ধের সময় ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পাঁচটি ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হানে। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের উত্তর, দক্ষিণ এবং কেন্দ্রস্থলের সামরিক স্থাপনাগুলোতে কমপক্ষে ছয়টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার মধ্যে একটি প্রধান বিমান ঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র এবং একটি রসদ সরবরাহ ঘাঁটিও রয়েছে।