গল টেস্টে নতুন বাংলাদেশের দেখা মিলেছিল, তাতে টাইগার সমর্থকদের আশার পালে হাওয়া লেগেছিল। কিন্তু কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় দিন পেরুতেই হাওয়ার বেলুস চুপসে যেতে বসেছে। প্রশ্ন উঠেছে এটা কি সেই বাংলাদেশ, যেটি গলে দেখা গিয়েছিল। আগের দিন বুধবার সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের (এসএসসি) উইকেটে রীতিমতো ধুঁকেছে সফরকারী দলের ব্যাটাররা। একজন ব্যাটারও নিজের হাফ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করতে পারেনি তারা। অথচ সাবলির ব্যাট করে চলেছে শ্রীলঙ্কান ব্যাটারা। এরমধ্যেই লিডের দেখা পেয়েছে স্বাগতিকরা। এখনও তাদের হাতে রয়েছে আটটি উইকেট। ব্যাটিং স্বর্গে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয় তা চোখে আঙুল দিয়ে টাইগারদের দেখিয়ে দিচ্ছেন লঙ্কান ব্যাটাররা। টাইগার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই হার দেখছে বাংলাদেশ।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কাও। কারণ, কলম্বো টেস্টের প্রথম দুই দিনে কিছুটা হলেও ফিরে আসছে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক টেস্টের স্মৃতি। সেই ম্যাচে তৃতীয় উইকেটে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারার ৬২৪ রানের জুটি টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড। তাঁদের সৌজন্যেই সেবার টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৭৫৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। এই টেস্টের সঙ্গে কিছু মিলও বোধ হয় পাওয়া যাবে সেই টেস্টের। গতকাল বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ২৯০ রান করেছে বাংলাদেশ। তাতে ৪৩ রানে গিয়ে আছে দলটি। বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪৭ রানে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশকে হতাশা উপহার দেওয়ার মূল কারিগর ছিলেন পাথুম নিসাঙ্কা। অপরাজিত ১৪৬ রানে দিন শেষ করেন এই ব্যাটার। নিসাঙ্কা শুরু থেকেই দাপট দেখান—১৮টি চারের ঝলকে তিনি তার চমৎকার ইনিংসটি গড়েন এবং দিনেশ চান্দিমালের সঙ্গে ৩১১ বল স্থায়ী ১৯৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন। এর আগে গের দিন বুধবার সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের (এসএসসি) উইকেটে রীতিমতো ধুঁকেছে সফরকারী দলের ব্যাটাররা। একজন ব্যাটারও নিজের হাফ ওেপেনার লাহিরু উদারার সঙ্গে ১৪১ বলে গড়েছিলেন ৮৮ রানের জুটি। চান্দিমাল অবশ্য অল্পের জন্য শতক মিস করেন। শেষ সেশনে যখন তার স্কোর ৯০, তখন গ্লাভসে লেগে বল উঠে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটকিপারের হাতে। এই উইকেটটি ছিল বাংলাদেশের অফস্পিনার নাঈম হাসানের প্রথম সাফল্য, একই সঙ্গে এটি ছিল লিটন দাসের ১১৪তম ডিসমিসাল। তাতে মুশফিকুর রহিমকে ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সফল উইকেটকিপার হয়ে ওঠেন তিনি।
চান্দিমালের বিদায়ের পর প্রভাথ জয়সুরিয়া নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ক্রিজে এসে দিনটা শেষ করে দেন। ১৩ বল মোকাবিলা করে ৫ রান করে অপরাজিত রয়েছেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে লঙ্কান দুই ওপেনার পাথুম নিশানকা ও লাহিদু উদারা খেলতে থাকেন অনায়াসে। দ্রুত রান আনতে থাকেন দুজন। তবে লাঞ্চ বিরতির ঠিক পর পর ৪০ রান করে লাহিরু উদারাকে ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ করেন তাইজুল ইসলাম। তবে সাবলীলভাবেই খেলতে থাকেন নিসাঙ্কা। সকালে শেষ দুই উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় দিনে ২৭ রান যোগ করে বাংলাদেশ। যার বেশিরভাগই নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। তবে ৮ উইকেট ২২০ রান নিয়ে শুরুর পর দিনের চতুর্থ ওভারে আসিতা ফার্নেন্দো এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ইবাদত হোসেনকে। ১৩ বলে ৪ রান করে আউট হন তিনি। সোনাল দিনুশার বলে মারতে গিয়ে তাইজুল আউট হলে ২৪৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। কন্ডিশন ও পরিস্থিতি বিচারে ৬০ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন তাইজুল।
শেষ দুই উইকেট জুটিতে ইবাদত হোসেন ও নাহিদ রানাকে নিয়ে ৩৩ রান যোগ করেন তাইজুল। শেষ তিন উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ যোগ করতে পারে ৫০ রান।