স্পিন স্বর্গ বানিয়ে আগের টেস্টেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নাকানি চুবানি খাইয়েছে পাকিস্তান। একই ফরমুলায় মুলতানেও ক্যারিবিয়ানদের নাজেহাল অবস্থা করে ছাড়ছেন পাকিস্তানি স্পিনাররা। এর মধ্যে বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলি ঠাঁই করে নিয়েছেন ইতিহাস। টেস্টে প্রথম কোন পাকিস্তানি স্পিনার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। গতকাল শনিবার মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই বাঁহাতি স্পিনার পাকিস্তানের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম স্পিন বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের দেখা পেলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনের সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। হ্যাটট্রিক তো ক্রিকেটে হরহামেশাই ঘটে। বিশেষ করে ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি যুগে প্রবেশের পর হ্যাটট্রিক নিয়মিত হচ্ছে। তবে সেটা কুড়ি ওভারের সংস্করণে এবং ঘরোয়া পর্যায়েই বেশি। তবে এই ঘটনা যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘটে, সেটা এখনো ‘বিশেষ’ হিসেবেই গন্য হয়। আর হ্যাটট্রিকটা যদি হয় টেস্টে, তবে সেটা আজও ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তুলে। নোমান আলী সেই আলোটাই কেড়ে নিলেন নিজের দিকে। ব্যাপারটা আরো গুরুত্বপূর্ণ কারণ পেস ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে খ্যাত পাকিস্তানে বহু কালজয়ী স্পিনার আসলেও কেউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লাল বলে হ্যাটট্রিকের দেখা পাননি। ৩৮ বছরের নোমান সেই কীর্তিই গড়লেন। একটুর জন্য আরেকটি বিশ্বরেকর্ড হয়নি নোমানের। ৩৮ বছর ১১০ দিন বয়সে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। তার চেয়ে বেশি বয়সে এই কীর্তি আছে টেস্ট ইতিহাসে কেবল একজনেরই। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি স্পিন গ্রেট রাঙ্গানা হেরাথ হ্যাটট্রিক করেছিলেন ৩৮ বছর ১৩৯ দিন বয়সে। সিনক্লেয়ারকে শর্ট ফরোয়ার্ডে বাবরের ক্যাচে পরিণত করার আগের দুই বলে নোমান ফিরিয়েছেন জাস্টিন গ্রিভস ও তেভিন ইমলাচকে। অলরাউন্ডার গ্রিভসও ধরা পড়েন বাবরের হাতে। অন্যদিকে কিপার-ব্যাটার ইমলাচ লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। টেস্টে পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে নোমানেরটি ষষ্ঠ হ্যাটট্রিক। এর পরও এটি আলাদ। কারণ, আগের পাঁচটিই ছিল পেসারদের। স্পিনকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন পাকিস্তানিরাই। গুগলি (আবদুল কাদির) কিংবা দুসরা’র (সাকলাইন মুশতাক) জনক তারাই। দেশটির ইতিহাসে আরো আছে মুশতাক আহমেদ, দানিশ কানেরিয়া এবং সাঈদ আজমলদের মতো স্পিনারদের নাম। তবে কেউই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লাল বলে হ্যাটট্রিকের দেখা পাননি। পেস-নির্ভর পাকিস্তানের মাটিতে এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার মতো স্পিনাররা হ্যাটট্রিক পেলেন। সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অফ স্পিনার পিটার প্যাথেরিক। এর পর ২০০৩ সালে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার অলক কাপালি হ্যাটট্রিক করেন পেশোয়ারের আরবাব নিয়াজ স্টেডিয়ামে। নোমানের আগে পাকিস্তানের মাটিতে সর্বশেষ হ্যাটট্রিক দেখা গিয়েছিল ২০২০ সালে। সেখানেও আছে বাংলাদেশ নাম। কোভিড-১৯ মহামারির আগে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে টাইগারদের বিপক্ষে টানা তিন বলে উইকেট নেন নাসিম শাহ। পাকিস্তানের পেসারদের মধ্যে অন্য চারটি হ্যাটট্রিকের দুটি ওয়াসিম আকরামের। দুটিই ১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অন্য দুটি আবদুর রাজ্জাক (২০০০) ও মোহাম্মদ সামির (২০০২)। এ দুটি ম্যাচের প্রতিপক্ষও ছিল শ্রীলঙ্কাই।
এদিন টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুর দিকের ব্যাটিং লাইন-আপ। নোমানের হ্যাটট্রিকের কারণে ৪ উইকেটে ৩৮ থেকে, ৭ উইকেটে ৩৮ রানে পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর পর ১৬ রানের জুটি গড়েন কেভিন হজ এবং গুদাকেশ মোতি। ২১ রান করা হজ আবরার আহমেদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। সেখান থেকে কেমার রোচকে নিয়ে ৪১ রানের দ্রুতগতির আরেকটা জুটি গড়েন মোতি। রোচকে ২৫ রানে ফিরেয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ‘ফাইফার’ অর্জন করেন নোমান। শেষ উইকেটে জোমেল ওয়ারিক্যানকে নিয়ে মোতি ঝড়ো ব্যাটিং চালিয়ে যান। নোমানের ষষ্ঠ উইকেটে পরিণত হওয়ার আগে মোতি করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৫ রান। অন্যদিকে অপরাজিত থাকা ওয়ারিক্যানের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান।