ইস্তিগফার মানে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। এর গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা অপরিসীম। তবে সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা যতক্ষণ ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকবে, আল্লাহ কখনোই তাদের ওপর আজাব দেবেন না।’ (সুরা আনফাল : ৩৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ যতক্ষণ ইস্তিগফার করতে থাকে, সে আল্লাহর আজাব থেকে নিরাপদ থাকে।’ (তফসিরে ইবনে কাসির : ৫৬৯)। আজাব থেকে বেঁচে থাকা ছাড়াও ইস্তিগফারের নানাবিধ উপকার রয়েছে। এর কয়েকটি নিম্নরূপ-
বিপদ ও চিন্তা মুক্তি : ইস্তিগফারের মাধ্যমে পেরেশানি ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে সর্বপ্রকার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং সব ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮)। কেউ বিপদে পড়লে কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে তা থেকে মুক্তিলাভের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিগফারের আমল করা উচিত।
রিজিকে বরকত : ইস্তিগফারের মাধ্যমে রিজিকে বরকত আসে এবং রিজিক বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে হজরত নুহ (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এভাবে, তিনি স্বীয় গোত্রকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।? তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন এবং নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : ১০-১২)।
পাপ মোচন : ইস্তিগফারের মাধ্যমে গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করা যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোনো মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনেশুনে তাই করতে থাকে না। এরাই সেই লোক, যাদের পুরস্কার হচ্ছে তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৫-১৩৬)।
পরকালীন খুশি : পার্থিব জীবনে যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করবে, পরকালে সে তার আমলনামা দেখে খুশি হয়ে যাবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যার আমলনামায় অধিক পরিমাণ ইস্তিগফার পাওয়া যাবে।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ২৫১২)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের আমলনামা দেখে খুশি হতে চায়, সে যেন অধিক ইস্তিগফার পড়ে।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ২৫১৩)।
ইস্তিগফারের সর্বোত্তম সময় : স্বাভাবিকভাবে যে কোনো মুহূর্তে আল্লাহতায়ালার নিকট দোয়া করা যায়। তবে দিবস-রজনীর কিছু কিছু মুহূর্ত এমন রয়েছে, যখন আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া বেশি কবুল হয়। এমনই একটা সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। এসময় আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহামহিম আল্লাহতায়ালা রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছে এমন যে আমার কাছে কিছু চাইবে? আমি তাকে তা দেবো। কে আছে এমন যে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বোখারি : ১১৪৫)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দাদের বিশেষ গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি গুণ হলো, আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, শেষরাতে দোয়া করে যারা। (সুরা আলে ইমরান : ১৭)। অন্যত্র আল্লাহর নবি হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি স্বীয় সন্তানদের বলেছিলেন, ‘অচিরেই আমি তোমাদের জন্য আমার রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করব।’ (সুরা ইউসুফ : ৯৮)। এখানে ‘অচিরেই’ বলে তিনি রাতের শেষ প্রহরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এক বর্ণনায় এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) রাতের বেলা নামাজে লিপ্ত থাকতেন। রাতের শেষ প্রহরে তিনি হজরত নাফে (রহ.) কে লক্ষ করে বলতেন, এখন থেকে রাত শেষ হওয়া অবধি দোয়া করতে থাকো।’ (তফসিরে ইবনে কাসির)। আল্লাহতায়ালা আমাদের ক্ষমাপ্রাপ্তির মহান নেয়ামত দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা