চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে আগের দিনই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার একেবারে নিকটে পৌঁছে গিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। অপেক্ষা ছিল আবাহনী ও ফর্টিস এফসির ম্যাচের ফলাফলের জন্য। গতকাল শনিবার আবাহনীর বিপক্ষে ফর্টিস এফসির জয়ে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করে সাদাকালোরা। ১৮ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হল মোহামেডান।
কুমিল্লার শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফর্টিসের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরেছে আবাহনী। চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের পয়েন্ট ৩৮। ১৫ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আবাহনী। আকাশি-নীল জার্সিধারীদের লক্ষ্য এখন লিগের রানার্সআপ হওয়া। এখানে বাকি তিন রাউন্ডে তাদের লড়াই মূলত বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে। ১৫ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে কিংস। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ নামকরণের পর এই শিরোপার হাহাকার ছিল মোহামেডানের। অবশেষে সে অপেক্ষার পালা ফুরালো তাদের। শীর্ষ লিগের হিসেবে ২০০২ সালের পর প্রথম এই ট্রফির স্বাদ পেল সাদাকালো জার্সিধারীরা।
গত মৌসুমেও লিগ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল মোহামেডান; কিন্তু পূর্ণতা দিতে পারেনি। টেবিলে কিংসের পরে অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে থেকে তারা শেষ করেছিল আসর। মোহামেডানকে চাপে রাখার লক্ষ্যে মাঠে নামলেও আবাহনী শুরু থেকে খেলতে থাকে সাদামাটা ফুটবল। তাদের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে ফর্টিস। একাদশ মিনিট পা ওমার বাবুর শট রক্ষণে প্রতিহত হয়। ১৮ মিনিট খেলার পর বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। মিনিট কুড়ি পর ফের খেলা শুরু হয়। পেনাল্টি থেকে মিতুল মারমাকে পরাস্ত করে ফর্টিসকে এগিয়ে নেন পা ওমার। গাম্বিয়ার এই ফরোয়ার্ডই বক্সে ফাউলের শিকার হয়েছিলেন।
বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে মাঠ ভারি ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। ফলে দুই দলের খেলার স্বাভাবিক গতিও কমে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে আবাহনী; কিন্তু জমাট রক্ষণে বক্সের আশপাশেই আটকে রাখে ফর্টিস। ৬৫তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পায় আবাহনী। কিন্তু রাফায়েলের ক্রসে বক্সে জটলার ভেতর থেকে এমেকা ওগবাহর শট আটকে দেন ফর্টিস গোলকিপার সারোয়ার জাহান। ১০ মিনিট পর বল দখলের লড়াইয়ের আবাহনীর সুমন রেজার সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় ফর্টিসের মঞ্জুর রহমান মানিকের। প্রতিপক্ষকে কনুই দিয়ে আঘাত করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন মানিক। সুমন পান হলুদ কার্ড। এরপরই আবাহনীর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ আরও কঠিন হয়ে যায় দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে সাজেদ জুম্মন নিঝুম দূরপাল্লার শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করলে। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা মিতুল সময়ই পাননি ফিরে যাওয়ার। ৭৮তম মিনিটে আবাহনীর একমাত্র গোলটি করেন মোহাম্মদ হৃদয়। রাফায়েল আগুস্তোর ফ্রি কিকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর আবেগ লুকাতে পারেননি মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ। তিনি বললেন, ‘২০২২-২৩ মৌসুমে যখন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিই, দল তখন ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্টে। সেখান থেকে দলকে এনে চতুর্থ করেছিলাম, ফেডারেশন কাপ জিতেছিলাম। এবার জিতলাম লিগ। মোহামেডানের যে ঐতিহ্য ছিল, সেটা ফিরিয়ে আনাই ছিল লক্ষ্য। কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পেরে গর্ব হচ্ছে। কারণ, এই ক্লাব থেকেই আমার পথচলা শুরু। আমার পরিচিতি, ভালোবাসা—সবকিছুই মোহামেডানময়।’ মোহামেডানের সঙ্গে আলফাজের এই যাত্রা দেশের ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকল।