প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২২ জুন, ২০২৫
স্বামী-স্ত্রী এক পবিত্র সম্পর্ক। পারস্পরিক বোঝাপড়া ঠিক থাকলে দাম্পত্যজীবনে নেমে আসে জান্নাতি সুখ; অন্যথায় সংসার হয় জাহান্নাম। বৈবাহিক জীবন সুখময় করতে ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর ওপর কিছু অধিকার আরোপ করেছে। সেগুলো মেনে চললে আক্ষরিক অর্থেই জান্নাতি সুখ লাভ করা যায়। যেমন-
স্ত্রীর মোহর পরিশোধ : বিয়ের পর দ্রুত স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা স্বামীর কর্তব্য। এটি স্ত্রীর মৌলিক অধিকার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নারীদের সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও। অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তা সানন্দে তৃপ্তিসহ খাও।’ (সুরা নিসা : ৪)। তবে বিয়ের ক্ষেত্রে মোহর শর্ত ও রোকন নয়, বরং স্ত্রীর অধিকার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কোনো অপরাধ নেই, যদি তোমরা স্ত্রীদের তালাক দাও এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদের স্পর্শ করোনি কিংবা তাদের জন্য কোনো মোহর নির্ধারণ করোনি। আর উত্তমভাবে নিজেদের সাধ্যানুসারে তাদের ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও। সুকর্মশীলদের ওপর এটি আবশ্যক।’ (সুরা বাকারা : ২৩৬)।
স্ত্রীর জন্য ব্যয় : স্ত্রীর যাবতীয় ব্যয়ভার স্বামীর ওপর ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বিত্তবান নিজ সামর্থ অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত, সে আল্লাহ যা তাকে দান করেছেন, তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি কারো ওপর চাপিয়ে দেন না। আল্লাহ কষ্টের পর স্বস্তি দেন।’ (সুরা তালাক : ৭)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, তারা এমন কাউকে তোমাদের বিছানা মাড়াতে দেবে না, যাকে তোমরা অপছন্দ করো। এমন করলে তাদের মৃদু শাসন করো। আর প্রচলিত নিয়মে তাদের খাওয়া-পরার দায়িত্ব তোমাদের।’ (মুসলিম : ৩০০৯)।
স্ত্রীকে বাসস্থান দেওয়া : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস করো, সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও। তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না।’ (সুরা তালাক : ৬)।
স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো।’ (সুরা নিসা : ১৯)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।’ (বোখারি : ৩১৫৩)।
কথায়-কাজে স্বামীর আনুগত্য : পুরুষ হলো নারীর তত্ত্বাবধায়ক। তাই স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর ওপর আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পুরুষেরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক। কারণ, আল্লাহ একের ওপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। কেননা, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে হিসেবে নেককার স্ত্রীরা হয় অনুগতা। আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর, তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং মৃদু শাসন কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবার ওপর শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা নিসা : ৩৪)।
অপছন্দনীয় কাউকে ঘরে না আনা : স্বামী যাকে অপছন্দ করে, তার সঙ্গে তার ঘরে স্ত্রীর প্রবেশ না করা চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো স্ত্রীর জন্য তার স্বামী উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। তার অনুমতি ছাড়া তার বাড়ি অন্য কাউকে আসার অনুমতি দেওয়া যাবে না।’ (বোখারি : ৪৮৯৯)।
অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া : স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার। ইমাম শাফেয়ি ও হাম্বলি (রহ.) বলেন, ‘স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী তার অসুস্থ বাবাকেও দেখতে বের হওয়ার অধিকার রাখে না। স্বামী তাকে এ থেকে চাইলে বিরত রাখতে পারেন। কেননা, স্বামীর আনুগত্য করা ফরজ। তাই এমন কিছুর কারণে ফরজ ত্যাগ করা জায়েজ নয়, যা ফরজ নয়। তবে স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে যেতে পারবে।
শিষ্টাচার শিক্ষাদান : স্ত্রী যখন তার স্বামীর আদেশ অমান্য করে, তখন স্বামীর অধিকার আছে যে, সে উত্তমভাবে তাকে শাসন করবে। কোরআনে কারিমে এমনটি বর্ণিত হয়েছে। হানাফি মাজহাবে চার ক্ষেত্রে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে শাসন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে- ১. স্বামী সাজসজ্জা করতে বললে স্ত্রীর তা ত্যাগ করা, ২. পবিত্র থাকা অবস্থায় তাকে বিছানায় ডাকলে সাড়া না দেওয়া, ৩. নামাজ না পড়া, ৪. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া।
স্বামীর সেবা : শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘স্বামীর সেবা করা বাধ্যতামূলক। এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত হয়। একজন গ্রাম্যকে সেবা করা গ্রামবাসীর সেবা করার মতো নয় এবং শক্তিশালী ব্যক্তির সেবা করা দুর্বলের সেবা করার মতো নয়।’ (ফতোয়ায়ে কোবরা : ৪/৫৬১)।