২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে শেষবার বসেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর। তারপর কেটে গেছে আটটি বছর। এ টুর্নামেন্টের নামই ভুলে যেতে বসেছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। অবশেষে ফিরে এলো আইসিসির ঐতিহ্যবাহি এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। গতকাল বুধবার স্বাগতিক পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির। ১৯৯৮ সালে 'আইসিসি নকআউট ট্রফি' নামে জন্ম, এরপর ২০০২ সালে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ এই টুর্নামেন্ট ক্রিকেট বিশ্বকে উপহার দিয়েছে বহু স্মরণীয় মুহূর্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ও একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা, ২০০৪ সালে পাকিস্তানের প্রথমবারের মতো আইসিসি ইভেন্টে ভারতের বিপক্ষে জয়, কিংবা ২০০৬ সালে ক্যারিবিয়ান লেজের ব্যাটারদের ইংল্যান্ডের হাত থেকে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়া সবকিছুই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসের অংশ। একসময় দুই বছর অন্তর আয়োজিত হলেও, ২০০৯ সালের পর থেকে চার বছরের ব্যবধানে আয়োজন শুরু হয় এই আসর, যেখানে আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল অংশ নেয়। কিন্তু ২০১৭ সালের পর আট বছর পেরিয়ে গেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যেন এক বিস্মৃত অতীত, ওয়ানডে ক্রিকেটের পরিচয়ে এক শূন্যস্থান।
২০২৫ সালে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই আবারও ফিরে আসছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কিন্তু এখন ক্রিকেট বদলে গেছে—টি-টোয়েন্টি লিগগুলো দখল করেছে ক্যালেন্ডার, টেস্ট ক্রিকেট টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, আর ওয়ানডে যেন এক অনিশ্চিত অবস্থানে ঝুলে আছে—না পুরোপুরি গুরুত্বপূর্ণ, না একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো। এটা শুধুই একটি ফেরা নয়, এটি এক যুদ্ধের ডাক। আইসিসি এখানে ঘিরে রেখেছে দৃষ্টি, দিয়েছে বিশাল আর্থিক প্রণোদনা—৬.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড পুরস্কার তহবিল, যা আগের আসরের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি। এমনকি গ্রুপ পর্বের প্রতিটি জয়ের জন্য ৩৪ হাজার ডলারের বেশি পুরস্কার নির্ধারিত হয়েছে, যা প্রতিটি ম্যাচকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আট বছর পর ফিরে আসা এই টুর্নামেন্ট কি ওয়ানডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে? একসময় একমাত্র বিশ্বকাপকেই প্রধান ইভেন্ট ধরে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু এর প্রত্যাবর্তন ইঙ্গিত দেয়—ওয়ানডে এখনও বেঁচে আছে। তবে কতদিন? দর্শকদের কমে যাওয়া মনোযোগের যুগে ৫০ ওভারের ক্রিকেট লড়াই করছে টিকে থাকার জন্য। টি-টোয়েন্টির ধ্রুব উত্তেজনা কিংবা টেস্ট ক্রিকেটের সূক্ষ্ম কৌশলের মাঝে ওয়ানডে মাঝের ওভারগুলোতে গতি হারিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ, যা একসময় আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের মূল অংশ ছিল, সেগুলোও এখন টি-টোয়েন্টি লিগ ও গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজের কাছে জায়গা হারাচ্ছে। এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাফল্য হয়তো ওয়ানডে ক্রিকেটকে নতুন প্রাণ দিতে পারে; আবার ব্যর্থতা হতে পারে এর আরও পতনের সূচনা। আর এর মঞ্চ কোথায়? পাকিস্তান। এমন এক দেশ, যেখানে ক্রিকেট রক্তের স্রোতে প্রবাহিত হয়, অথচ ১৯৯৬ সালের পর সেখানে আর কোনো আইসিসি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়নি।