ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

বস্তায় আদা চাষে দিনবদল

বস্তায় আদা চাষে দিনবদল

রানায় অনন্য মসলার নাম আদা। আদা ছাড়া রানার সঠিক স্বাদ বা ঘ্রাণ আসে না। আর সেই আদা বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের কামারগাঁও গ্রামসহ বিভিন স্থানে। কামারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. তারেক মিয়া নিজ ঘরের সামনে কিছু পরিমাণ পরিত্যক্ত জমি আবাদ করেন। কী ধরনের ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে, এ নিয়ে ভাবছিলেন।

বিষয়টি জানতে পারেন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামীমুল হক শামীম। তিনি ওই কৃষককে পরামর্শ দিয়ে উন্নতজাতের আদা সংগ্রহ করে দেন। আধুনিক প্রযুক্তি মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে সিমেন্টের বস্তা সংগ্রহ করেন কৃষক মো. তারেক মিয়া। ১০ এপ্রিল এ পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যে বস্তায় বস্তায় আদা গাছ আসে। আদার বাম্পার ফলনে মো. তারেক মিয়ার মুখে হাসি ফুটেছে। তার আদা চাষের সফলতা দেখে উপজেলার বিভিন এলাকায় কৃষক মো. নিজাম উদ্দিন ১ হাজার, আব্দুল মজিদ ৮০০, বিশ্বজিৎ ৫০০, ইব্রাহিম মিয়া ৫০০ ও কৃষানি মোছা. জোসনা আক্তার ৫০০, নাজমা আক্তার ২০০ বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। তারাও সফলতা মুখ দেখছেন। এছাড়া এভাবে উপজেলার বিভিন স্থানে বস্তায় আদা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক মো. তারেক মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে আমি প্রায় ৭০০ বস্তায় আদার আবাদ করেছি। বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। কারণ অতি বৃষ্টি, খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ আদার তেমন একটা ক্ষতি করতে পারে না। দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়।

তিনি বলেন, আদা চাষে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে আদা বিক্রি থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা আয় করার আশা করছি। আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে বস্তায় আদা চাষ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। আদা চাষে আমাকে সার্বিকভাবে পরামর্শ দেন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামীমুল হক শামীম।

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামীমুল হক শামীম বলেন, এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কৃষি খাতে আধুনিকতার প্রসার ঘটায় বর্তমান সময়ে বাড়ির উঠান কিংবা পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। অল্প খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে কৃষকদের মাঝে বস্তায় আদা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, মো. তারেক মিয়া ছাড়াও অনেক কৃষককে পরামর্শ দিয়েছি। তারা পরামর্শ নিয়ে আদা চাষে এগিয়ে এসেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, বস্তায় আদা চাষে প্রথম দিকে মাটি, বালু, গোবর সার ও দানাদার কীটনাশক নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। তবে আদার কন্দ লাগানোর আগে ছত্রাকনাশক পানিতে দিয়ে শোধন করে নিলে ভালো। শোধনের পর কন্দগুলো আধা ঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হয়। পরে মাটিভর্তি বস্তায় তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিবে হবে। বাড়ির উঠান বা আশপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি এসব বস্তা রাখা যায়। অনেকে আবার সাথী ফসল হিসেবেও চাষ করে থাকেন। ২২ থেকে ২৫ দিন পর গাছ বের হবে। প্রতি বস্তায় আদা রোপণ থেকে পরিপক্ব হতে ৭০ থেকে ৯০ টাকার মতো খরচ হয়। অনেকে আবার আরও কম খরচে আদা চাষ করে থাকে। বস্তায় আদা চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক মো. তারেক মিয়াসহ অনেক কৃষক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত