ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঠাকুরগাঁওয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোতে ২৫ হাজার মানুষের পারাপার

ঠাকুরগাঁওয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোতে ২৫ হাজার মানুষের পারাপার

নির্বাচন এলেই জনগণের স্বপ্ন বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জনপ্রতিনিধিরা।

ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি ব্রিজ করে দেব, আর ভোট শেষে মিলিয়ে যান। গত ২৫ বছর ধরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ টাঙ্গন নদীর ওপর একটি সেতুর স্বপ্ন দেখছে, কিন্তু এখনও হেঁটে চলে বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে।

ঝাকুয়াপাড়া, সেনপাড়া, পালপাড়া, বাগপুর, সিংপাড়া, সর্দারপাড়া, চরঙ্গী, দক্ষিণ ও উত্তর বঠিনা—এই ১০টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। পণ্যবাহী কোনো যানবাহন চলতে পারে না। সাইকেল-মোটরসাইকেল কোনোমতে পার হলেও তিন চাকার যান একেবারেই অচল। বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র পথ।

এলাকাটি কৃষিপ্রধান। প্রচুর সবজির আবাদ হয়, কিন্তু ব্রিজ না থাকায় শহরে সরবরাহ করা কষ্টকর। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। নদীর দুই পারে স্কুল-কলেজ থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এই পথেই যাতায়াত করতে হয়। রোগী বা গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে জীবন হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, স্বজনদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি বারবার ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু সেই সব আশ্বাস আজও বাস্তব হয়নি।

স্থানীয় বৃদ্ধ কিরণ বালা ও বাচ্চাই রানী বলেন, যুদ্ধের পর থেকেই বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলি। দুর্ঘটনা কত যে দেখেছি। ছোট একটা ব্রিজ হলেও আমাদের কষ্ট কমে যেত। আরেক বাসিন্দা শহিদুল বলেন, নির্বাচনের সময় সবাই আসে, ভোট চাইতে ব্রিজের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু নির্বাচন গেলেই কেউ আর ফিরেও তাকায় না।

আকচা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শিমলা রানী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে শুধু আশ্বাসই শুনে এসেছি, বাস্তব কিছু হয়নি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমি জোর দাবি জানাই, অবিলম্বে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হোক। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস জানান, সাঁকোটি আমরা পরিদর্শন করেছি এবং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি।

এরইমধ্যে জেলার কয়েকটি ব্রিজের প্রস্তাব একনেকে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে পালপাড়া ব্রিজের কাজ শুরু করা হবে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষায় থাকা এই ব্রিজটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে ঠাকুরগাঁওয়ের এই অবহেলিত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনমান- এমনটাই আশা এলাকাবাসীর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত