ঈমান আল্লাহ প্রদত্ত এক অনন্য নেয়ামত। এ নেয়ামত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মুসলিম জাতিকে ধন্য ও সম্মানিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে কোরো না; বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন।’ (সুরা হুজুরাত : ১৭)। ঈমানের দৌলত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর মহাঅনুগ্রহ করেছেন। চিরকালীন জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন। কেননা, বেঈমান কাফেররা অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ সোনাও তার পরিবর্তে দেওয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। পক্ষান্তরে তাদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা আলে ইমরান : ৯১)।
শ্রেষ্ঠত্বের মানদ- ঈমান : শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ও মানদ- নির্ধারণে ভুল করে অনেকে। শ্রেষ্ঠত্বের অন্বেষায় বহু লোক উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে যায়। আবার কেউ শক্তি, ক্ষমতা ও অর্থ-বিত্তের পেছনে ছোটে। যদিও অর্থ-বিত্ত ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই; কিন্তু এগুলো শ্রেষ্ঠত্বের যথাযথ মানদ- নয়। শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হওয়ার ইসলাম সমর্থিত একমাত্র মানদ- হলো, বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর ওপর ঈমান আনা ও মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত ও রেসালতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে অবিশ্বাসী বেঈমান কাফেরদের সৃষ্টির নিকৃষ্ট এবং বিশ্বাসী মোমিন-মুসলমানদের সৃষ্টির উৎকৃষ্ট আখ্যায়িত করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আহলে কিতাব ও পৌত্তলিকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির উত্তম।’ (সুরা বাইয়িনাহ : ৬-৭)।
ঈমানের স্তম্ভগুলো : ভবনের যেমন স্তম্ভ রয়েছে, ঠিক তেমনি ঈমানেরও খুঁটি রয়েছে। যে ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের স্তম্ভগুলো যত বেশি শক্তিশালীরূপে পাওয়া যাবে, সে তত বেশি পাক্কা ঈমানদার ও খাঁটি মোমিন। তাই ঈমানের স্তম্ভগুলোকে শক্তিশালী ও মজবুত করা প্রত্যেক ঈমানদারের অবশ্য কর্তব্য। ঈমানের সাতটি স্তম্ভ রয়েছে। যথা- ১. একক উপাস্য হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা। ২. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। ৩. সব আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস পোষণ করা। ৪. সব নবী ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। ৫. তাকদির বা ভাগ্যের ভালো-মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা। ৬. পরকালের প্রতি বিশ্বাস লালন করা। ৭. মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত হওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঈমান হলো- তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবগুলো, তাঁর প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের ওপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদির ও এর ভালো-মন্দের প্রতিও ঈমান আনবে।’ (মুসলিম : ১)।
ঈমান কীভাবে আনব : শতভাগ বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। যখন কোনো ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে কালিমায়ে তাইয়্যিবার মর্ম উপলব্ধি করে এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, তখন সে ঈমানদার ও মুসলমান বলে গণ্য হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইসলাম হলো- তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।’ (মুসলিম : ১)।
ঈমানদারদের আপ্যায়ন : জান্নাত হলো চির-শান্তির স্থান। সেখানকার সবকিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। জান্নাতের ঘর-বাড়ি, আসন ও আসবাবপত্রের সবকিছু সোনা-রুপা ও মণি-মুক্তা দ্বারা নির্মিত। জান্নাতে থাকবে রেশমের গালিচা, দুধ ও মধুর নহর এবং মিষ্টি পানির স্রোতধারা। আনন্দ-উপভোগের সব উপকরণই জান্নাতে থাকবে। জান্নাতের আটটি স্তর রয়েছে। এর সর্বোচ্চ স্তর জান্নাতুল ফেরদাউসে বিশ্বাসী ঈমানদার ও সৎকর্মশীল মুসলমানদের আপ্যায়ন করা হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ১০৭-১০৮)।
কাফেররা চির জাহান্নামী : রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ধর্মমত নিয়ে এসেছেন, তার ওপর ঈমান আনা ও বিশ্বাস স্থাপন করা সব মানুষের ওপর অবশ্য কর্তব্য। যারা তার আনীত ধর্মমতের ওপর ঈমান না আনে ও বিশ্বাস স্থাপন না করে কাফের বা বেঈমান থাকবে, তারা অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা কাফের হয়, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর সামনে কখনও কোনো কাজে আসবে না। তারাই জাহান্নামের আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১১৬)। চিরকাল জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রাসুল (সা.)-এর রেসালতের ওপর ঈমান আনা ও বিশ্বাস স্থাপন করার বিকল্প নেই। যেসব লোক তার নবুয়ত ও রেসালতের ওপর ঈমান না এনে কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তাদের চিরকাল জাহান্নামের অধিবাসী হতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! ইহুদি হোক আর খ্রিষ্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ রেসালাতের খবর শুনবে, অথচ এর ওপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে।’ (মুসলিম : ২৭৯)।