
শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ৫টি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। মামলায় সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান ফজলুর রহমান ও তার ভাই এএসএফ রহমান আসামি হয়েছেন। এছাড়া এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান আসামি হয়েছেন। এছাড়া জনতা ব্যাংকের ১২ কর্মকর্তাও আসামি হয়েছেন। অন্য আসামিরা হলেন-বেক্সিমকো লিমিটেডের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, এবি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক, রীম এইচ শামসুদ্দোহা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কাওসার চৌধুরী, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি আনোয়ারুল বাশার, পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাক্সেসরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন, পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার, মোসা. নুসরাত হায়দার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এর চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান মজলিস, পরিচালক আব্দুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপেরেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান, পরিচালক সৈয়দ তানভীর এলাহী, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসীউর রহমান, পরিচালক রিজিয়া আক্তার।
জনতা ব্যাংকের যারা আসামি হয়েছেন তারা হলেন- প্রধান কার্যালয়ের সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, ডিজিএম (অব.) মো. মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম মোহাম্মদ শাজাহান, ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির ঢালী ও ম্যানেজার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশা।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে আসে। মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড কর্তৃক ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার, কাঁচপুর এপারেলস লিমিটেড কর্তৃক ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৪ মার্কিন ডলার, স্কাইনেট এ্যাপারেলস লিমিটেড কর্তৃক ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ মার্কিন ডলার এবং নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ মার্কিন ডলারসহ সর্বমোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা (প্রতি ডলার ৯০ টাকা হারে) ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৯৪ টাকা জনতা ব্যাংক পিএলসি এর লোকাল অফিস থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎপূর্বক পাচার করেছেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের অনুকূলের ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক রোমান উদ্দিন বাদী হয়ে সালমান এফ রহমানসহ ২২ জনের মামলা দায়ের করেছেন। প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড নামীয় একটি নবসৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক্সপার্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধাসহ ঋণ সুবিধা মঞ্জুর ও প্রদানপূর্বক বর্ণিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে মালামাল আমদানি-রপ্তানি দেখিয়ে একোমডেটেশন বিল তৈরি করে সর্বমোট ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের অনুকূলের ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক এলমান আহাম্মদ অনি বাদী হয়ে সালমান এফ রহমানসহ ২২ জনের মামলা দায়ের করেছেন। দ্বিতীয় মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড নামীয় একটি নবসৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জনতা ব্যাংকের ইডিএফ সুবিধাসহ ঋণ সুবিধা মঞ্জুর ও প্রদান করেন আসামিরা।