
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে ছোটখাটো সব কাজে এআইয়ের ওপর অতি-নির্ভরশীলতা মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও সৃজনশীল চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে এআই ব্যবহার করেন, তাদের মস্তিষ্কের গভীরতা ও চিন্তার সক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এআই ছাড়া চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে পড়াশোনা- সবখানেই এর বিচরণ। যদিও এআই অনেক জটিল কাজকে সহজ করে দিয়েছে, কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে এখন কপালে ভাঁজ পড়ছে বিজ্ঞানীদের।
এআইয়ের প্রভাব বুঝতে ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সি ৫৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি বিশেষ গবেষণা চালানো হয়। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করে একটি প্রবন্ধ (রচনা) লিখতে দেওয়া হয়েছিল-
১. প্রথম দলকে বলা হয়েছিল চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) ব্যবহার করে লিখতে।
২. দ্বিতীয় দলকে দেওয়া হয়েছিল গুগল এআই (Google AI) ব্যবহারের সুযোগ।
৩. তৃতীয় দলকে বলা হয়েছিল কোনো প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই নিজে থেকে ভেবেচিন্তে লিখতে।
শিক্ষার্থীরা যখন লিখছিলেন, তখন ইইজি (EEG) যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল।
কী দেখা গেল গবেষণার ফলাফলে?
গবেষণার ফল ছিল রীতিমতো চোখ কপালে তোলার মতো। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়-
চিন্তার ঘাটতি : যারা চ্যাটজিপিটি ও গুগল এআই ব্যবহার করেছেন, তাদের লেখায় মৌলিক চিন্তাভাবনার ব্যাপক ঘাটতি ছিল। বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক খাটানোর প্রবণতা ছিল সবচেয়ে কম।
গভীরতার অভাব : গুগল এআই ব্যবহারকারীদের লেখায় সামান্য চিন্তার ছাপ থাকলেও, যারা নিজে থেকে লিখেছেন তাদের রচনার মান ও গভীরতা ছিল সবার চেয়ে বেশি।
মস্তিষ্কের নিষ্ক্রিয়তা : ইইজি রিপোর্ট অনুযায়ী, যারা এআই ব্যবহার করেছেন তাদের মস্তিষ্ক সৃজনশীল কাজে খুব একটা সক্রিয় ছিল না। অন্যদিকে, যারা নিজে থেকে ভেবে লিখেছেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ছিল অনেক বেশি প্রখর।
ফলাফল ও সতর্কতা-
গবেষণাটি প্রমাণ করেছে যে, প্রযুক্তির ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষকে অলস করে দিচ্ছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এআই-কে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু একে নিজের বুদ্ধির বিকল্প ভাবা মোটেও ঠিক নয়। সৃজনশীলতা বজায় রাখতে এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে এআই ব্যবহারের লাগাম নিজের হাতে রাখার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায়, মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ (IQ) স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।