ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল কাঠামোয় বদল আসছে

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল কাঠামোয় বদল আসছে

চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল কাঠামো মূলত বিভিন্ন প্রকার সার্ভিস চার্জ, ফি, এবং ইজারার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। ১৯৮৬ সালের পর ২০২৩ সালে এসে বন্দরের মাশুল কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সেবার জন্য চার্জ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, বার্থিং, ইয়ার্ড ও গুদামজাতকরণ এবং অন্যান্য বন্দরের সুবিধাদির জন্য এই চার্জ ধার্য করা হয়। নতুন কাঠামো অনুযায়ী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, জাহাজ পাইলটিং এবং টাগবোটসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে উল্লেখযোগ্য হারে ফি বাড়ানো হচ্ছে। তবে বন্দরের প্রস্তাবনা ঘিরে ব্যবসায়ী মহলে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তাদের মতে, এই বাড়তি ব্যয় সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে আমদানি, উৎপাদন এবং রপ্তানি ব্যয় বাড়াবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের পণ্য খরচে। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বিদ্যমান কাঠামোতে চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছর মুনাফা করছে। তাছাড়া বন্দর মূলত মাশুল আদায় করে ডলারে। প্রতিবছরই ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমছে। এ হিসেবে মাশুল এমনিতেই বেড়ে যাচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সেবার মূল্য এখনও বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম। এই বাস্তবতার মাঝখানে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক মাশুল কাঠামো করা হবে। বর্তমানে যে কাঠামোতে মাশুল আদায় করা হয় তা ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল। মাঝখানে ২০০৮ সালে মাত্র ৫টি খাতে মাশুল হালনাগাদ করা হয়েছিল। মাশুল কাঠামো পুনরায় নির্ধারণ করতে ২০১৩ সালে একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় আর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি। তাই আর এগোয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের সেবার মূল্য এখনও বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম। এই বাস্তবতার মাঝখানে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক মাশুল কাঠামো করা হবে। বর্তমানে যে কাঠামোতে মাশুল আদায় করা হয় তা ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল। মাঝখানে ২০০৮ সালে মাত্র ৫টি খাতে মাশুল হালনাগাদ করা হয়েছিল। মাশুল কাঠামো পুনরায় নির্ধারণ করতে ২০১৩ সালে একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় আর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি। তাই আর এগোয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে এসে ট্যারিফ হালনাগাদ করতে চেয়েছিল বন্দর। তখন মন্ত্রণালয়ের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েও ব্যবহারকারীদের বিরোধিতায় মাশুল হালনাগাদ করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর নানা সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও মাশুল কাঠামো পরিবর্তিত করতে পারেনি বন্দর। সম্প্রতি মাশুল পুনরায় নির্ধারণ করতে বন্দর এবং মন্ত্রণালয় সরব হয়েছে। ব্যবহারকারীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের জুনের শেষের দিকে ব্যবহারকারীদের চূড়ান্ত মতামত সাপেক্ষে মাশুল হালনাগাদ করতে পারে বন্দর। এর আগে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিস্তারিত পর্যালোচনারভিত্তিতে যে প্রস্তাব তৈরি হয়, সেটির ভিত্তিতেই নতুন মাশুল কাঠামোর খসড়া করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নতুন প্রস্তাবনায়, প্রতিটি ২০ ফুট কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ১৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৩ দশমিক ১৫ ডলার এবং ৪০ ফুট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে ২২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে ৩৪ দশমিক ৮৩ ডলার করার কথা বলা হয়েছে। জাহাজ পাইলটিং চার্জ ৩৫৭ ডলার থেকে ৭০০ ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাবও রয়েছে। তাছাড়া মোট ৫৬টি সেবার মধ্যে ১৮টি খাতে ৬০ শতাংশের বেশি, ১৭টি খাতে ২০ থেকে ৫৯ শতাংশ এবং ১৯টি খাতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাত্র দুটি খাতে মাশুল কমানোর প্রস্তাব এসেছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ. এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, বন্দর চল্লিশ বছরে মাশুল বাড়ায়নি সেটি সঠিক নয়। মূলত প্রতি বছরই বেড়েছে। কারণ বন্দরের বিভিন্ন সেবার মূল্য পরিশোধ করা হয় ডলারে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের ট্যারিফ বেড়ে যায়। ২০০৮ সালে যখন ডলারের দাম ছিল ৭৬ টাকা। তখন আমরা ৭৬ টাকা হারে সেবার মূল্য দিতাম। প্রতি বছরই ডলারের দাম বাড়তে বাড়তে এখন সেটা ১২১ টাকা। আমরা এখন ১২১ টাকা কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে আরও বাড়তি রেটেই বন্দরের মাশুল পরিশোধ করছি। বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর ট্যারিফ বাড়ালে রপ্তানিমুখী শিল্প মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং পোশাক শিল্প টিকে থাকা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।২০২০ সালের করোনা পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাত বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা, চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন দেশে বর্ধিত শুল্ক আরোপের ফলে বর্তমানে দেশের গার্মেন্টস শিল্পে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শ্রম অসন্তোষসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এ শিল্প বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় বন্দরে ট্যারিফ বৃদ্ধির মতো রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পার্সোনেল অফিসার ও মুখপাত্র নাসির উদ্দিন বলেন, বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় বহনের জন্য এই মাশুল সমন্বয় জরুরি। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এখনও চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং চার্জ অনেক কম। যেখানে চট্টগ্রামে ২০ ফুট কন্টেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার, সেখানে কলম্বোতে তা ১০০ ডলার এবং সিঙ্গাপুরে ৭৫ ডলার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত