ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কুয়েটে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে

ক্লাস শুরু করার আকুতি শিক্ষার্থীদের
কুয়েটে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থা চলছেই। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন শিক্ষকরা। ৭৪ দিন বন্ধের পর আজ মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষকরা ক্লাসে যাননি। মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা। ল্যাবরেটরি ও শ্রেণিকক্ষগুলোতে ধুলার আস্তর পড়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে শিক্ষকদের কার্যালয়ে গিয়ে ক্লাস শুরুর জন্য অনুরোধ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোট ছোট গ্রুপ করে শিক্ষকদের কাছে যাচ্ছি।

স্যারদের বলেছি, আমাদের যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মাফ করে দিন। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যেকোনো ভুলের জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমরাও ওই সময়ের ঘটনার বিচার চাই। স্যারদের সঙ্গে কোনো অন্যায় কেউ করলে সেটারও বিচার চাই। আমরা চাচ্ছি, বিচারপ্রক্রিয়া চলতে থাকুক, পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক। না হলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে।’

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হযরত আলী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে এখনও কোনো ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি। গত সোমবার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হযরত আলী প্রথমে শিক্ষার্থীদের এবং পরে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি দ্রুত ক্লাসে ফেরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং উভয় পক্ষকে নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের কাছে পুনরায় ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। এরপর বিকেলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্লাস শুরুর দাবিতে উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন জানান।

শিক্ষকদের অনড় অবস্থান ফুটে উঠেছে শিক্ষক সমিতির গতকালের সাধারণ সভায়। সভা শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন জানান, ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইউজিসি প্রতিনিধিদলের পক্ষপাতমূলক আচরণে শিক্ষকরা মর্মাহত ও উপেক্ষিত বোধ করছেন এবং তারা এর তীব্র নিন্দা জানান। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে উপচার্য পদত্যাগ করেন। ১ মে অধ্যাপক হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফারুক হোসেন আরও বলেন, ‘১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষকরা সবধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখবেন। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার বুলিং, সামাজিক অবমাননা ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়েট নিয়ে অপ-প্রচারে লিপ্ত পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বন্ধসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

গতকাল বিকেলে উপাচার্যের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে শিক্ষকরা ১৮ ফেব্রুয়ারি ও তার পরবর্তী ঘটনাক্রম তুলে ধরেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাহিদুল ইসলাম বৈঠকের পর জানান, উপাচার্যের কাছে তারা তাদের দাবি পেশ করেছেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না।

১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় গত রোববার থেকে পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষকদের অনীহার কারণে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত