হিজরি নববর্ষ ১৪৪৭ উপলক্ষে পবিত্র কাবা শরিফে নতুন কিসওয়া বা গিলাফ পরিবর্তনের আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। হারামাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ বুধবার (১ মহররম, ১৪৪৭ হিজরি) এশার নামাজের পরই পবিত্র কাবার গায়ে নতুন কিসওয়া পরানো হবে, ইনশাআল্লাহ। এই পরিবর্তনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই মক্কায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কাবার নতুন গিলাফ তৈরির কাজ গত কয়েক মাস ধরেই চলছিল। সুতা থেকে কাপড়, রঙ, ক্যালিগ্রাফি-সবকিছুতেই ছিল পবিত্রতা ও শ্রদ্ধার নিখুঁত ছাপ।
গিলাফ পরিবর্তনের সময়সূচিতে পরিবর্তন: ইসলামের প্রথম যুগ থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন ধরে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ (আরাফাত দিবস) কাবার গিলাফ পরিবর্তনের প্রথা প্রচলিত ছিল। তবে ২০২২ সালে সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, হিজরি নববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে গিলাফ পরিবর্তনের সময় ১ মহররম রাত নির্ধারণ করা হবে। সেই থেকে প্রতিবছর মহররমের প্রথম রাতে গিলাফ পরিবর্তন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গিলাফ তৈরির বিবরণ: কাবার গিলাফ ‘কিসওয়া’ নামেও পরিচিত। এটি মূলত চারটি কাপড়ের বড় টুকরা এবং দরজার একটি অংশ দিয়ে তৈরি হয়। গিলাফের দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার এবং মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গমিটার। এটি তৈরি করতে প্রায় ৬৭০ কেজি কালো রেশম, ২১ ক্যারেটের ১২০ কেজি স্বর্ণ ও ১০০ কেজি রুপার সুতা ব্যবহার করা হয়। স্বর্ণ ও রুপার সুতা দিয়ে গিলাফে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম (আস্?মাউল হুসনা) লেখা হয়। পুরো গিলাফ তৈরিতে সময় লাগে ছয় থেকে আট মাস। বিশ্বের বৃহত্তম সেলাই মেশিনে ৪৭টি কাপড়ের টুকরা একত্রে সেলাই করা হয় এবং নিচের দিকে তামার রিং দিয়ে স্থির করা হয়। অনেক সূক্ষ্ম কারুকার্য এখনও হাতে সম্পন্ন করা হয়। এই গিলাফ তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকারও বেশি। ওজন প্রায় ৮৫০ কেজি হওয়ায় এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাপড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বছরও হারামাইন কর্তৃপক্ষ বলছে—আলোর সাজে সাজানো হবে কাবার প্রাঙ্গণ। মুসল্লিদের জন্য থাকবে নিরাপত্তা, ভীড় নিয়ন্ত্রণ ও লাইভ সম্প্রচারের বিশেষ ব্যবস্থা। কিসওয়া পরিবর্তনের এই শুভক্ষণে পবিত্র হারাম শরিফের পরিবেশ হয়ে ওঠে অতিমাত্রায় আধ্যাত্মিক ও তাৎপর্যময়।