বৈশাখ উপলক্ষে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর গ্রামে দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ হুরমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামের একটি বট গাছের নিচে হুড় হুড় বা দ্রুত এ মেলা শুরু ও শেষ হয় বলে মেলাটি হুরমেলা নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন থেকে এ মেলা হয়ে আসছে এবং উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেলা। চেরাগপুর গ্রামের পুকুর পাড়ে একটি বট গাছের নিচে মাটির একটি ঘরের মধ্যে মন্ডপ ও মাজার। আর এ মাজারে ধর্মবর্ণ বির্নিশেষে সব শ্রেণির মানুষরা মানত করে থাকেন। এ মাজারে মনের বিশ্বাসে মানত করেন নানা ধর্মের মানুষ। মানত করে যাদের মনোবাসনা পূরণ হয় তারা এ মাজারে এসে রান্না করে উপস্থিত সবার মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। আবার অনেকে এখানে পরিবারের সবাই দল বেঁধে এসে রান্না করে খান। প্রতি বছরের পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় রোববার এ বটগাছের নিচে মেলা হয়ে থাকে। ইরি-বোরো ধান কাটার পর ফাঁকা মাঠে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আশপাশের অন্তত ১৮-২০টি গ্রামের মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণে মিলনমেলায় পরিণত হয়। গ্রামীণ এ মেলার মধ্য দিয়ে সম্প্রতির বন্ধন অটুট থাকবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর। গ্রামীণ এ মেলায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন ও খাবারের দোকান, খেলনা সামগ্রি, কসমেটিক, মৌসুমি ফল, গরু ও মহিষের মাংস, মাছ, মাটির হাঁড়িপাতিল এবং গৃহস্থালি জিনিসপত্র ও আসবাবপত্রের দোকান পসরা সাজিয়ে বসেছে। মেলায় এবার ৭টি মহিষ জবাই করা হয়েছে। সকালে প্রতিকেজি মাংস ৭০০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে ক্রেতাদের চাহিদা কমে আসায় পরে মাইকিং করে ৬০০-৭০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। মেলা উপলক্ষে এ এলাকায় মহিষের মাংসের চাহিদা রয়েছে। তবে স্থানীয় এলাকাবাসী এবার নিজেরা একটি মহিষ কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেয়। একারণে ক্রেতা কম হওয়ায় ব্যবসায়িদের মাংসের চাহিদা কমে আসায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
স্থানীয়রা জানান- মেলায় অন্তত ১৮-২০টি গ্রামের মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। হুর মেলাকে কেন্দ্র করে মেয়ে ও জামাইকে দাওয়াত করে নিয়ে আসা হয়। একদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আগমনে যেন আনন্দ উৎসব বিরাজ করে।
মেলায় মান্দা উপজেলার সতিহাট থেকে কাঠের জিনিসপত্র নিয়ে আসা ব্যবসায়ি আনিছার বলেন, এবার মেলায় দোকানপাট ভাল এসেছে। তবে মেলায় মানুষের আগমন কম হওয়ায় বেচাকেনা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়েছে।
মেলা কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মেলায় প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন দোকান পসরা সাজিয়ে বসেছে। মেলায় প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকার বেচাকেনা হওয়ার আশা। এবছর অনেক এলাকায় এখনও ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়নি। এজন্য মেলায় মানুষের আনাগোনা কম দেখা যাচ্ছে। তারপরও ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।