ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ করা। হজ ও ওমরাহ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যখন হজ বা ওমরাহ কিংবা উভয়টি পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ওপর কিছু হালাল কাজ হারাম হয়ে যায়। এ কারণেই এ প্রক্রিয়াটিকে ইহরাম বলা হয়। হারাম কাজগুলো হলো-
১. মাথার চুল ছোট করা বা পুরোপুরি মুণ্ডানো। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মাথা মুণ্ডন কোরো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে।’ (সুরা বাকারা : ১৯৬)
অবশ্য অসুস্থতা কিংবা ওজরের কারণে ইহরাম অবস্থায় মাথার চুল ফেলতে বাধ্য হলে কোনো পাপ হবে না, তবে তার ওপর ফিদয়া ওয়াজিব হবে।
২. হাত বা পায়ের নখ উপড়ে ফেলা, কর্তন কিংবা ছোট করা। আলেমরা এ ব্যাপারে একমত যে, নখ কাটা ইহরাম পরিধানকারীর জন্য হারাম। হাত কিংবা পায়ের নখ উভয়ের ক্ষেত্রে একই হুকুম। তবে যদি নখ ফেটে যায় এবং তাতে যন্ত্রণা হয় তাহলে যন্ত্রণাদায়ক স্থানটিকে ছেঁটে দেওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই। এ কারণে কোনো ফিদয়া ওয়াজিব হবে না। (মানাসিকুল হজ ওয়াল ওমরাহ, পৃষ্ঠা-৪৪)
৩. ইহরাম বাঁধার পর শরীর, কাপড় কিংবা এ দুটির সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য কিছুতে সুগন্ধিজাতীয় কিছু ব্যবহার করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা (ইহরাম অবস্থায়) জাফরান কিংবা ওয়ারস (এক জাতীয় সুগন্ধি) লাগানো কাপড় পরিধান করবে না।’ (বোখারি, : ১৮৩৮)
তবে ইহরামের আগে ব্যবহৃত সুগন্ধির কিছু যদি অবশিষ্ট থাকে তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই।
৪. বিবাহসংক্রান্ত আলোচনা করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইহরাম পরিধানকারী বিবাহ করবে না, বিবাহ দেবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও পাঠাবে না।’ (মুসলিম : ৫/২০৯)
৫. ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা। আলিমদের ঐকমত্যে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর মধ্যে কেবল সহবাসই হজকে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করে দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।’ (সুরা বাকারা : ১৯৭)
৬. ইহরাম অবস্থায় কামোত্তেজনাসহ স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা। যেমন- চুম্বন, স্পর্শ ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।’ (সুরা বাকারা : ১৯৭)
৭. ইহরাম অবস্থায় শিকার করা। হজ বা ওমরাহ যে কোনো অবস্থায়ই মুহরিমের জন্য স্থলভাগের প্রাণী শিকার নিষিদ্ধ- এ ব্যাপারে আলেমরা একমত। আল্লাহ বলেন, ‘আর স্থলের শিকার তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে, যতক্ষণ তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকো।’ (সুরা মায়িদা : ৯৬)
সুতরাং শিকারকৃত জন্তু ইহরাম অবস্থায় হত্যা করা বৈধ নয়। তবে আলেমরা প্রাণী শিকার বলতে এমন সব প্রাণী বলে একমত পোষণ করেছেন, যার মাংস মানুষের খাদ্য এবং যা বন্য প্রাণীভুক্ত। তাই শিকার বলতে এমন সব প্রাণী বোঝায়, যা স্থলভাগে বাস করে, হালাল ও প্রকৃতিগতভাবেই বন্য; যেমন- হরিণ, খরগোশ, কবুতর ইত্যাদি। এসব প্রাণী শিকার যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি সেগুলোকে হত্যা করা এবং হত্যায় সহায়তা করাও নিষিদ্ধ; যেমন- দেখিয়ে দেওয়া, ইশারা করা বা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা। তবে পোষা প্রাণী জবেহ করা বৈধ। কারণ এটি শিকারের আওতায় পড়ে না; যেমন- হাঁস, মুরগি, ছাগল ইত্যাদি।
আর ক্ষতিকর পোকাণ্ডমাকড় কিংবা হিংস্র প্রাণী শিকার জন্তু হিসেবে গণ্য হবে না। সুতরাং হারাম শরিফের এলাকা কিংবা অন্য যে কোনো স্থানে তা হত্যা করা বৈধ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইহরাম পরিধানকারীর জন্য হত্যা করা বৈধ এমন সব প্রাণীর উল্লেখ করে বলেন, সাপ, বিচ্ছু, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, চিল, পাগলা কুকুর, হিংস্র পশু। (তিরমিজি : ৮৩৮)