
মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের অভাব, ঘরোয়া দুর্বল কাঠামো এবং অদক্ষ্য সংগঠকের কারণে বছরের পর বছর পিছিয়ে যাচ্ছিল দেশের ফুটবল। মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছিল পৃষ্ঠপোষকরাও। মাঠে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সমর্থকরাও। এমন পরিস্থিতির মাঝে হঠাৎ আলোর ঝলকানির দেখা মিলেছে বাংলাদেশের ফুটবলে। আর সেই আলোকিত ফটবলার হলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। মাত্র দুইদিন হয় জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডারের। দলের একটি অনুশীলন সেশনে ছিলেন তিনি। এরমধ্যেই সবার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। সতীর্থদের কাছ থেকে কুড়িয়েছেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। গতকাল ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে হামজার প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাংলাদেশের অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার সোহেল রানা।
আগামী মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) শিলংয়ে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোহেল বলেন, ‘হামজা খুব দ্রুত দলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন- এটা যেন মনে হচ্ছে তিনি আমাদের সঙ্গেই অনেকদিন ধরে খেলছেন। এটা ইতিবাচক দিক, কারণ আমরা, স্থানীয় খেলোয়াড়রা, যত দ্রুত হামজার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারব, দলের জন্য ততই ভালো হবে।’ হামজার উপস্থিতি দলের বন্ধন আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করেন সোহেল, ‘হামজাকে পেয়ে ড্রেসিং রুমের পরিবেশ দারুণ ছিল। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী এবং দলের একজন সদস্য হিসেবে দারুণভাবে মিশে গেছেন, যা অনেক বড় ব্যাপার। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও তার কোনো অহংকার নেই তিনি খুবই ভালো মানুষ এবং কখনো আমাদের এড়িয়ে চলেন না।
আমি মনে করি, প্রতিটি খেলোয়াড়ের হামজার মতো গুণাবলি থাকা উচিত।’ বসুন্ধরা কিংসের এই মিডফিল্ডার আরও বলেন, এটি একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ দল, যারা ভারতের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এই সাফল্য হামজাকে উৎসর্গ করতে চায়। ‘আমরা ভারতের বিপক্ষে এক নতুন বাংলাদেশ হিসেবে খেলতে চাই, বিশেষ করে হামজার অন্তর্ভুক্তির পর। আমাদের লক্ষ্য বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া এবং সেটি তাকে উৎসর্গ করা। তার অন্তর্ভুক্তি আমাদের দলকে বাড়তি শক্তি দিয়েছে, এবং আমরা বিশ্বাস করি যে ভারতের বিপক্ষে ভালো ফল আনতে পারব,’ বলেন সোহেল।
তবে হামজার আগমনে প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সোহেলেরই। তবে এই প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন তিনি, ‘মিডফিল্ডারদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যকর এটি দলকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলে। এটি ভালো দিক, এবং আমি মনে করি দলের প্রতিটি পজিশনে এ ধরনের প্রতিযোগিতা থাকা উচিত।’ স্থানীয় খেলোয়াড়রা হামজার খেলার ধরন বুঝে নেয়ার পাশাপাশি প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছেন বলে জানান তিনি, ‘আমরা সবসময় কোচের কৌশল অনুযায়ী খেলি এবং আমি বিশ্বাস করি হামজাও একইভাবে মানিয়ে নেবেন। ফুটবলের একটি বিশ্বজনীন ভাষা আছে, যা প্রতিটি খেলোয়াড় বোঝে। আমি নিশ্চিত, আমরা সবাই কোচের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারব।’ হামজার উপস্থিতি দলের বন্ধন আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করেন সোহেল, ‘এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন- এটি যেন আমাদের ফুটবলের নতুন যুগের শুরু। হামজার উপস্থিতি তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’ এদিকে, স্প্যানিশ কোচ ক্যাবরেরা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ২৪ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন, যেখানে পিয়াশ আহমেদ নোভা, আরিফ হোসেন এবং তাজউদ্দিনকে বাদ দেয়া হয়েছে। ফরোয়ার্ড আল আমিন ও হামজা চৌধুরী দলে নতুন মুখ।