ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভারতে অনুশীলন মাঠ নিয়ে গলদঘর্ম বাংলাদেশ

ভারতে অনুশীলন মাঠ নিয়ে গলদঘর্ম বাংলাদেশ

এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন ভারতে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে আগামী ২৫ মার্চ মাঠে নামবে হামজা, জামালরা।

সেখানকার মিশ্র আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পাঁচ দিন আগে (২০ মার্চ) বিকেলে শিলংয়ে পৌঁছেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। পাহাড়ের পাদদেশের শহরটিতে এসে বিরূপ আবহাওয়ায় নিজেদের মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে জামাল ভূঁইয়াদের। তবে অনুশীলন মাঠ পাওয়া নিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে তাদের। মাঠের দূরাবস্থা নিয়ে জটিলতা যেন কাটতেই চাইছে না। গত বৃহস্পতিবার উত্তর পূর্ব পার্বত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ এবং গতকাল শনিবার জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের টার্ফে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ।

এই দুই অনুশীলনই ছিল অস্বস্তি। নেহেরু মাঠ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট নয় আর ঘাসের মাঠে খেলার আগে টার্ফে অনুশীলনও আদর্শ নয়। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ হবে ঘাসের মাঠে। সে অনুযায়ী ঘাসের মাঠে অনুশীলনও করছে স্বাগতিক ভারত। অথচ বাংলাদেশ স্বস্তি নিয়ে এখনো এক সেশন অনুশীলন করতে পারেনি শিলংয়ে। জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের টার্ফে আগের দিন অর্থ খরচা করেই অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। গতকাল রোববারও সেখানে করতে চাইলে শুরুতে নেহেরু গ্রাউন্ডে যেতে বলা হয়েছিল। এ নিয়ে ম্যানেজার আমের খান সকাল থেকে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের প্রতিনিধির সঙ্গে শিলংয়ে আলোচনা করেছেন। পরে তিনি জানান, ‘আমাদের টার্ফে অনুশীলন করার কথা। হঠাৎ তারা বলছে এখানে অনুশীলন করার সুযোগ নেই। সেই প্রথম দিনের মাঠে যেতে। এ নিয়ে দেনদরবার চলছে।’ পরে অনুশীলনের মাঠ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ম্যনেজার বলেন, ‘এখানে না আসলে বুঝবেন না মাঠ নিয়ে ভোগান্তি কেমন হয়েছে। একবার বলে ৬টা, আবার বলে ৪টা। আমরা লাঞ্চ করব কখন, আর অনুশীলন করবই বা কখন। হোটেল থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বের সেই মাঠে কেনই বা যাব আমরা। টার্ফ ব্যবহার করতে টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও সমস্যা যেতে সময় লাগছে। অবশেষে শেষ মুহূর্তে এসে টার্ফের মাঠ দিয়েছে ওরা। তবে আমাদের ফ্লাডলাইটে অনুশীলন করা হয়নি।’ ফিফা-এএফসির ম্যাচে এই যুগে এসে এমন সমস্যা হচ্ছে কেন? ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বলেছেন, ‘দেখুন বাংলাদেশ দল মাইনাস ফোর দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। এর মানে হলো অফিসিয়াল ম্যাচের আগের দুই দিন আগে আপনারা এসেছেন। এই সময়ে যেখানে ফেডারেশনের সরাসরি কিছু করার সুযোগ নেই। যা করতে হবে তা আপনাদের নিজেদের। আমার মনে হয় আগে থেকে এখানে এসে দল কী কী সুবিধাদি পাবে তা দেখে গেলে ভালো হতো। কেননা, ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচটি অন্যরকম উচ্চতায় গিয়ে ঠেকেছে। তাহলে এখন মাঠ বা অন্য কিছু নিয়ে ঝামেলা কমই হতো।’ এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নিয়মানুযায়ী, ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা আগে সফরকারী দলকে ম্যাচের নির্দিষ্ট শহরে পৌঁছাতে হয়। ম্যাচ শুরুর দুই দিন আগে স্বাগতিক দলকে সফরকারী দলের আতিথেয়তা দেয়ার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে। ম্যাচ ভেন্যুতে সফরকারীদের খেলার আগের দিন ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করতে দেয়াও বাধ্যতামূলক এএফসির আইনে। এর একদিন আগে অনুশীলন ভেন্যুর (ম্যাচ ভেন্যুর বাইরে) ব্যবস্থা করে দেয়া স্বাগতিক ফেডারেশনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব। ৪৮ ঘণ্টার আগে সফরকারী দল ভেন্যুতে আসলে অনুশীলন, আবাসন সংক্রান্ত বিষয়াদি দুই ফেডারেশনের সমঝোতা ও আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে। এখানে ফুটবলের আইনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শিলংয়েল আবহাওয়া নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে জানান আমের, ‘এত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের খেলতে হবে, সেই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। সৌদি আরবের তায়েফে যে ঠান্ডা ছিল, এখানেও প্রায় একই। তাই কন্ডিশনের সঙ্গে আমরা মানিয়ে নিয়েছি বলা যায়।’ ভারতের আক্রমণভাগকে রুখে দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন ডিফেন্ডার তপু বর্মন। গতকাল অনুশীলন শেষে সেই দায়িত্বের কথা নিজেই জানালেন তিনি, ‘ভারতের বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলেছি। তবে এই ম্যাচ ভিন্ন। কারণ অনেক হাইপ উঠেছে এই ম্যাচ ঘিরে। দেশের ফুটবল সমর্থকরা সবাই তাকিয়ে আছে এই ম্যাচের দিকে। বড় দায়িত্ব থাকবে আমার উপর। গোল হজম না করাই থাকবে লক্ষ্য। তার সঙ্গে দলকে উজ্জীবিত করতে হবে। লক্ষ্য থাকবে আমার সঙ্গে যে তিনজন থাকবে, তাদের সঙ্গে নিয়ে একটা ভালো ফাইট দেওয়া এবং গোল হজম না করা।’ প্রতিপক্ষ ভারত নিয়ে তপুর কথা, ‘ভারত সবসময়ই ভালো হয়। আইএসএলে ফুটবলাররা খেলে থাকে। বদলি খেলোয়াড়রাও খুবই ভালো। তবে সুনিল ছেত্রীর অবসর নেয়ার পর থেকে ভারত আর ম্যাচ জেতেনি। আমরা বুঝতেই পারছি ভারতীয় দলে সুনিল ছেত্রীর গুরুত্ব কতটা। সে আসার পর আবার ভারত ম্যাচ জিতেছে। আমাদের সুনিলকে নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা রাখতেই হবে।’ হামজাকে নিয়ে বেশ উৎফুল্ল তপু বর্মন, ‘হামজা আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই বেশ ভালো ভাবেই মিশেছে। সবার সঙ্গেই খুবই ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি সবসময় তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি। কিভাবে ভালো করতে হবে।’

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে আশাবাদি ফরোয়ার্ড মো. ইব্রাহিমও। তার কথা, ‘দলের সবার অবস্থা ভালো। অনেকদিন পরে জাতীয় দলে ফিরেছি। সেরা একাদশে থাকতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগবে। বদলি হিসেবে নামলেও ভাল খেলার চেষ্টা থাকবে। আসলে সব জায়গায় প্রতিযোগিতা থাকবে, সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এতদূর আসা। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’ এশিয়া কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে ভারত, সিঙ্গাপুর ও হংকং। হোম এন্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে প্রতি দল ছয় ম্যাচ খেলার পর গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন সরাসরি এশিয়া কপে খেলবে। তাই প্রতিটি ম্যাচই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হোম ম্যাচে সম্পূর্ণ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা থাকবে প্রতি দলই। বাংলাদেশ এএফসি’র নির্দেশনার অতিরিক্ত আগে আসায় যে ভোগান্তিতে পড়ছে এটা মূলত নিজেদের পরিকল্পনাহীনতারই ফল। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ তিন ফুটবলার ইনজুরিতে। অন্য দিকে বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন হামজা চৌধুরি। হামজা বাংলাদেশের হয়ে মাত্র এক সেশন অনুশীলন করেছেন ঢাকায়। ভারতে এসে সেভাবে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করতে পারেনি। এতে হামজার কিছুটা হলেও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খানিকটা কষ্ট হবে। অনুশীলন ভেন্যুর অসহযোগিতার মাধ্যমে ভারত ফুটবল ফেডারেশন চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের বহিঃপ্রকাশই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত