ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আসন্ন নির্বাচন আয়োজনে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত

বললেন প্রধান উপদেষ্টা
আসন্ন নির্বাচন আয়োজনে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন গতকাল সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট, বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান চলাচল, অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া শ্রম সংস্কার এবং দুই দেশের সামগ্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশে এক বছরের দায়িত্বপূর্ণ মেয়াদ শেষে দেশে ফেরার প্রাক্কালে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন গত ১৭ মাসে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত,’ বলেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে শান্তি বিঘ্নিত করার যেকোনো চেষ্টা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বিশেষভাবে নতুন শ্রম আইনকে ‘অসাধারণ ও ব্যতিক্রমধর্মী’ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, এসব সংস্কার বাংলাদেশে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে। তিনি আগের সরকারগুলোর আমলে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে করা ৪৬টি মামলার মধ্যে ৪৫টি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করেন। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা নতুন শ্রম অধ্যাদেশকে ‘একটি উৎকৃষ্ট আইন’ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, দেশের শীর্ষস্থানীয় শ্রমিক নেতারা এ সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুসমর্থনের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে দেখছেন। সাক্ষাতে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত এক মিলিয়নের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার জন্য জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সবচেয়ে বড় দাতা।’ ভবিষ্যতেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিদায়ী সাক্ষাতে এক বছরের দায়িত্বকালে ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ করার জন্য ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁকে বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে আবার বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ : বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার রোববার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎকালে উভয়পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক ও চিকিৎসা খাতের পারস্পরিক বিনিময় সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এর মাধ্যমে দুই দক্ষিণ এশীয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

পাকিস্তানি হাইকমিশনার জানান, গত বছরের তুলনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে এবং উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধান করছে। তিনি আরও বলেন, সাংস্কৃতিক বিনিময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার সুযোগে আগ্রহী, বিশেষত চিকিৎসা বিজ্ঞান, ন্যানোটেকনোলজি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে।

শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের প্রসঙ্গে হাইকমিশনার জানান, পাকিস্তানে লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটি ট্রান্সপ্লান্টেশন সম্পর্কিত চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক সুযোগ প্রদানে প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা যোগাযোগকে স্বাগত জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, সফর, সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং জনগণ-পর্যায়ের যোগাযোগ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সাফল্য অর্জনের জন্য। প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্যকে আরও সম্প্রসারণ করা জরুরি এবং আশা প্রকাশ করেন যে, হাইকমিশনার ইমরান হায়দারের মেয়াদে উভয় দেশ নতুন বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগের সুযোগ অন্বেষণ করবে।

পাকিস্তানি হাইকমিশনার জানান, ঢাকা-কারাচি সরাসরি ফ্লাইট আগামী জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাক্ষাৎকালে এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত