
দেশের তামাক বাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য, ঘোষণাবহির্ভূত বিক্রি, কর ফাঁকি, রফতানিতে কর ছাড় এবং কৃষকের শোষণের কারণে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আসে তার তুলনায় বহুগুণ বেশি ক্ষতি হয় জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও কৃষি অর্থনীতিতে। সব মিলিয়ে দেশে বছরজুড়ে ক্ষতির পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি। তামাক কোম্পানিগুলো কর না বাড়ানোর জন্য চোরাচালানের অজুহাত দেখালেও বাস্তবে চোরাচালানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয় না এবং এর সঙ্গে প্রভাবশালী অংশের মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) সম্মেলন কক্ষে ‘কোম্পানির আগ্রাসনে বাড়ছে তামাক চাষ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো, বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)।
সেমিনারে গবেষকরা জানান, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম সস্তা তামাকপাতা উৎপাদনকারী দেশ। প্রতি কেজির দাম মাত্র ১ দশমিক ৬৮ ডলার হওয়ায় কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, অথচ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশে-বিদেশে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। দেশে মাত্র কয়েকটি কোম্পানি পুরো সিগারেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, কিন্তু তারা যে পরিমাণ কর দেয় তার তুলনায় অবৈধ লেনদেন ও কর ফাঁকির পরিমাণ অনেক বেশি। রফতানির ক্ষেত্রে কর মওকুফ, এমআরপির বাইরে বিক্রি এবং বাজারে দামের কারসাজির ফলে তামাক চাষে কৃষকের ওপর নির্ভরতা আরও বাড়ছে। খাদ্যশস্যের জমি ধ্বংস হয়ে তামাক উৎপাদন বাড়ছে, পাহাড়ি এলাকাতেও তামাক চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে জানান বক্তারা। বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো দাবি করে কর বাড়ালে চোরাচালান বাড়বে, কিন্তু বাস্তবে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত কাউকে ধরতে দেখা যায় না। তাদের অভিযোগ, সরকারের প্রভাবশালী একটি অংশ এই শিল্পকে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে। এমনকি নিকোটিন কারখানা স্থাপনেরও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, যা বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করেই করা হচ্ছে। ফলে বাজার আরও বিস্তার লাভ করছে এবং কোম্পানিগুলো নামমাত্র কর দিয়ে হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা তুলছে। সিগারেটের খুচরা বাজারেও দাম বাড়ানোর অজুহাতে ভোক্তাকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে, অথচ এই বাড়তি দাম সরকারি কোষাগারে না গিয়ে সরাসরি কোম্পানির মুনাফায় যোগ হচ্ছে।