মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে আসা এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পথ-পন্থা বাতলে দেয়া নবীদের অন্যতম গুরুদায়িত্ব। এ দায়িত্ব প্রত্যেক নবী পালন করেছেন। তারা ঘরে-বাইরে সর্বত্র ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় আর নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত উম্মতের রাহবার- এ কথার সাক্ষ্য দিয়ে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানাতেন। যেমন- শুআইব (আ.) তার উম্মত মাদইয়ানবাসীকে তৌহিদ ও ইবাদতের প্রতি আহ্বান করে বলেন, ‘হে আমার কওম, আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো মাবুদ নেই। ওজন ও পরিমাপে কম দিও না।’ (সুরা হুদ : ৮৪)। আদ জাতির কাছে আল্লাহতায়ালা হুদ নবীকে পাঠান। হুদ (আ.) তার উম্মতকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য যা বলে আহ্বান করতেন, কোরআনে সে সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ‘আদ সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছি। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো মাবুদ নেই। তবুও কি তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে না?’ (সুরা হুদ : ৬৫)। নুহ (আ.) তার কওমকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য আহ্বান করতেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি নুহকে তার কওমের কাছে পাঠিয়েছি। এরপর সে তার কওমকে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। আমি তোমাদের ওপর এক মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি।’ (সুরা আরাফ : ৫৯)।
সম্পর্কের ভিত্তি ছিল ঈমান : ঈমানের ভিত্তিতে নবীদের সঙ্গে তার উম্মতের আত্মীয়-অনাত্মীয় সম্পর্ক ছিল। ঈমানের সম্পর্ক ছাড়া নবীর আত্মীয় ও সাহায্যকারী হলেও সে আত্মীয়তার কোনো মূল্য নেই। এ সম্পর্ক কেয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবে না। কাজেই নবীকে না মেনে যতই ধর্মের কাজ করা হোক, সে কাজও আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব পাবে না; জাহান্নাম থেকেও বাঁচাবে না। এর দৃষ্টান্ত হলো, ইবরাহিম (আ.)-এর বাবা আজর। যিনি মূর্তিপূজক ছিলেন। তিনি ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতি ঈমান আনেননি। তাই নবীর বাবা হয়েও জাহান্নামি। নুহ (আ.)-এর ছেলে বাবার প্রতি নবী হিসেবে ঈমান না আনার কারণে জাহান্নামি। ঈমান ছাড়া রক্তসম্পর্কও জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারবে না। নুহ (আ.)-এর ছেলে কেনান ঈমান আনেনি। মহাপ্লাবনের সময়ও কিশতিতে ওঠেনি। পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের সেই মুহূর্তের ঘটনা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘পাহাড়ের মতো ঢেউয়ের মধ্যে তা (কিশতি) তাদের নিয়ে বয়ে চলে। নুহ তার ছেলেকে (যে পৃথক ছিল) ডেকে বলল, হে আমার ছেলে! আমাদের সঙ্গে আরোহন কর। কাফেরদের সঙ্গী হয়ো না। সে (ছেলে) বলল, আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেব, যা আমাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করবে। নুহ বললেন, আজ আল্লাহর শাস্তির নির্দেশ থেকে রক্ষার কেউ নেই। তবে ওই ব্যক্তিই রক্ষা পাবে, যার প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন। এরপর ঢেউ তাদের পৃথক করে দেয়। আর সে (কেনান) নিমজ্জিতদের দলভুক্ত হয়।’ (সুরা হুদ : ৪২-৪৩)। নবীর স্ত্রী হয়েও লুত (আ.)-এর স্ত্রী জাহান্নামি। কারণ, সে নবীর ওপর ঈমান আনেনি। সমকামিতার মতো পাপকাজে লোকদের সহায়তা করেছে। তাই আল্লাহ তাকেসহ পুরো জাতিকে জমিন উল্টিয়ে ধ্বংস করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ফেরেশতারা লুত (আ.)-কে নিজ পরিবারসহ রাত থাকতেই এলাকা ছাড়তে বললেন। বললেন, যেন কেউ পেছন ফিরে না তাকায়। তবে আপনার বৃদ্ধা স্ত্রী ছাড়া। নিশ্চয় তার ওপর ওই গজব আসবে, যা ওদের ওপর হবে। ভোর পর্যন্তই ওদের সময়। ভোর কি খুব কাছে নয়?’ (সুরা কমার : ৩৪, সুরা হুদ : ৮১, সুরা শুআরা : ১৭১)।
ঈমান না থাকার পরিণাম : রাসুল (সা.)-কে সবচেয়ে বেশি আগলে রেখেছেন তার চাচা আবু তালিব। মক্কার কাফেরদের অত্যাচার থেকে নবী (সা.)-কে রক্ষার জন্য তিনি ঢাল ছিলেন। রাসুলের শৈশব থেকে নবুয়ত পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাহায্যকারী ছিলেন তিনি। মুসলমানদের সঙ্গে বয়কটের কঠিন মুহূর্তেও তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিন বছর কষ্টে সময় কাটিয়েছেন। বয়কটকালে যেখানে অবস্থান করেছেন মুসলিমরা, সে স্থানের নামও হয়েছে তার নামে। খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে রাসুলের বিয়ের খুৎবাও পাঠ করেন তিনি। রাসুল সত্য নবী, এ কথাও তিনি সত্যায়ন করতেন। কিন্তু নিজে ভাতিজার প্রতি ঈমান আনেননি; কালিমা পড়েননি। শেষ বয়সে মৃত্যুর ভয়ে বাপদাদার ধর্ম ছেড়ে ভাতিজার ধর্ম গ্রহণ করেছে, মক্কার নেতারা এমন তিরষ্কার করবে এ অপমানের ভয়ে। তাই আবু তালিব রাসুলের চাচা হয়েও জাহান্নামি। রাসুলের সহযোগী হয়েও জাহান্নামি। তাই ঈমান গ্রহণ না করে কেউ ইসলামের জন্য অনেক কিছু করলেও তা হাশরের মাঠে তার জন্য কোনো উপকারে আসবে না। ঈমান সবার আগে। ঈমান ছাড়া আখেরাতের জীবন খুবই কষ্টের হবে।