
ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এখন এটি কার্যকর হলে কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়ার সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবার, বন্ধু বা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাতে হবে। কোনো অবস্থায় এই সময় ১২ ঘণ্টার বেশি নেওয়া যাবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এখন থেকে যে পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার করতে যাবেন তার যথাযথ আইডেন্টিটি থাকতে হবে। নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড সঙ্গে থাকতে হবে এবং চাওয়া মাত্র এসব দেখাতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত অসুস্থ বোধ করলে তার চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে।
অবশ্য এসব আইন প্রতিপালন না করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কী শাস্তি হবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কে গ্রেপ্তার করেছে, গ্রেপ্তারের পর পরিবারের কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে সেসব তথ্য লিখিত থাকতে হবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারদের তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে থাকতে হবে।’ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করার নিয়ম আছে ফৌজদারি কার্যবিধিতে। আর গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের তা জানানোর বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এতদিন তা সিআরপিসিতে ছিল না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হত বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারের সংশোধনে ৫৪ ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের সামনে অপরাধ করেছেন এমন হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে। অথবা পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাকেও গ্রেপ্তার করতে পারবে।’ ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা পরোয়ানা ছাড়াই যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া ছিল পুলিশের হাতে। ওই ধারার স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগের কারণে মানবাধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এবারের সংশোধনে সিআরপিসিতে অনলাইনে বেইল বন্ড দাখিল এবং ডিজিটাল সমনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হয়। অন্যদিকে কাউকে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবার ও স্বজনদের জানাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।