
বছরের শেষ প্রান্তে এসে নজিরবিহীন উল্লম্ফনে রুপার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে রুপা আউন্সপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, একপর্যায়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ ডলারে। পরে কিছুটা কমলেও আবার ঘুরে দাঁড়ায় দাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দিনে রুপার দাম সর্বোচ্চ প্রায় ৬ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। শুরুতে দ্রুত বাড়ার পর আগের দিনের ক্লোজিং দামের নিচে নেমে যায়, তবে পরে আবার পুনরুদ্ধার হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, জল্পনাভিত্তিক বিনিয়োগ, সরবরাহ ও চাহিদার দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্য এবং দুর্বল মার্কিন ডলার রুপার এই ঊর্ধ্বমুখী যাত্রাকে আরও গতি দিয়েছে। একই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মূল্যবান ধাতুর প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে। এর ফলে স্বর্ণ ও প্লাটিনামও সম্প্রতি সর্বকালের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে। সপ্তাহান্তে টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের এক মন্তব্য বিনিয়োগকারীদের উন্মাদনা আরও উসকে দেয়। চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক টুইটের জবাবে তিনি এক্স-এ লেখেন, এটা ভালো নয়। অনেক শিল্পপ্রক্রিয়ায় রুপা অপরিহার্য। চীনের এসব পদক্ষেপ মূলত আগের নীতিরই ধারাবাহিকতা এবং গত ৩০ অক্টোবর দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথম এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়। যদিও চীন বিশ্বে রুপা উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশের একটি, তবে দেশটি একই সঙ্গে সবচেয়ে বড় ভোক্তা হওয়ায় বড় রপ্তানিকারক নয়। চায়না ফিউচারস লিমিটেডের বিশ্লেষক ওয়াং ইয়ানছিং বলেন, বাজারে জল্পনামূলক আবহ খুবই শক্তিশালী। রপ্তানি কড়াকড়ি নিয়ে আলোচনার তেমন বাস্তব ভিত্তি নেই। স্পট সরবরাহ ঘাটতি নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচারণা চলছে।
চলতি মাসে রুপার দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং ১৯৫১ সালের পর এটিই এর সেরা বার্ষিক পারফরম্যান্স হতে যাচ্ছে। এই উত্থানের পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের টানা তিন দফা সুদহার কমানো বড় ভূমিকা রেখেছে। কম সুদের পরিবেশে সুদ না দেওয়া পণ্যে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, আর বাজারে ২০২৬ সালেও আরও সুদ কমার প্রত্যাশা রয়েছে।
সম্প্রতি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের তেল ট্যাংকার অবরোধ এবং নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলাও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে মূল্যবান ধাতুর চাহিদা বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গ ডলার স্পট সূচক ০.৮ শতাংশ কমেছে, যা জুনের পর সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক পতন। দুর্বল ডলার সাধারণত মূল্যবান ধাতুর দামে সহায়ক। স্বর্ণের তুলনায় রুপার বাজার তুলনামূলকভাবে ছোট এবং তারল্য দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে। যেখানে লন্ডনের স্বর্ণবাজারে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলারের বুলিয়ন মজুত রয়েছে, রুপার ক্ষেত্রে তেমন কোনো বড় রিজার্ভ নেই। অক্টোবরে এমনই এক সরবরাহ সংকট দেখা যায়, যদিও পরে লন্ডনের ভল্টগুলোতে কিছু মজুত বেড়েছে। চীনে সাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জ–সংযুক্ত গুদামগুলোতে রুপার মজুত গত মাসে ২০১৫ সালের পর সর্বনি¤েœ নেমেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় নিউইয়র্কে রুপার বড় অংশ আটকে রয়েছে। এ তদন্ত থেকে ভবিষ্যতে শুল্ক আরোপের পথ খুলে যেতে পারে। স্বর্ণের মতো শুধু মূল্য সংরক্ষণের মাধ্যম নয়, রুপার বাস্তব ব্যবহারও ব্যাপক—সৌর প্যানেল, এআই ডেটা সেন্টার ও ইলেকট্রনিক পণ্যে এটি অপরিহার্য। মজুত ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকায় সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে, যা বিভিন্ন শিল্পে প্রভাব ফেলতে পারে।