ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দুনিয়ার জীবনে বান্দার ওপর পাপের প্রভাব

মাওলানা নুরুল হক
দুনিয়ার জীবনে বান্দার ওপর পাপের প্রভাব

মানুষ একটা পাপ করে থেমে যায় না; বরং একাধারে পাপ করতেই থাকে। কারণ পাপকে সে কিছুই মনে করে না। ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নিচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার ওপর ধসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মতো মনে করে, যা তার নাকের ওপর দিয়ে চলে যায়।’ (বোখারি : ৬৩০৮)। গুনাহগার বান্দা একের পর এক পাপ করেই যায়। যেমন ধূমপায়ী একবার পান করে, সুদখোর একবার সুদ খেয়ে এবং ব্যভিচারী একবার করে বিরত হয় না; বরং তাদের পাপ বাড়তে থাকে। হাসান বাসরি (রহ.) বলেন, ‘নেক আমলের প্রতিদান হলো সেই আমলের পরে আরেকটি নেক আমল করতে পারা। আর পাপের পরিণাম হলো সেই পাপের পরে আরেকটি পাপ করে ফেলা। কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে কবুল করে নেন, তখন তাকে তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দেন এবং তাকে পাপ থেকে দূরে রাখেন।’

আল্লাহ কর্তৃক বান্দাকে ভুলে যাওয়া : বান্দা আল্লাহর অবাধ্যতা করলে তিনি বান্দাকে ভুলে যান। কারণ পাপ করার অর্থ হলো আল্লাহকে ও তাঁর মাহাত্ম্যকে ভুলে যাওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরাই হলো অবাধ্য।’ (সুরা হাশর : ১৮-১৯)। তিনি আরও বলেন, ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তাদের ভুলে গেছেন।’ (সুরা তওবা : ৬৭)।

আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করে : পাপাচার তথা আল্লাহর অবাধ্যতা তাঁর রহমত ও নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যেসব বিপদাপদ হয়, তা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। আর তিনি তোমাদের অনেক পাপই মার্জনা করে দেন।’ (সুরা শুরা : ৩০)। তিনি আরও বলেন, ‘এটা এজন্য যে, আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের ওপর কোনো নেয়ামত দান করলে তার পরিবর্তন ঘটান না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা সেটা পরিবর্তন করে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আনফাল : ৫৩)।

আজাব অবধারিত করে : মহান আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা, রিজিকদাতা ও পালনকর্তা। সুতরাং আনুগত্য করলে ও তাঁর বিধান মোতাবেক চললে, তাঁর সন্তোষ লাভ হয় ও জান্নাতে প্রবেশ করা যায়। পক্ষান্তরে তাঁর অবাধ্যতা করলে তাঁর আজাবের সম্মুখীন হতে হয়, জাহান্নামে যেতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের ব্যক্তিগত পাপাচার ব্যাপক না করা পর্যন্ত এবং তাদের কোনো অপারগতা পেশ করার সুযোগ থাকা পর্যন্ত তারা ধ্বংস হবে না।’ (আবু দাউদ : ৪৩৪৭)।

পাপ রিজিক থেকে বঞ্চিত করে : আল্লাহকে ভয় করলে ও তাঁর বিধান মানলে তিনি অগণিত রিজিক দান করেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক প্রদান করে থাকেন।’ (সুরা তালাক : ২-৩)। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাকে ভয় করে না, তার জন্য আল্লাহ কোন পথ বের করে দেন এবং তাকে অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিক দেন না।

সম্পদের বরকত দূরীভূত হয় : সততা ও ন্যায়পরায়ণতা সম্পদে বরকত বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে পাপাচার ও অবাধ্যতা সম্পদের বরকত দূরীভূত হয়। হাদিসে আছে, ‘যতক্ষণ উভয়ে বিচ্ছিন্ন না হবে ততক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা সত্য বলে ও যথাযথ অবস্থা বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি পণ্যের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ও মিথ্যা বলে তবে ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে।’ (বোখারি : ২০৭৯)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত