ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রংপুর অঞ্চলজুড়ে বাদাম চাষে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা

রংপুর অঞ্চলজুড়ে বাদাম চাষে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা

রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা এখন বাদাম চাষে দেখছেন স্বপ্নের নতুন দিগন্ত। কৃষি ভান্ডারখ্যাত রংপুর বিভাগের আটটি জেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ চরে বাদামের সবুজ ক্ষেত যেন বদলে দিচ্ছে কৃষকদের জীবনের চিত্র।

বিনা-৪, বারি-৬, বারি-৮ ও বারি-৯ জাতের বাদামের চাষ দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, সুন্দরগঞ্জের চরাঞ্চলে বাদাম চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন দিনদিন।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারের মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে চলমান তাপপ্রবাহ ও খরায় কিছুটা ক্ষতির শঙ্কাও থাকছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের কৃষকেরা তিস্তার হঠাৎ পানি বৃদ্ধির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।

কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষে খরচ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা থেকে ৭-৮ মণ বাদাম ওঠে, যা বর্তমান বাজারে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। কাউনিয়ার চরগনাই গ্রামের কৃষক আলেফ উদ্দিন জানান, তিনি ১২০০ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন এবং ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন, যদি নদীর পানি বেড়ে না যায়।

তিস্তার ভেসে ওঠা চরাঞ্চল যেমন তালুক সাহাবাজ, ঢুষমারা, গনাই, হয়বতখা, বিশ্বনাথ, হারাগাছ নাজিরদহ চরে ব্যাপক বাদাম চাষ হয়েছে। বাদামের পাতাগুলো এখন হলুদ হওয়ার অপেক্ষায়, তারপরই শুরু হবে উত্তোলনের কাজ।

একই চিত্র গঙ্গাচড়ার গজঘণ্টা, লক্ষ্মীটারী, মর্নেয়া, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ এবং পীরগাছার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নেও।

টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, "চরের মানুষ ব্যাপক হারে বাদাম চাষ করছেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা পেলে আগ্রহ আরও বাড়বে।"

কাউনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ তানিয়া আক্তার জানান, "আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার চাষ বেড়েছে।"

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, "চলতি মৌসুমে ১৪০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ ২০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও পরামর্শ দিয়েছে।"

বিনা রংপুর কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আলী জানান, রংপুর ও পঞ্চগড় জেলায় ৯৫ জন কৃষককে প্রদর্শন প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ৬০০০ কেজি উন্নত জাতের বাদামের বীজ বিতরণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে চরাঞ্চলে প্রায় ৪০০ বিঘা ও সমতলে ৩৫০ বিঘা জমিতে বাদাম উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি জানান, এসব অঞ্চল থেকে প্রায় ১১ টন বীজ বাদাম সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাদাম,চাষ,কৃষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত