বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডোর (বিসিবি) বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অনিয়ম ও আর্থিক অসংগতির অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারই অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার মিরপুরে ক্রিকেট বোর্ড কার্যালয়ে অভিযান চালায় সংস্থাটির চার কর্মকর্তা। গত এক মাসের মধ্যে বিসিবিতে দ্বিতীয়বার অভিযান পরিচালনা করল দুদক। আগেরবারের মতো এবারও তারা তৃতীয় বিভাগের দল নির্বাচন নিয়ে তদন্ত করার কথা বলেছে।
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, ‘আজকে অভিযানের বিষয় ছিল তৃতীয় বিভাগে বাছাই প্রক্রিয়াতে অনিয়ম। পাশাপাশি গঠনতন্ত্র ও আর্থিক অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে একটা সার্বিক সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ নিয়ে আমরা এসেছি। অভিযোগের আলোকে আমরা নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। নথিপত্র পর্যালোচনা করলাম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললাম। আমরা আরও কিছু বক্তব্য গ্রহণ করব।’ গত ১৫ এপ্রিল বিসিবিতে প্রথমবার অভিযানে আসে দুদকের একটি দল।
তারা বিপিএলে টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া ও তৃতীয় বিভাগ বাছাই নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
রাজু জানান, আগের দলটির অভিযানের সঙ্গে তাদের মিল নেই। ওই দলটির তদন্তের হালনাগাদও জানাতে পারেননি তিনি, ‘এর আগের যে বিষয় ছিল... তারা আলাদা দল। তাদেরটা আমি জানতে পারি না। তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের বিষয়টা স্বচ্ছ ছিল কিনা, অনিয়ম ছিল কি না সেটা দেখলাম। বিসিবি যে গঠিত হয়েছে, গঠনতন্ত্র কতটুকু বৈধ বা সিদ্ধ, এটাও আমরা পর্যালোচনা করেছি। গঠনতন্ত্রে আমরা কিছু গ্যাপ পেয়েছি। এখানে চাকরির সঠিক বিধিমালা নেই। এই বিষয় আরও পর্যালোচনা করতে চাই।’
সম্প্রতি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে বিসিবির অর্থ এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এক্ষেত্রে ফারুক আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থন করলেও দুদক বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজু আহমেদের ভাষায়, ‘কীভাবে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, কারা এতে স্বাক্ষর করেছেন, এসব বিষয়ে বিসিবির গঠনতন্ত্র কী বলে—তা বিশ্লেষণ করা হবে। তারা বলছেন (বিসিবি) নিরাপদ তিন ধরনের ব্যাংকে অর্থ রাখা হয়েছে। এই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটিও আমরা যাচাই করব।’ দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া সংস্থা বিসিবিকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার ব্যাপারে দুদক দৃঢ় অবস্থানে থাকবে বলে জানান দুদক কর্মকর্তা, ‘আমরা চাই বিসিবি আরও স্বচ্ছ, সুগঠিত এবং আন্তর্জাতিক মানের একটি সংগঠন হোক, যেখান থেকে মানসম্পন্ন ক্রিকেটার উঠে আসবে, দেশের সম্মান বাড়বে। যেসব ব্যক্তি অনিয়মে জড়িত, তাদের আমরা আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্বলতা আর না ঘটে।’
এর আগে বিসিবির কাছে পূর্বাচলে স্টেডিয়াম নির্মাণে পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়ার কাগজপত্র, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান সভাপতি থাকার সময়ে বিসিবির আয়-ব্যয়সংক্রান্ত অডিট প্রতিবেদন, আইসিসি ও এসিসির লভ্যাংশসংক্রান্ত নীতিমালার সত্যায়িত কপি, লজিস্টিকস ও প্রটোকল বাবদ খরচের বিবরণ, বিপিএল বাবদ খরচের বিবরণ, বিদেশি কোচ নিয়োগে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের নামণ্ডঠিকানা, বিদেশি কোচ নিয়োগের নীতিমালা এবং সম্মানী বা বেতন-ভাতা পরিশোধের রেকর্ডের সত্যায়িত অনুলিপি, বিসিবির অর্থ বিভাগ, লজিস্টিকস ও বিপিএল দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্যসহ মোট ২৭টি বিষয়ে জানতে চেয়েছিল দুদক।