বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশ আসরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল রংপুর রাইডার্স। টানা আট ম্যাচ জিতে সবার আগে প্লে অফে উঠে গেছে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। আকাশে উড়তে থাকা সোহানদের মাটিতে নামায় দুর্বার রাজশাহী। শক্তিশালী রংপুরকে দুই ম্যাচে হারিয়ে প্লে অফের দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে যায় তারা। এতে বিপাকে পড়ে খুলনা টাইগার্স। প্লে অফে খেলতে তাদের মেলাতে হয় নানা সমীকরণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মুখোমুখি হয় ফরচুন বরিশালের। যে ম্যাচে অবশ্যই জিততে হতো মেহেদী হাসান মিরাজের দলকে। কিন্তু জয় তো পেলই না, উল্টো ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে খুলনা।
তাতে জয় পেয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানের আরো কাছে চলে গেলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বরিশাল। সমান ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে এখনো রংপুর। বরিশাল রান রেটে পিছিয়ে দুইয়ে। গতকাল সোমবার মিরপুর শেরে বাংলায় টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৮৭ রান করে খুলনা টাইগার্স। জবাবে ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে বরিশাল। নিজেদের খেলা শেষ পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই তারা জিতেছে। তামিমের দল সবশেষ হেরেছিল রংপুর রাইডার্সের কাছে। আজকের জয়ে বরিশাল এখন রংপুরের পাশে। ১০ ম্যাচে দুই দলেরই সমান ৮ জয় এবং ১৬ পয়েন্ট। রান রেটে এগিয়ে রংপুর রয়েছে শীর্ষে। ১.০৭০ রান রেটে টেবিল টপার রংপুর। ১.০৩৩ রান রেটে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বরিশাল। প্রথম ইনিংসের শুরুতে ছিল নাঈম শেখের ঝড়। শেষে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন টানেন দলকে। নাঈম ২৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫১ রান করেন। ১৮৮.৮৮ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ছিল তার ইনিংস। শেষ দিকে দলের দাবি মিটিয়ে ঝড় তোলেন অঙ্কন। ২২৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা অঙ্কন ১২ বল খেলেন। ২ চার ও ৩ ছক্কায় যোগ করেন ২৭ রান।
খুলনার শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যানই এদিন রান পেয়েছেন। কারো স্ট্রাইক রেট একশর নিচে নামেনি। মিরাজ ও নাঈম উদ্বোধনী জুটিতে ৫.৩ ওভারে ৪৭ রান জমা করেন। এবারের বিপিএল আসরে প্রথমবার খেলতে নামা ইবাদত হোসেন ভাঙেন এই জুটি। মিরাজকে টো এন্ড ইয়র্কারে বিট করে বোল্ড করেন দ্রুতগতির এই পেসার। খুলনার অধিনায়ক সাজঘরে ফেরার আগে ১৮ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ২৯ রান করেন। ক্রিজে এসে অ্যালেক্স রস তিন সুইপ শটে ছক্কা, চার ও চার হাঁকান। মোহাম্মদ নবীর বলে সাজঘরে ফেরার আগে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ১৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ২০ রান। আফিফ হোসেন ২টি করে চার ও ছক্কা হাঁকালেও ২৭ বলে করেন মাত্র ৩২ রান।
আরেক বিদেশি ক্রিকেটার উইলিয়াম বোসিস্টো স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেন ১৬ বলে ২০ রান করে। তখনো বোঝা যাচ্ছিল না সাতে নামা অঙ্কন কি করবেন। কিন্তু শেষের ব্যাটিং চিত্র পাল্টে দেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। তার ঝড়ো ২৭ রানের সুবাদে খুলনার স্কোরবোর্ডে হাসি ফুটেছে। বল হাতে বরিশালের হয়ে ৪৯ রানে ২ উইকেট নেন ফাহিম আশরাফ। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন ফুলার, নবী ও ইবাদত। লক্ষ্য তাড়ায় তাওহীদ হৃদয় ১টি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। সেখান থেকে তামিম ও মালান ৯১ রানের জুটি গড়েন। বরিশাল সেখানেই জয়ের ভিত পেয়ে যায়। যে জুটিতে মালানের অবদানই ছিল বেশি। ৩৩ বলে ৬১ রান করেন মালান। তামিম ২৩ বলে করেন ২৭ রান। বরিশালের অধিনায়কের বিদায়ে এই জুটি ভাঙলে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় তারা। ১৯ রানের ব্যবধানে মালানও তার পথ অনুসরণ করেন। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া মালান ৩৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৩ রান করেন।
এর পর মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে বরিশাল লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। দুজনই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করে ২৪ রানের দুইটি কার্যকারী ইনিংস খেলেন। দুজন পরপর দুই বলে আউট হলে আবার কিছুটা চাপে পড়ে বরিশাল। কিন্তু ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ নবীর দায়িত্বশীল ইনিংসে খুব সহজেই বরিশাল লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ফাহিম ৬ বলে ১৮ রান করেন ১ চার ও ২ ছক্কায়। নবী ১০ বলে ১ ছক্কায় করেন ১৫ রান। বরিশালের বিপক্ষে এই হারে খুলনার প্লে অফে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়লো। ১০ ম্যাচে ছয়টি ম্যাচ হেরেছে তারা। জিতেছে মাত্র চারটি। পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে তাদের অবস্থান।