গত বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলেছিলেন নাহিদ রানা। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন এই পেসার। বছর ঘুরিয়ে সেই লঙ্কার বিপক্ষেই গতির ঝড় তুলতে চান লাল বাংলাদেশের এ গতি তারকা। তবে এবার ঘরের মাঠে নয়, খেলতে হবে শ্রীলঙ্কার মাঠে। সবশেষ কয়েক ম্যাচে যে পারফরম্যান্স তাতে চমক দেখাতে পারেন নাহিদ। আসন্ন টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ম্যাচ উইনার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারকে আলোকিত করতে প্রস্তুত এই টাইগার পেসার। অনেক দিন ধরেই তার মত দ্রুত গতির বোলারই খুঁজছিল বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট।
তাসকিন আহমেদের পুনরুজ্জীবন এবং শরিফুল ইসলামণ্ডহাসান মাহমুদণ্ডতানজিম সাকিব ও অন্যান্য পেসারদের আগমনে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের পেস বোলিং বিভাগের উন্নতি হয়েছে। তবে দলে দ্রুত গতির বোলারের অভাব ছিল। সেই অভাব মিটিয়েছেন নাহিদ। বোলিং বিভাগকে শক্তিশালী করে তুলতে অবদান রেখেছেন এই ডান-হাতি পেসার।
প্রথমবার নাহিদের বোলিং অ্যাকশনে দেখে বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্স বলেছিলেন, ‘গতির কারণে সে আমাদের এক্স ফ্যাক্টর। যদি সে ফিট থাকে, তাহলে যেকোন উইকেটে গতি দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে সমস্যায় ফেলতে পারবে নাহিদ।’ ছোট ক্যারিয়ারে এরমধ্যেই বাংলাদেশের হয়ে সব ফরম্যাটেই অভিষেক হয়েছে নাহিদের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক স্মরণীয় না হলেও উইকেটের দেখা ঠিকই পান তিনি। ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন নাহিদ। বল হাতে রান বেশি দিলেও গতি দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ঠিকই চাপে রেখেছিলেন এই পেসার।
টেস্ট অভিষেক অবশ্য স্মরণীয় করে রেখেছেন নাহিদ। তার গতিতে হিমশিম খেয়েছে প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা। এরই মধ্যে ৭ টেস্টে ২৩ উইকেট নিয়েছেন নাহিদ। ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়েছে তার। ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট আছে নাহিদের। তবে নাহিদের টেস্ট পারফরমেন্স বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি উচ্ছসিত করেছে। টেস্টের ঐতিহ্যবাহী মন্ত্র হল- ২০ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতা। নাহিদের সাথে অন্যান্য বোলাররা ছন্দে থাকলে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট শিকার বাংলাদেশের জন্য এখন অসম্ভব কিছু না। গত বছর মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনটি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেট নিয়েছিলেন নাহিদ। সেই টেস্ট ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা।
কিন্তু নাহিদের দারুণ অভিষেক দলের পেস আক্রমণে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। এরপর পাকিস্তান সফরে নিজের জাত চিনিয়েছেন নাহিদ। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তিনি। মাত্র ১ উইকেট নিয়েছিলেন নাহিদ। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। প্রথম ইনিংসে ১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নেন নাহিদ। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ৪ উইকেট শিকার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ে বড় অবদান রাখে। ঐ টেস্ট জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্টেই প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেটের দেখা পান নাহিদ।
কিংস্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ঐ টেস্ট ১০১ রানে জিতে ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। নাহিদ বলেন, ‘তিন ফরম্যাটের মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের ফরম্যাট হল টেস্ট। এটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। যতদিন আমি ফিট থাকব ততদিন টেস্ট ক্রিকেট খেলব।’ পেসাররা যেকোন সময় ইনজুরিতে পড়তে পারে, এজন্য নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করছেন নাহিদ। তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো যত ভালোভাবে মেনে চলা সম্ভব আমি মেনে চলেছি। আমি সঠিকভাবে খাওয়ার চেষ্টা করি এবং নিজেকে ঠিক রাখতে কঠোর পরিশ্রম করি। এটি সবসময় চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু যখন কোন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠা যায়, তখন আত্মবিশ্বাস বাড়ে।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল নাহিদের। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজে খেলার সুযোগ পাওয়া তার জন্য অর্জিত খ্যাতি ধরে রাখার প্লাটফর্ম হবে। নাহিদকে নিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ নিয়ে কখনওই মাথা ঘামান না নাহিদ। সবসময় নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন তিনি। শান্ত বলেন, ‘প্রতিপক্ষ নিয়ে খুব বেশি ভাবেন না নাহিদ। শুধুমাত্র নিজের পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন সেদিকেই ফোকাস করেন তিনি।’
টাইগার অধিনায়ক আরও বলেন, ‘সে সত্যিই ভালো বোলিং করছে এবং দ্রুতগতিতে বোলিং করছে। যখন আমরা তাকে ভালো বোলিং করতে দেখি, এটা আমাদের পুরো বোলিং ইউনিটকে উৎসাহিত করে। আমাদের অনুপ্রাণিত করে এটাই প্রমাণ করে আমরা কীভাবে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারি। তাই এটি এমন একটি জিনিস, যা আমি সত্যিই পছন্দ করি।’
